শরীরজুড়ে প্রশান্তি

ভেষজ উপায়ে ধোঁয়া থেরাপি মস্তিষ্ক ও মুখে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মডেল: অর্ণব, কৃতজ্ঞতা: আয়ুর্বেদা রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ সেন্টার, ছবি: সুমন ইউসুফ
ভেষজ উপায়ে ধোঁয়া থেরাপি মস্তিষ্ক ও মুখে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মডেল: অর্ণব, কৃতজ্ঞতা: আয়ুর্বেদা রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ সেন্টার, ছবি: সুমন ইউসুফ

ভেষজ চিকিৎসা হলো অন্যতম আদি চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে কোনো ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল পণ্য ছাড়াই সেবা দেওয়া হয়। অনেকেরই দিনের পর দিন কাজের চাপে শরীরে ভর করে ক্লান্তি। আবার অনেক সময় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মেলে না সহজে। শরীরে কোনো ব্যথা থাকলেও সেটা উপশম করার বহু পুরোনো পদ্ধতি ভেষজ চিকিৎসা। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও ভেষজ উপাদানে ধরনা দিতে পারেন। ঢাকার বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮৮ নম্বর বাড়িতে ভেষজ সেবা দিচ্ছে আয়ুর্বেদা রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ সেন্টার। প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও পরামর্শক শালিন ভারতী বলেন, ‘ব্যথা সারানো বা রূপচর্চায় ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি বহু পুরোনো। আর এই সেবায় নিয়মিত যোগ হচ্ছে নানা ধরনের পদ্ধতি। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও এই সেবার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো এবং শরীরের নানা স্থানের ব্যথা কমিয়ে ফুরফুরে থাকা সম্ভব।’

চুল, মুখের ত্বক, মাথাসহ সারা শরীরের জন্য উপকারী কয়েকটি ভেষজ ট্রিটমেন্টের বর্ণনা থাকছে এখানে।

তালাপোতাচিল

চুলে খুশকি হলে বা নিয়মিত চুল পড়তে থাকলে ‘তালাপোতাচিল’ নামের এই সেবা নিতে পারেন। এই সেবা মানসিক শান্তি এনে দিতেও সাহায্য করবে। এই ট্রিটমেন্টের শুরুতে চুলে হারবাল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা হয়। এরপর আমলা, মেথি, দই, লেবুসহ নানা ধরনের ভেষজ উপাদানে তৈরি বিশেষ প্যাক ব্যবহার করা হয়। চুলে প্যাক লাগানো হয়ে গেলে কলার পাতা দিয়ে চুলটা মুড়িয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়। এরপর পাতা খুলে চুল ধুয়ে ফেললেই হবে।

আভিয়াঙ্গাম

পুরো শরীর ম্যাসাজ করার একটি পদ্ধতি হলো আভিয়াঙ্গাম। একটি পাত্রে হালকা গরম তেল নিয়ে শরীরের দুপাশ থেকে একই সঙ্গে ম্যাসাজ করা হয়। কোমর থেকে পেট, বুক, কাঁধ হয়ে হাতে তালুতে নেমে আসে এই ম্যাসাজ। হাতের আঙুল ও তালুতেও বিশেষ কায়দায় ম্যাসাজ করা হয়। এতে শরীরের ক্লান্তি কাটিয়ে ফুরফুরে হতে সাহায্য করে।

শিরোধারা

ম্যাসাজ করা চুলে বিশেষ উপায়ে ওপর থেকে তরল মিশ্রণ ঢালা হয় শিরোধারা ট্রিটমেন্টে। আগে দুধ, ভেষজ তেল, ঘি, পানিসহ বেশ কিছু উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর একটি পাত্রে মিশ্রণটা ঢেলে তার নিচে কপাল রেখে পাত্রের কলটি খুলে দেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট ধারায় এই মিশ্রণটি কপালের নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়, যা পরে মাথা হয়ে নিচে পড়তে থাকে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক চাপ ও সাইনোসাইটিস কমানো সম্ভব।

ধোঁয়া থেরাপি

এই থেরাপিতে একটি সুতি কাপড়ে কিছু ভেষজ উপাদান নেওয়া হয়। এরপর তাতে ঘি মিশিয়ে তারপর কাপড়টা মুড়িয়ে একটা স্টিক তৈরি করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয়। মুখের নিচ থেকে সেই ধোঁয়া নাক দিয়ে ঢুকিয়ে মুখ দিয়ে বের করানো হয়। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে ও মুখের ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।

ফেসিয়াল

কোনো ধরনের কেমিক্যাল পণ্য বা লোশন ছাড়াই এই ফেসিয়াল করা হয়। মুখের ত্বকে তাই উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে নিয়মিত। শতভাগ ভেষজ উপাদানে এই ফেসিয়াল প্যাক তৈরি করা হয়। ফল, সবজি ও ঔষধি গাছগাছড়ার মাধ্যমে তৈরি এই প্যাক মুখ, গলা ও বুকের সামনের অংশে লাগানো হয়। চোখে দেওয়া হয় শসার রস। এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুখে প্যাকটা রেখে তারপর সুতি কাপড় বা তুলা দিয়ে মুছে নেওয়া হয়।

কারসানাম

প্রাকৃতিকভাবে শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে কারসানাম সেবা। এই পদ্ধতিতে পুরো শরীরের ত্বকে টোনিংও করা হয়। ফলমূল ও সবজি দিয়ে তৈরি প্যাক শরীরের পেছনের অংশে লাগানো হয়। এরপর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা রেখে দেওয়া হয়। প্যাক শুকিয়ে এলে তুলে ফেলা হয়। বাথটাবে দুধ ও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তাতে গোসল করানোর মাধ্যমে সেবা শেষ হয়।