ব্রণ এড়াতে

কিশোর বয়সে নিয়মিত ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে। মডেল: হৃদিতা, ছবি: অধুনা
কিশোর বয়সে নিয়মিত ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে। মডেল: হৃদিতা, ছবি: অধুনা

১১ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ব্রণের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। ছেলেদের ব্রণের মাত্রা বা তীব্রতা বেশি। অনেকের কাছে ব্রণ হয়ে ওঠে আতঙ্কের নাম। সব সময় চিকিৎসার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণ ভালো হয়ে যায় এবং এর দাগ নিয়ে দুশ্চিন্তারও কিছু নেই। যেসব ব্রণ শুকিয়ে যাওয়ার পর ত্বকে গর্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন। আর যাদের খুব বেশি ব্রণ হয়, তাঁদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, ব্রণ থেকে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। একটি হচ্ছে দাগ, অপরটি হচ্ছে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া। ব্রণের দাগ ব্রণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে এমনিতেই চলে যায়। দাগ না চলে গেলে দাগ দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত রোদ ও গরমে ব্রণ বেশি হতে পারে।

কাদের বেশি হয় এবং কেন?
বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগ শুরু হয়। ১১ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। বলা যেতে পারে, এটা টিনএজারদের রোগ। অনেকে অনেক বছর ধরে এই রোগে ভোগে। ২০ বছর বয়সের পর রোগটা কমে আসে। তবে কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এই রোগ দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ পুরুষালি বা মেয়েলি হরমোনের আধিক্য থাকে, যার প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেশি করে সেবাম জাতীয় তেল নিঃসরণ শুরু করে। এই তেল বের হয়ে আসতে পারে না, যদি বেরিয়ে আসার পথটি ত্রুটিযুক্ত থাকে। তাই তেল গ্রন্থির ভেতর জমতে শুরু করে। জমতে জমতে একসময় গ্রন্থিটা ফেটে যায়। ফলে তেল আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্যাকটেরিয়া তেলকে ভেঙে টিস্যুতে ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের ভেতর সৃষ্টি করে প্রদাহ। এর ফলে চামড়ার মধ্যে দানার সৃষ্টি হয়, যা ব্রণ নামে পরিচিত।

বেশি বয়সীদের ব্রণ কম হয় কেন?
বয়ঃসন্ধি পেরোলে, অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের আধিক্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে পরিমিত পরিমাণে সেবাম তৈরি হয়। ফলে ব্রণ কম তৈরি হয়। মেয়েদের ঋতুচক্রের সময় শরীরের হরমোনের কিছু পরিবর্তন ঘটে। এতে দীর্ঘদিন ব্রণের সমস্যা থাকতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তেলজাতীয় খাবার কম খাওয়া, শাকসবজি বেশি পরিমাণে অর্থাৎ একটু সচেতন হলে ব্রণের সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

ব্রণ প্রতিরোধে প্রতিদিনের অভ্যাস
ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। কিছু কিছু সাবান ব্রণ রোধে সহায়ক। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
কখনোই ব্রণে নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না। এমন করলে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
* প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খান।
* পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
* নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। অনিদ্রায় যেমন ব্রণের * প্রবণতা বাড়ে, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও ব্রণ হতে পারে।
* দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে চেষ্টা করুন।

ব্রণ হলে কী করবেন না
* রোদ এড়িয়ে চলুন
* তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না।
* ব্রণে হাত লাগাবেন না। ব্রণ খুঁটবেন না।
* চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না, যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।
* তৈলাক্ত ঝাল, ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে।

ব্রণ সারাতে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী দু-তিন মাস পর্যন্ত ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। পাশাপাশি ক্রিম, জেল বা লোশন ব্যবহার করা যায়। সন্ধ্যার পর বা রাতে ব্যবহার করার জন্য আলাদা কিছু ক্রিম পাওয়া যায়। এসব ক্রিম অতিমাত্রায় ব্যবহার করার কারণে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

লেখক: চিকিৎসক