ছুটির পরেই অসুখ-বিসুখ?

ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পর সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। মডেল: তনু। ছবি: অধুনা
ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পর সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। মডেল: তনু। ছবি: অধুনা

ছুটি শেষ। ঈদ উদ্‌যাপন ও বেড়ানোর পর বাড়ি ফিরেছেন প্রায় সবাই। শুরু হয়ে গেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিসে যাওয়া। আবার সেই কর্মব্যস্ত জীবন। ছুটিতে যাঁরা ঢাকার বাইরে গেছেন অথবা জায়গা বদল করেছেন, আবহাওয়ার বদলে তাঁরা অনেকেই অসুস্থ। বেড়েছে সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা।

বর্ষা শেষ হয়ে গেলেও বৃষ্টি থামছেই না। তাই অসুখ-বিসুখও রয়ে যাচ্ছে। নতুন করে দেখা দিয়েছে মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ। জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, নাক বন্ধ, সর্দি-কাশি থাকলে তা এই মৌসুমের ভাইরাস জ্বর বলেই ধরে নিতে হবে।

এই জ্বরের তেমন চিকিৎসা নেই। যথেষ্ট বিশ্রাম, প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ সেবন, প্রচুর তরল খাবার, গরম লবণ-জলে গার্গল আর গরম স্যুপ-জাতীয় খাবার খেলে আরাম লাগবে। তবে মনে রাখবেন, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমে এলেও ডেঙ্গু এখনো অনেক হচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের বিশেষত্ব হলো, এটি মাথাব্যথা, চোখব্যথা ও ত্বকের র‍্যাশ ছাড়াই হচ্ছে। বরং তীব্র জ্বরের সঙ্গে বমি, পেটব্যথা—এসব উপসর্গ যোগ হয়েছে। তাই এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু কি না, তা ভাবতে হবে। ডেঙ্গুর পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া ভালো।

এবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার প্রাদুর্ভাব হওয়ায় যাঁরা বাড়ি গেছেন, তাঁদের অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বেড়েছে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়ের প্রকোপ। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে টাইফয়েড সন্দেহ করা উচিত। পরীক্ষার পর টাইফয়েড পাওয়া গেলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ১০ বা ১৪ দিন ধরে সেবন করতে হবে। ডায়রিয়া হলে বারবার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে।

এ তো গেল রোগ হলে কী করবেন? এবার দেখা যাক, রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধের জন্য করণীয় কী? পানিবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। পানি ফুটে ওঠার পর আরও কয়েক মিনিট জ্বাল দেবেন। খাবার গ্রহণ, পরিবেশন ও রান্নার সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন। শিশুদের পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। হাত না ধুয়ে কখনোই খাওয়া যাবে না। টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে এসে এক ডোজ কৃমির ওষুধ (যদি আগে খেয়ে না থাকেন) বাড়ির সবাই খেতে পারেন। যাঁরা ঈদের ছুটিতে পার্বত্য এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, তাঁরা যদি ফিরে এসে প্রচণ্ড জ্বরে পড়েন, তবে ম্যালেরিয়ার কথাটাও মাথায় রাখুন। কোথায় কোথায় সম্প্রতি ভ্রমণ করেছেন, তা চিকিৎসককে জানান।

স্যাঁতসেঁতে গরম আবহাওয়ায় নানা ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ ও ত্বকের সমস্যা হতে পারে। শিশুদের পাতলা সুতি কাপড় পরান। পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘেমে গেলে কাপড় পাল্টে দিন। ছোট শিশুদের ডায়াপার বারবার বদলে দিন। ধোয়া কাপড় রোদে ভালো করে শুকাবেন। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে শিশুরা ঘুমালে মশারি টেনে দিন। অনাবৃত হাত-পায়ে মশা তাড়ানোর ক্রিম মেখে দিতে পারেন।

এই মৌসুমে শিশুদের ফ্লু ছাড়াও মাম্পস, হাম ইত্যাদি হচ্ছে। জ্বরের সময় শিশুদের স্কুলে না পাঠানোই ভালো। বরং বিশ্রাম নিলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে দিন। ছোট শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না।