সমস্যার নাম ডাউন সিনড্রোম

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

আমাদের কোষের মধ্যকার ক্রোমোজোমের ভেতরের ডিএনএকে বলা হয় বংশগতির ধারক ও বাহক। আমাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন আচার, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রং সবকিছুই এই ডিএনএর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ডিএনএ বা ক্রোমোজোমের অসামঞ্জস্য হলে শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি দেখা দেয়। এগুলো হলো জেনেটিক ত্রুটি। আমাদের দেশে কোনো কোনো শিশুর কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় যেমন: মাংসপেশির শিথিলতা, কম উচ্চতা, চোখের কোনা ওপরের দিকে ওঠানো, চ্যাপ্টা নাক, ছোট কান, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা, জিব বের হয়ে থাকা ইত্যাদি। এগুলো ডাউন সিনড্রোম।

বেশি বয়সে মা হলে বিশেষ করে ৩৫ বছর বয়সের পরে সন্তান নিলে সেই সন্তানের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে এমন বৈশিষ্ট্যের শিশু থাকলে পরেও ডাউন শিশু হতে পারে। পরিবেশদূষণ, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদি কারণেও ডাউন শিশুর জন্ম হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অন্য শিশুদের চেয়ে ডাউন শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দেরিতে বেড়ে ওঠে। বেড়ে ওঠার মাইলফলকগুলো যেমন বসতে শেখা, দাঁড়াতে শেখা, হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা—এসব দেরিতে ঘটে। এদের জন্মগত হার্টের সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির সমস্যা, ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি হতে পারে।

ডাউন সিনড্রোমের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, জটিলতা দেখা দিলে তার চিকিৎসা করতে হয়। তবে আগে থেকে রোগ শনাক্ত করা গেলে জটিলতা কম হয়।

 শিশুর রক্তের ক্রোমোজোম সংখ্যা বা ক্যারিওটাইপিং পরীক্ষার মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম নিশ্চিত হওয়া যায়। গর্ভাবস্থার ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক গর্ভফুল হতে কোষকলা সংগ্রহের মাধ্যমে অথবা ১৫ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের বাচ্চার চারপাশের তরলের ডিএনএ পরীক্ষা করে গর্ভের বাচ্চাটি ডাউন শিশু কি না, তা নিশ্চিত করা যায়। তারপর বাবা-মা গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 

ডা. আবু সাঈদ : শিশু বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল