শিশুর মেনিনজাইটিস

আমাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুরজ্জুর চারদিকে যে আবরণ রয়েছে তাকে মেনিনজেস বলে। এই মেনিনজেসের প্রদাহজনিত রোগই হলো মেনিনজাইটিস। প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। আবার শরীরের রক্ত এবং ব্রেইনের রক্তপ্রবাহের মাঝখানে যে প্রতিরোধী পর্দা রয়েছে তার প্রতিরোধক্ষমতা সহজে নষ্ট হয়ে যায় বলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগের জটিলতাও বেশি।

তবে লক্ষণ জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং সে ক্ষেত্রে জটিলতাও কমে। লক্ষণগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, খিঁচুনি, চেতনা হারানো বা অবচেতন হওয়া, চিৎকার করে কান্না, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ছোট বাচ্চাদের মাথার ওপরে নরম অংশ শক্ত হয়ে ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। বয়স এবং তীব্রতাভেদে লক্ষণেরও ভিন্নতা হতে পারে। রোগ নির্ণয়ে এসব লক্ষণের পাশাপাশি শিশুর মেরুদণ্ডের ভেতরে থাকা কশেরুকা থেকে সিএসএফ বা তরল পদার্থ বের করে তা পরীক্ষা করতে হয়। অনেক মা-বাবা এই পরীক্ষা করাতে উদ্বিগ্ন থাকলেও রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া হিসেবে আসলে এটি করতেই হয়। তবে রোগ নির্ণয়ের কারণে চিকিৎসায় বিলম্ব করা যাবে না। যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ছাড়াও জটিলতা হিসেবে অঙ্গহানি, মস্তিষ্কের সমস্যা, দেখা বা শোনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। এসব জটিলতা এড়াতে মেনিনজাইটিস প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়াটা শ্রেয়।

মেনিনজাইটিসের অনেক জীবাণুই হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা উচিত, বিশেষ করে হাসপাতালে অসুস্থ কাউকে দেখতে গেলে বাচ্চাদের নেওয়া ঠিক নয়। এ ছাড়া কানের, মুখের ও নাকের চারপাশে সংক্রমণ বা কোনো ফোড়া হলে তারও দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ, এসব থেকে মাথায় সংক্রমণ ছড়াতে পারে। প্রতিষেধক টিকার মাধ্যমেও কিছু ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিস প্রতিরোধ সম্ভব। সরকারি কর্মসূচির টিকা দিলে নিউমোকক্কাস, হিব ও মিসেলসের কারণে সৃষ্ট মেনিনজাইটিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এর বাইরে চিকিৎসকের পরামর্শ হলো, ১৮ মাসের বেশি বয়সীদের জন্য রয়েছে মেনিনগোকক্কাল ভেক্সিন। ঘনবসতিপূর্ণ স্থান বিশেষ করে যারা হোস্টেলে থাকে তাদের এই টিকা দেওয়া উচিত।

 ডা. আবু সাঈদ