বর্ষার ঘর বর্ষার গেরস্থালি

সময়টা এখন এমনই—কখনো একটানা ঝুম বৃষ্টি, আবার কখনো হুটহাট বৃষ্টি। হঠাৎ বৃষ্টিতে ঝামেলাও নেহাত কম নয়। বর্ষাকালে পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ির দেয়াল ও বিভিন্ন আসবাবের নিতে হয় বিশেষ যত্ন।

কাচের দেওয়ালও যাতে ভেজা না থাকে, এ মৌসুমে সেদিকটায় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। মডেল: লাবণ্য, ছবি: সুমন ইউসুফ
কাচের দেওয়ালও যাতে ভেজা না থাকে, এ মৌসুমে সেদিকটায় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। মডেল: লাবণ্য, ছবি: সুমন ইউসুফ

ভেজা কাপড়শু কানোর ঝক্কি

বর্ষায় ভেজা কাপড় শুকানো এক বড় সমস্যা। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে কাপড় সহজে শুকাতে চায় না। ফলে কাপড় শুকানোর পরেও স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে যায়। এর জন্য কাপড়ে একধরনের সোঁদা গন্ধ কিংবা ছোট ছোট দাগ পড়ে যায়। এ তো গেল ভেজা কাপড়ের সমস্যা। এদিকে আলমারিতে রাখা অনেক শুকনো কাপড়েও ছত্রাক জমে গন্ধ হয়ে যায়। একটু গাঢ় রঙের কাপড় কিংবা অনেক দিন ব্যবহার হয়নি পোশাকে ছোট ছোট দাগ বা তিল পড়ে যায়।

রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার বললেন, যেকোনো ঋতুতেই কাপড় ভালোমতো শুকিয়ে নিতে হবে। যেটুকু সময় রোদ পাওয়া যাবে, সেই সময়ের মধ্যেই কাপড় শুকিয়ে নিন।

বর্ষাকালে কোনো কোনো দিন রোদের দেখাই মেলে না। কখনো আবার অল্প সময়ের জন্য রোদ পাওয়া যায়। এই স্বল্প সময়ে কাপড় পুরোপুরি শুকাতে চায় না। সে ক্ষেত্রে ঘরে ফ্যানের বাতাসে কাপড় শুকিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। এতে কাপড়ের স্যাঁতসেঁতে ভাব অনেকটাই কমে যায়। তিলের মতো দাগ পড়া আটকাতে কাপড় ইস্তিরি করে নিতে হবে।

শুকনো কাপড়ের যত্ন

আলমারিতে রাখা শুকনো কাপড়গুলোর ভাঁজে ন্যাপথলিন দিন। এতে পোকা কিংবা ছত্রাকের হাত থেকে রেহাই পাবে পোশাক। মাসে একবার পুরো আলমারি পরিষ্কার করে নিন। ন্যাপথলিনের পরিবর্তে কয়েকটি শুকনো নিমপাতাও রাখতে পারেন।

আসবাবের যত্ন

কাঠের আলমারি, ছবির ফ্রেম কিংবা বইয়ের তাকে একধরনের স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা দেয়। সেই সঙ্গে কাঠের আসবাবের দরজা বা পাল্লার আকার কম-বেশি হয়ে যাওয়ায় সহজে আটকানো যায় না। ঘরের সদর দরজার ক্ষেত্রেও দেখা যায় একই চিত্র। বাতাসে আর্দ্রতার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী জানান, প্রতিটি ঋতুর কথা মাথায় রেখেই আসবাবের কাঠ বাছাই করুন। সঠিক মাপ অনুযায়ী কাঠ কিংবা হার্ডবোর্ডের আসবাব বানিয়ে নিন।

দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব

দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে পুরো ঘরটাই যেন গুমোট হয়ে পড়ে। মাহমুদা আক্তার বলেন, তিন-চার বছর পর পর ঘরের দেয়াল নতুন করে রং করা উচিত। বাইরের দেয়ালেও থাকা চাই রং এবং পলেস্তারা। আর ভেজা ভাব দূর করার জন্য ফ্যান চালিয়ে রাখুন। বর্ষায় ঘরে এমন কাপড়ের পর্দা বাছাই করুন যাতে বৃষ্টির ছাটায় ভিজে গেলেও শুকিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। যেমন নেট কিংবা সিল্ক। বর্ষায় একটু উজ্জ্বল রঙের পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা বাইরের মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশেও আপনার অন্দর উজ্জ্বল দেখাবে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনার থাকলে কিছুক্ষণের জন্য সেটি চালিয়ে ঘরের দেয়াল শুকিয়ে নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে ঘরের মেঝেও রাখত হবে শুকনো।

আরও যাযা খেয়াল রাখতে হবে

* অন্দরে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি, এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে গুমোট ভাব চলে যাবে।

* ভাঁজ করে রাখা কাপড়েও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন।

* এ সময় এমন পোশাক পরুন যা সহজেই ধুয়ে শুকানো যায়। যেমন জর্জেট কিংবা সিল্কের কাপড়।

* তিল পড়া বা ফাঙ্গাসযুক্ত কাপড় গুঁড়ো সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। জর্জেটের কাপড় চাইলে শ্যাম্পু দিয়েও ধুতে পারেন।

* উজ্জ্বল রঙের কাপড় ধুতে দেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। কেননা অনেক সময় এক কাপড়ের রং অন্যটিতে লেগে যায়। যদি এমনটি হয়েও যায়, তবে কাপড়গুলো আবার আলাদা করে অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে লেবুর রস কিংবা ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন।

* বারান্দায় কিংবা লিভিং রুমে রাখা বিভিন্ন গাছের টবে যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

* বইয়ের তাক এবং ছবির ফ্রেম নতুন করে বার্নিশ করে নিতে পারেন। তাকে রাখা বইগুলোর ফাঁকে শুকনো নিমপাতা, ন্যাপথলিন রেখে দিন।

এবার বর্ষায় অন্দরটাও থাকুক সতেজ!