মেজাজ প্রায়ই খারাপ হচ্ছে?

ইদানীং মনমেজাজ ভালো যাচ্ছে না। মুড দ্রুত ওঠানামা করছে। ধৈর্য হারিয়ে যাচ্ছে। অফিসে, বাড়িতে এর-ওর সঙ্গে খটাখট লেগে যাচ্ছে। কখনো খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন।

যদি আপনার অবস্থা এমন হয়, তাহলে ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবা দরকার। কারণগুলো খুঁজে বের করা দরকার। না হলে এমন অবস্থা চলতেই থাকে। বাড়াবাড়ি হলে আমাদের ভুগতে হয়। পস্তাতে হয়। মেজাজ খারাপের মাথায় আমরা অনেক ভুল করে বসি। একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো, আসলে আপনার কেবল মেজাজ খারাপ, নাকি শরীরটাও খারাপ?

মনমেজাজের এই বদলের পেছনে কোনো শারীরিক অথবা মানসিক সমস্যা লুকিয়ে আছে কি না, তা ভাবা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, জানতে হবে, এসব থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যায়।

প্রথমে জেনে রাখুন, শারীরিক নানা সমস্যার কারণেও মনমেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। মনটা তো আর শরীরের বাইরে নয়। আমাদের দেহের নানা কেমিক্যাল, হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার মানসিকতার সঙ্গে জড়িত। নানা কারণেই এগুলোর সামঞ্জস্য নষ্ট হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা কমে গেলে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে কেউ রেগে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন, চেঁচামেচি করেন বা বকাবকি শুরু করে দেন। থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবেও মনমেজাজ বা মুডের পরিবর্তন হয়। কোনো কারণে রক্তে লবণ বা ইলেকট্রোলাইট কমে গেলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে দিতে পারেন আপনি। নারীদের মেনোপজের পর, পিরিয়ডের আগে ও সন্তান জন্মের পর হরমোনের ওঠানামা থেকে মানসিক সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে রাতে ঘুম না হওয়া, ভাঙা ভাঙা ঘুম পরদিন মেজাজটা খারাপ করে রাখবে। কারও কারও জ্বর, সংক্রমণ, অসুস্থতা বদমেজাজের জন্য দায়ী। বিভিন্ন ওষুধের বা অ্যালকোহলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও হতে পারে এমনটা। তার চেয়ে বেশি হবে হঠাৎ সিগারেট, মাদক বা কফি ছেড়ে দেওয়ার পর। স্ট্রোক, মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা টিউমার হলে আচরণ ও ব্যবহারে হঠাৎ বদল আসতে পারে। অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা বা অযথা কান্নাকাটির পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কোনো গুরুতর রোগ। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীরাও নানা অদ্ভুত আচরণ করতে পারেন।

এ তো গেল শারীরিক সমস্যার কথা। মানসিক নানা জটিলতায় আবেগ-অনুভূতি ও আচরণে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার রোগীরা অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠতে পারেন। অর্থাৎ অতিরিক্ত হাসতে পারেন, কাঁদতে পারেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারেন। বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরাও এমন আচরণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, মানসিক সমস্যাগুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না হলে ও চিকিৎসা না করা হলে পরবর্তী সময়ে বেশি জটিল হয়ে উঠতে পারে।

তাহলে মনমেজাজ খারাপ করা, চেঁচামেচি করা, রেগে যাওয়া ও সহজে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার মতো সমস্যা থেকে থাকলে কারণটা অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। কবে, কখন থেকে এমন শুরু হয়েছে বা কম করলে কোন সময় এমন হয়, তা খেয়াল করুন। এর সঙ্গে বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম, ওজন হ্রাস, জ্বর, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, ভুলে যাওয়া, অনিয়মিত পিরিয়ড ইত্যাদি আনুষঙ্গিক সমস্যা আছে কি না লক্ষ্য করুন। প্রয়োজনে দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান।

শারীরিক রোগ না পাওয়া গেলে কাউন্সেলিং নিতে পারেন। কারণ থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করুন। রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন। খাবার খেতে দেরি করবেন না। সময়ানুবর্তী হোন। নিয়মিত ব্যায়াম সুফল দেবে। অতিরিক্ত কাজের চাপ নেবেন না। চাপ কমাতে মাঝেমধ্যে কাজে বিরতি নিন। ভালো গান শুনুন, ভালো বই পড়ুন, প্রিয়জন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান।