৭ লক্ষণে বুঝবেন বুড়িয়ে যাচ্ছেন

আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন না তো? ছবি: সিভান্তোস
আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন না তো? ছবি: সিভান্তোস

বয়সে নয়, তারুণ্য মনে, মানসিকতায়। কেউ পঁয়তাল্লিশেই বুড়িয়ে যায়, কেউবা পঁচাত্তরেও চনমনে। তা শারীরিক বা মানসিক যেভাবেই আপনি অটল থাকুন না কেন, বয়স বেড়ে চলে টিক টিক। মেঘে মেঘে বেলা বাড়ে। টের পাওয়া যায় না কখন কাজলকালো চুল হয়ে গেছে শরতের শুভ্র মেঘ। তবে একটু সচেতন হলেই বুড়োটে ভাবটাকে আপনি থোড়াই কেয়ার করতে পারেন। কী করে, তা জেনে নিন:

নতুন বন্ধুত্বে ‘না’
বন্ধুত্ব বইয়ের মতো। এক বই যায়, আরেকটি আসে! কিছু বই থেকে যায় আজীবন। তেমনি কিছু বন্ধুও সারা জীবনের সম্পদ। এটাও তো সত্যি যে কিছু বই হারিয়ে যায় চিরদিনের তরে।
আপনি মাঝবয়সে পা রেখে আর জড়াতে চান না নতুন কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্কে। এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে—নতুন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো মানেই জীবনের অতীত বিবরণ দাখিলের হ্যাপা! তা করতে গিয়ে দিতে হবে অনেক প্রশ্নের জবাব। এসব আপনার কাছে ভীষণ ক্লান্তিকর হতে পারে। লাগতে পারে বিষম খাওয়ার মতো। এর চেয়ে পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে থাকতেই আপনার বেশি ভালো লাগে। এমন ভাবনার ভেতরকার সত্যটা হলো, আপনি মনে মনে বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। জীবনের একটা অভিজ্ঞতার স্তর পর্যন্ত পৌঁছানোর পর মানুষ নতুন কাউকে স্থান দিতে চায় না। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমে আসে। আড্ডা আর হয় না সেভাবে। এটা বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ।

পোশাকে ফ্যাশনের বদলে যা দরকার
দোকানে যখন পোশাক পছন্দ করেন, নজরটা কিসে থাকে? পোশাকটি আরামদায়ক হবে কি না, টেকসই কি না, গুণগত মান কেমন। অথচ এই আপনি একসময় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পোশাকটি হালফ্যাশনের সঙ্গে যায় কি না। চটকদার কি না। এখন মনকে বোঝান, এসব চোগা-চাপকান চাপানোর দিনগুলো তো কবেই ফেলে এসেছি! আপনাকে এসব টানে না, কারণ আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। গায়ে দেওয়ার মতো কিছু নেই—এমন অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত আপনি কাপড়ের দোকানে যাবেন না। জীবনযুদ্ধে এসব ভাবনার যত গভীরতাই থাকুক না কেন, আসলে তা বুড়ো হওয়ার লক্ষণ।

প্রযুক্তি এগোচ্ছে, আপনি পেছাচ্ছেন
স্মার্টফোন, মেইল আর ফেসবুকে আপনার হাত দুটো বেশ সচল। কিন্তু টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা স্কাইপে দেখলে গায়ে জ্বর আসে! তাও মানিয়ে নিলেন, এদিকে আবার আসছে স্ন্যাপচ্যাট। অফিসের কাজেও যুক্ত হচ্ছে নানা প্রযুক্তি। আপনি যত দ্রুততার সঙ্গে প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন, তার চেয়ে দ্রুতগতিতে বদলাচ্ছে প্রযুক্তি নিজেই! প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারাটাও বুড়ো হওয়ার লক্ষণ কিন্তু!

