তাঁদের ফেসবুক ব্যবহার

জেনে বুঝেই সবার ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত। মডেল: রায়না মাহমুদ। ছবি: অধুনা
জেনে বুঝেই সবার ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত। মডেল: রায়না মাহমুদ। ছবি: অধুনা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে তরুণদের পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিরাও যুক্ত হচ্ছেন। তাঁরা আগ্রহ থেকে বা পরস্পরের যোগাযোগ বাড়াতে এই জগতে আসছেন। এই যেমন পঞ্চাশোর্ধ্ব রাশেদ খান (ছদ্মনাম)। ছেলেমেয়ের দেখাদেখি আগ্রহবশত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ফেসবুক নিয়ে কোনো বিশদ জ্ঞান নেই। প্রায় সময় দেখা যায়, এটা-ওটা শেয়ার করেন। যেমন কোনো ভুয়া খবরের লিংক। মন্তব্যের ব্যাপারেও তেমন সতর্ক থাকতে পারেন না। অহেতুক অসামঞ্জস্য মন্তব্য করেন। এই তো সেদিন ছেলের বন্ধুর একটা স্ট্যাটাসে অহেতুক এমন একটা মন্তব্য করলেন। ছেলের বন্ধু তাঁকে কিছু না বলতে পেরে বন্ধুকে বলল, ‘কিরে দোস্ত, আংকেল এগুলো কী মন্তব্য করেন। সারা দিন দেখি আজাইরা নিউজ শেয়ার দেন।’

এটা শুধু রাশেদ সাহেবের বেলায় নয়, অনেকের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলেন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফারহানা এ রহমান। তিনি বলেন, ফেসবুক চালানোর কিছু নীতি-নৈতিকতা আছে। যাঁরা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বয়স্ক বা নতুন, না জেনে ফেসবুকে ঢুকেছেন, তাঁরা না বুঝেই বিব্রতকর অনেক কিছু পোস্ট করেন। শেয়ার করেন। অনেক সময় মন্তব্যও করে ফেলেন। যাঁরা একটু আগে ফেসবুকে আছেন, নিয়মনীতি জানেন, তাঁরা শেখাতে পারেন বয়স্কদের। সচেতনতাই এখানে আসল। কটু সজাগ থাকলে বিষয়গুলো এড়ানো যায়।

ভুবন সাহা (ছদ্মনাম)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। টিউশনি করাতে মোহাম্মদপুরে যান। একদিন হলে ফেরার সময় দেখেন বাসের ভেতর পাঁচ-ছয়জন লোক তুমুল আলোচনায় মেতেছেন। ভুবন কান পেতে শুনতে চেষ্টা করেন ঘটনা কী। বুঝতে পারলেন, তাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আলোচনা করছেন। ট্রাম্প নাকি উত্তর কোরিয়ায় হামলা করেছেন। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের দেশেও যুদ্ধের আঁচ লাগতে পারে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভুবন তাঁদের বুঝিয়ে বলেন, এটা ভুয়া খবর। এ রকম কিছু হলে আপনারা টেলিভিশন চ্যানেলে খবর দেখতে পেতেন।

ইদানীং অনেক অনলাইনে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি থাকে। সেগুলো ফেসবুকে থাকে। এ বিষয়ে ফারহানা এ রহমান বলেন, এটা সন্তানদের দায়িত্ব, অভিভাবকদের সতর্ক করা। বুঝিয়ে বলা। যাতে তাঁরা এসব ভুয়া খবরে লাইক না দেন। বিশ্বাস না করেন। ছোটবেলায় মা-বাবারা সন্তানদের নানা রকম নির্দেশনা দেন। এটা করবা না, ওটা করবা। এখানে যাবা না, ওখানে যাবা। এটা খাবা না, ওটা খাবা। ফেসবুকে মা-বাবাদের অবস্থাও সে রকম। এখানে অভিভাবকের ভূমিকায় থাকবে সন্তান।

কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ নকিবের সঙ্গে। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘আমার বাবার ক্ষেত্রেও প্রথমে এ রকম হতো। পরে আমি তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকে সব ভিত্তিহীন, ভুয়া পেজ আনলাইক করে দিয়ে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও লাইফস্টাইল-সম্পর্কিত কিছু পেজে লাইক দিয়ে দিই। ঝামেলা হতো। পরে নিজে বুঝতে পারি।’

তাঁরা কীভাবে তাঁদের প্রোফাইল সুরক্ষিত রাখবেন, কোন স্ট্যাটাস পাবলিকের সঙ্গে শেয়ার করবেন, কোন স্ট্যাটাস শুধু ‘ফ্রেন্ড’দের সঙ্গে শেয়ার করবেন—এসব বুঝিয়ে বলা সন্তানের দায়িত্ব। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক লেখা প্রকাশিত হলে বয়স্ক ব্যক্তিরা সচেতন হতে পারবেন। তাঁরা পত্রিকা নিয়মিত পড়েন। তবে যে বয়সেরই হোক না কেন, ফেসবুকে প্রবেশের আগে অবশ্যই সব জেনে-বুঝে আসতে হবে।