৮ কিলোমিটার দূরেও অজ্ঞাত রোগ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগ–আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই ত্রিপুরাপাড়াটি সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নে। গত শুক্রবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগ–আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই ত্রিপুরাপাড়াটি সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নে। গত শুক্রবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আরও একটি ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুর সন্ধান মিলেছে। উপজেলার সোনাইছড়ির ত্রিপুরাপাড়া থেকে এই পাড়ার দূরত্ব আট কিলোমিটার। এলাকাটি ছোট কুমিরা ত্রিপুরাপাড়া নামে পরিচিত। এই পাড়া থেকে গতকাল রোববার এক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য শিশুদের মতো সেও জ্বরে আক্রান্ত। তার শরীরেও লালচে গোটা দেখা দিয়েছে।

এ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের তিনটি ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত ৮৬ জন রোগী (একজন শুধু অন্তঃসত্ত্বা নারী বাকিরা শিশু) হাসপাতালে ভর্তি হলো। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫১ জন এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত শনিবার (১৫ জুলাই) সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ সোনাইছড়ির বগুলাবাজার ত্রিপুরাপল্লি থেকে ১২ শিশুসহ ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ১২ জুলাই সীতাকুণ্ডের মধ্যম সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। ৬ জুলাই থেকে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জ্বর, কাশি, বমিসহ নানা উপসর্গে ভুগে এই পাড়ার নয় শিশু মারা যায়। এর মধ্যে ১২ জুলাই এক দিনেই মারা যায় চার শিশু। সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ায় দেড় কিলোমিটার দূরে বগুলাবাজার এলাকার ত্রিপুরাপল্লি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা এস এম নুরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, কুমিরা থেকে একটি শিশুকে গতকাল বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই শিশুটি সোনাইছড়ির ত্রিপুরাপাড়ায় বেড়াতে গিয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন।

সীতাকুণ্ডে মোট নয়টি ত্রিপুরাপাড়া রয়েছে। আদিবাসী ফোরাম সীতাকুণ্ড উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, নয়টি ত্রিপুরাপাড়ায় মোট ৪০০ ত্রিপুরা পরিবার রয়েছে। কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা গ্রামের এই ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত।

এই পাড়ার বাসিন্দারা রোগ হলে চিকিৎসকের কাছে যায় বলে জানান পাড়ার সর্দার দেবেন্দ্র ত্রিপুরা। তিনি বলেন, এই পাড়ায় ৯৪টি পরিবার থাকে। পাড়াটি পাহাড়ের কাছে সমতল এলাকায়। এ কারণে এখানকার শিশুরা স্কুলে পড়ে।

এদিকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দুটি ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে স্থানীয় তিনটি বিদ্যালয়ের ত্রিপুরা শিশুদের এক সপ্তাহের জন্য ছুটি দেওয়া হয়। বিদ্যালয়গুলো হলো ইউনিয়নের সবুজ শিক্ষায়তন উচ্চবিদ্যালয়, বার আউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মছজিদ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে মছজিদ্দা স্কুল ছাড়া বাকি দুটিতে হাতে গোনা কয়েকজন ত্রিপুরা শিক্ষার্থী রয়েছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছফা প্রথম আলোকে বলেন, এ রোগ অন্য শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে অভিভাবকদের এমন আশঙ্কার কারণে ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের এক সপ্তাহের জন্য ছুটি দেওয়া হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগে চিকিৎসাধীন শিশুদের শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৪টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল দল সেখানকার নয়টি ত্রিপুরাপাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। এই রোগ এখনো শনাক্ত না হলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এর কারণ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুরা সবাই সুস্থ হয়ে উঠছে।