আলোচনার বদলে অভিযোগ
কথায় আছে, মানুষের বয়স হলে শিশুর মতো হয়ে যায়। শিশুদের কিন্তু অভিযোগের শেষ নেই। বার্ধক্যে পা রাখা মানুষের বলায়ও তাই ঘটে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, কেমন আছেন—মুখ ব্যাদানা করে নেতিবাচক কিছু বলা ছাড়া মুখে কিছু আসে না। কিংবা হাবভাবেই বুঝিয়ে দিলেন যে ভালো নেই। চেয়ার ছাড়তে গিয়ে ককিয়ে উঠছেন, ঠান্ডা পানি খেতে পারেন না, দাঁত শিরশির করে। এ বিছানায় শোয়ার সময় মড়মড় করে মেরুদণ্ডের ৩৩ গিঁট। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি স্রেফ বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, আর কিছু না।

ঘরের বাইরে ‘না’
একটা সময় ছিল, যখন ঘরে তেমন মন টিকত না। চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ করে আজ এখানে খাচ্ছেন, তো কাল ওখানে ঘুরছেন। কিন্তু এখন আর মন টানে না। কোথাও ঘুরতে যাবেন? মন বলবে, ওখানে বসার জায়গা কোথায়! দর্শনীয় জায়গা মানেই জনারণ্য। রেস্তোরাঁ? নাহ, খরচটা একটু বেশি। তা ছাড়া কী বলে কী খাওয়াবে, কে জানে! সব খাবারও তো এখন শরীরে সয় না। সিনেমাতে গেলে কেমন হয়? আরিব্বাস, ওখানে তো আরও নয়। দুমদাম শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাবে! তা ছাড়া এখন যা দেখাচ্ছে না, এসব দেখা যায়! অবসরে ঘরই আপনার পৃথিবী। বয়স যা-ই হোক না কেন, সেই পৃথিবীতে আপনি আসলে একজন বুড়ো মানুষ।

শব্দে ‘না’ ঘুমে ‘হ্যাঁ’
শীতের সকালে চেয়ারে বসে রোদ পোহাচ্ছেন। হাতে গরম-গরম খবরের কাগজ। এমন সময় কানে আছড়ে পড়ল হাল আমলের কোনো রক গানের সুর। মেজাজ যথারীতি সপ্তমে। আপনি ভাবলেন না, যাঁরা এই গান শুনছে তাঁদের মতো তরুণ বয়সে আপনিও কম যেতেন না। সোজা গিয়ে কষে একটা ধমক লাগিয়ে বললেন—শব্দটা কমাও। শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, বাসায় টিভি শব্দও মাঝেমধ্যে আপনার কানে লাগে। এমনকি, কেউ জোরে কথা বললেও সহ্য হয় না। আপনি চান নীরবতা, দুদ্দাড় তারুণ্য পেরিয়ে বার্ধক্যের মতো থেমে যাওয়া নীরবতা। আসলে আপনি মন থেকেই চেয়েছেন, কারণ হাঁটছেন তো বুড়ো হওয়ার পথেই!
একই পথে হাঁটার আরও একটি লক্ষণ আছে। যেখানে-সেখানে যেকোনো অবস্থায় ঘুমের অভ্যাস। চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছেন, বাসের সিটেও তাই, এমনকি প্রক্ষালন কক্ষেও এড়ানোর উপায় নেই! এটা আসলে বুড়ো হওয়ার লক্ষণ।

ভাবলেশহীনতা
তরুণদের নাকি হাজারটা চোখ থাকে। এ কারণে তাদের চোখে এত কিছু ধরা পড়ে। কোনো কিছু হয়তো বেশিই। বুড়োটে মানসিকতা এই দেখার চোখগুলোকে অন্ধ করে দেয়। একটা সময় ছিল, পথের পাশে পড়ে থাকা কোনো বিপন্ন মানুষকে দেখলে আপনার মন কেমন করত বা কেউ কোনো বিপদে পড়েছে দেখলে এগিয়ে যেতেন। এখন যেন দেখেও দেখেন না। কিংবা কোথাও কোনো ভিড় দেখলে মনে হয়, ওই ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই বাপু। পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে আশ্চর্য এক ভাবলেশহীনতা কাজ করে আপনার মধ্যে? এই শীতলতার বরফ বেশি জমতে দিলে কিন্তু বিপদ!

শেষ কথা
শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য ও বার্ধক্য—জীবনের অমোঘ নিয়ম। এর একটাও আপনি এড়াতে পারবেন না। কিন্তু মানুষ অনেক সময় শুধু মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগে সঠিক বয়সের আগেই বার্ধক্যে উপনীত হয়। এটাই মূল চিন্তার ব্যাপার। শরীরে বার্ধক্য নেমে আসুক তো আসুক, কিন্তু ভুলেও মনকে এ ফাঁদে জড়াবেন না।