ঘর সাজানোয় গামছা

অন্দর সজ্জায় গামছার ব্যবহার উজ্বলতা আনবে। কৃতজ্ঞতা: সাবিহা কুমু
অন্দর সজ্জায় গামছার ব্যবহার উজ্বলতা আনবে। কৃতজ্ঞতা: সাবিহা কুমু

নগর ফ্যাশনে গামছা সমাদৃত হয়েছিল ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের হাত ধরে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও গামছার তৈরি পোশাক ও গয়না তুলে ধরেছেন তিনি। এখন তো গামছার ব্যবহার রীতিমতো হয়ে উঠছে বাঙালি ঐতিহ্যের ধারা। অন্দরসাজেও আসছে গামছার ব্যবহার।

আগে হয়তো ঘরে পয়লা বৈশাখ বা এমন দেশীয় উৎসবের আয়োজনে বাঙালিয়ানার আমেজ আনতে কোনো কোণে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো গামছা। পোশাক আর গয়নার পাশাপাশি এখন ল্যাম্পশেড, কুশন কাভার, পর্দা, ঘরের গাছের পটসহ ঘর সাজানোর নানা জিনিসে নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গামছা। বাংলাদেশে যে গামছা তৈরি হয় তাতে রং ও বুননের অনেক বৈচিত্র্য। এ জন্য আমাদের নিত্যব্যবহার্য গামছা দিয়ে তৈরি করা যায় অনেক সৃজনশীল জিনিস—এমনটাই বলছিলেন নিপুণের প্রধান ডিজাইনার ফয়সাল মাহমুদ। অনেকেই কুশন কাভার, পর্দায় গামছার আদলে (দেখতে গামছার মতো তাঁতের কাপড়) তৈরি কাপড়ে বানাতেন এসব পণ্য। তবে এখন সরাসরি গামছাটাই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কাপড়টাকেই জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ল্যাম্পশেডে, বানানো হচ্ছে কুশন কাভার, লেপের আদলে কুইল্ট ইত্যাদি।

গামছা দিয়ে অন্দরসাজের নানা পণ্য তৈরি করছে এসথেটিকস। এসথেটিকসের অন্দরসজ্জাবিদ সাবিহা কুমু বললেন, লোকজ পণ্যগুলোতে (যেমন মাটির পট, মাটির ফটো ফ্রেম আয়না ইত্যাদি) এক টুকরো গামছার কাপড়ের ব্যবহার পুরো জিনিসটাতেই একধরনের নতুনত্ব এনে দেয়। তাই এ ধরনের জিনিস দিয়ে ঘর সাজানোর সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। না হলে ঘর সাজানোর মূল সৌন্দর্যটাই নষ্ট হবে। যেমন যে ঘরে এসব পণ্য রাখা হবে, সেই ঘরের আসবাবগুলো দেশীয় উপাদানের, যেমন বেত বা বাঁশের তৈরি হতে হবে। খুব বেশি জমকালো আসবাবের সঙ্গে গামছার পণ্যটা একেবারেই ভালো দেখাবে না। যদি আসবাবটা কাঠের হয়, সে ক্ষেত্রে তা ডার্ক পলিশ হতে হবে। আসবাবের নকশাটাও দেশীয় হতে হবে। গামছার তৈরি জিনিসের মধ্যে রানারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। রানারটা খাবার টেবিলের পাশাপাশি বসার ঘরেও ব্যবহার করতে পারেন। গামছার কাপড়ের রানার তো আছেই চাইলে পাটির চারদিকে চিকন করে গামছা মুড়িয়ে দিয়েও রানার বানিয়ে নিতে পারেন। ঘরের কোনো কোনার টেবিলে ছোট বেতের ম্যাট বানিয়ে চারদিকে গামছা মুড়িয়ে দিন। এর ওপরে মাটির তৈরি ঘোড়া বা পুতুল রেখে দিতে পারেন। গামছা দিয়ে তৈরি পর্দাও ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা শুধু বসার ঘরেই ভালো দেখাবে। এ ক্ষেত্রে বসার ঘরে উজ্জ্বল রঙের সুতার বুননের গামছা লাগাতে পারেন। পুরো বাসা বা ঘরজুড়ে গামছার জিনিস না রাখাই ভালো। ঘরের অল্প কোনো জায়গায় এসব জিনিসের ব্যবহার অন্দরের সৌন্দর্যে যোগ করবে বাড়তি মাত্রা।

গামছা, শরীর মোছার কাজে ব্যবহৃত এই জিনিসটি দিয়েও যে এত নান্দনিক জিনিস বানানো যায় তাই করে দেখিয়েছিলেন বিবি রাসেল। এখন তাঁর অনুপ্রেরণায় অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠানেই তৈরি হচ্ছে গামছার এসব পণ্য। এতে করে একদিকে যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশীয় পণ্যের বাজার, অপরদিকে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক তাঁতিও ফিরে পাচ্ছেন সুদিন।