সে যদি কখনো জেনে যায়?

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ফেসবুকে সমবয়সী একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। সে সম্পর্ক মাত্র তিন মাস টিকেছিল। এর মধ্যে ছেলেটি অন্য একজনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ব্রেকআপ হওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।

এরপর প্রায় নয় মাস পর ছেলেটি আবার আমাকে নক করে। আমাকে বোঝায়, সে বয়সের অপরিপক্বতার জন্য ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তত দিনে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমি তাকে বুঝিয়ে বলি, সেও বিষয়টি মেনে নেয়।

বিয়ের পর আমার স্বামীকে আমার এই সম্পর্কের কথা জানানো উচিত হবে? আমার ভয়, সে যদি নিজেই কখনো জেনে যায়? তাহলে আমাকে ভুল বুঝবে। তখন হয়তো আমাকে সন্দেহ করবে, ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হবে। এখন আমার কী করা উচিত?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

তোমার যে ধরনের দ্বন্দ্ব বর্তমানে হচ্ছে, সেটি অন্যদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। বিয়ের আগে তৈরি হওয়া ও ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশিত হলে যে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, তা নিয়ে প্রচণ্ড দোলাচলে ভুগতে থাকি আমরা।

তোমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা খুবই অল্প বয়সে ঘটেছে। বেশ ছোট বয়স থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আজকাল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি হওয়ার বিষয়টি খুব বেশি শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধিতে থাকা ছেলেমেয়েরা আবেগের বশে ভালো-মন্দ বিচার করতে না পেরে, অনেক সময় পরস্পরকে না দেখেও ভালোবেসে ফেলছে।

তোমার সম্পর্কটি তো খুব অল্প সময়ের জন্য হয়েছিল এবং ছেলেটি তোমার সঙ্গে প্রতারণাও করেছে। এরপর তুমি অনেক বেশি কষ্টে ছিলে এবং মনটিকে সুস্থির করতে তোমাকে নিজের সঙ্গে প্রচুর বোঝাপড়া করতে হয়েছে। এরপর আবার যখন সে ফিরে আসে, তুমি কিন্তু নিজেকে আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাওনি। বরং ওকে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে নিরস্ত করেছ। মনের অফুরন্ত শক্তি থাকলেই এটি করা সম্ভব। আমি তোমাকে অনেক প্রশংসা ও শ্রদ্ধা জানাতে চাই কাজটি সম্ভব করার জন্য। এ ছাড়া তুমি অত্যন্ত সৎ, মানসিকভাবে পরিপক্ব ও নৈতিকতাসম্পন্ন একজন মানুষ বলেও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখো।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে তোমার স্বামী হতে যাচ্ছে বা হয়ে গেছে, তাকে এই কথা বলবে কি না। কথাটি বললেও পরবর্তী সময়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়, না বললেও ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, তা সত্যি। তাই এটি যে খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত, তাতে সন্দেহ নেই। তবে তুমি যেহেতু মানসিকভাবে আগের অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী সম্পর্কটি থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে এসেছ, সেহেতু তোমার দিক থেকে নৈতিকতা ও সততার কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। যদি তোমার হবু স্বামী এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে, তুমি তাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারো বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে দুজনেরই অতীত সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটি থেকে যদি তোমরা সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে এসে থাকো, তাহলে সেটি যেন এই পবিত্র, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কটিকে কোনোভাবেই বিপর্যস্ত না করে, সেই প্রচেষ্টা দুজনেরই থাকবে। পারস্পরিক এই অঙ্গীকার আগে করে নেওয়া খুব প্রয়োজন। তুমি যে তাকে কখনো প্রতারণা করবে না এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটির প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল থাকবে, সেই প্রতিশ্রুতিও তাকে দিতে পারো। এই কথাগুলো বলার সময় তার চোখে চোখ রেখে তোমার দৃঢ়প্রত্যয়ী মনোভাবটিও তাকে বুঝতে সাহায্য করবে, কেমন।