ফল নাকি ফলের রস?

গোটা বা আস্ত ফল খাওয়ার চেয়ে রস করে খেতে ঝক্কি কম
গোটা বা আস্ত ফল খাওয়ার চেয়ে রস করে খেতে ঝক্কি কম

রোগবালাই, জ্বরজারি, দুর্বলতা? ভাবছেন শক্তি বাড়াতে, ভিটামিন পেতে হলে বেশি করে ফলের রস খাওয়া দরকার। গোটা বা আস্ত ফল খাওয়ার চেয়ে রস করে খেতে ঝক্কি কম, আরাম। বিশেষ করে শিশুদের খাওয়ানো সহজ। কিন্তু ফল খাওয়া ভালো নাকি ফলের রস?
প্রথমেই বলতে হয় ফলের খোসার কথা। ফলের খোসায় সূর্যের আলো পড়লে নানা রং তৈরি হয়। এই রঙিন খোসায় প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন ও ফ্ল্যাভনয়েড থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আপেল, স্ট্রবেরি, কমলা ইত্যাদি রঙিন ফলগুলোর খোসায় থাকে প্রচুর ভিটামিন। গোটা ফল খাওয়ার সময় আমরা এগুলো খোসাসহ খাই। কিন্তু রস তৈরি করলে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। ফলে খোসার এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থেকে বঞ্চিত হই। দ্বিতীয়ত, ফলমূলে রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার, যা অন্ত্রের জন্য ভালো, উপকারী হৃদ্যন্ত্রের জন্যও। কিন্তু আমরা সাধারণত ফলের রসটা ছেঁকে নিয়ে শাঁস বা আঁশগুলো ফেলে দিই। তাই আঁশের পরিমাণ পাই কম। উপকারও অনেক কমে যায়।
ফলে এমনিতেই প্রাকৃতিক চিনির উপস্থিতি থাকে। রস তৈরির সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু চিনি দেওয়া হয়। তাই শরীরে প্রবেশ করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি। এই অতিরিক্ত চিনি কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। দেহে মেদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তো আছেই। ফলের রসে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। একটি ফল তার খোসার ভেতরে থাকলে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত থাকে। কিন্তু ফলের রস তৈরি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। তাই সঠিকভাবে সংরক্ষণ জরুরি হয়ে পড়ে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি আস্ত ফল খেতে না পারেন, তাঁরা রস খেতে পারেন। কিন্তু তা চিনি বা কৃত্রিম রংমুক্ত হলে ভালো হয়।
শিশুদের জন্য আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়েট্রিকসের নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা দূর করতে ফলের রস খাওয়া ঠিক নয়। ১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের দিনে ৪ থেকে ৬ আউন্স এবং ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ৮ থেকে ১২ আউন্সের বেশি ফলের রস দেওয়া যাবে না। বেশি রস খেলে বাচ্চাদের ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা, দাঁতের মাড়ি ক্ষয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। আর ছোট্ট শিশুদের ফলের রস অবশ্যই ফিডারে বা বোতলে নয়, দিতে হবে বাটি-চামচ ব্যবহার করে।
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।