কেমন করে এলাম

কাওসার আহমেদ চৌধুরী
কাওসার আহমেদ চৌধুরী

যখন পেছন ফিরে তাকাই দেখতে পাই সারাটা জীবন আমি এক স্টেশনের টিকিট কেটে অন্য কোনো অনির্ধারিত স্টেশনে নেমে গেছি। আমার এসব বিক্ষিপ্ত খণ্ড ইতিহাস শুনে আপনি যে মুগ্ধ হবেন না, তা আমি গোড়াতেই বলে দিতে পারি। তাহলেও পড়তে যখন শুরু করেছেন, শেষ তো নিশ্চয়ই করবেন।
ছোটবেলায় আমি দুটি মাত্র স্বপ্নের অনুসন্ধানী ছিলাম: ছবি আঁকা শেখা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ। এর মধ্যে গান-কবিতা অনেক কিছুই লেখা হয়েছে। অন্য সব কাজও আধাখামচা। মাঝখান থেকে গজিয়ে উঠল অদ্ভুত এক পরিচয়, ‘রাশিফল লেখক’। আজ তাহলে শুধু এই নিয়েই বলি।
আজ থেকে আঠারো-উনিশ বছর আগে প্রথম আলোর সর্বোচ্চ ব্যক্তি আমাকে ডেকে নিয়ে সাপ্তাহিক রাশিফল লেখার প্রস্তাব দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম। বললাম, ‘রাশিফল তথা জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে তো বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হয়েও আমাকে দিয়ে রাশিফল লেখাতে চান!’ তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি বিজ্ঞানসচেতন হলেও একটা পত্রিকা তো আমাকে চালাতে হয়।’
এভাবে বেশ কিছুদিন ঠেলাঠেলির পর অবশেষে একদিন আমি বললাম, ‘আপনি একজন মহা একগুঁয়ে লোক।’
তিনি জবাব দিলেন, ‘কী বললেন?’
আমি বললাম, ‘না, কিছু না।’
ব্যস, এই তো শুরু হয়ে গেল পাঠক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে আমার প্রতি শনিবারের দেখা-সাক্ষাৎ। আমি লিখি, আপনারা পড়েন। আপনারা পড়েন, আমি লিখি।জ্যোতিষশাস্ত্র আসলে কী তার আভাস আমি দিয়েছি প্রথমা প্রকাশন থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত আমার বই ভাগ্য জানার উপায়-এ। আমি তো দেখি, মানুষ অজানাকে জানতে বিজ্ঞানের পথ ধরে কিছুটা অগ্রসর হয়, বাকিটা অবৈজ্ঞানিক পথে। বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের পথে চললে আপনি কিছুতেই আমার রাশিফলগুলো বিশ্বাস করতে পারবেন না। তবু তারপরও দেখা যাচ্ছে, পরবর্তী দিনে বা পরবর্তী সপ্তাহে আপনি আমার বা অন্য যে কারও লেখা রাশিফল পড়ছেন। অন্য কিছু না হোক কিছুটা মজা হয়তো লাগছে। এর ফাঁকে কিন্তু আমাকে গান, কবিতা, চিত্রনাট্য ইত্যাদি লিখতে হচ্ছে। অথচ আমি যে ওই একই ব্যক্তি, সেটা আপনি জানতে পারছেন না। যেদিন জানতে পারলেন, সেদিনও একটা চমক লাগল আপনার মনে।
পাঠক, লক্ষ করবেন একই সঙ্গে যে বহু রকম কাজ করে তার কোনো কাজেই তেমন সাফল্য আসে না। আমি নিজে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এতে আমার মন খারাপ নিশ্চয় হয়, তবে আমি নিজের কাছে তা স্বীকার করি না। দেখুন, মানুষ যে কাজে আনন্দ না পায়...সে কাজ সে করতে পারে না। সফলতা তো অনেক দূরের ব্যাপার। যা-ই হোক, আপনাদের জন্য রাশিফল লিখে আমি আনন্দ পাই বলেই নিয়মিত প্রতি বুধবারে লিখতে বসি। আমার শত ঝামেলা সত্ত্বেও ওই দিনটি আমি রাশিফল লেখার জন্য প্রস্তুত থাকি। ইদানীং নিজের হাতে লিখতে একটু কষ্ট হচ্ছে, কেননা হাত ও পিঠে ব্যথা। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না। পারবেও না। এইখানটায়ই আমি সেই চির পুরোনো বার্তাটি আপনাকে জানাই: আসলে মনের শক্তিটাই সব। সেভাবে প্রতি বুধবার একজন অনুলেখক আসেন প্রথম আলো থেকে, আমি মুখে যা বলি তিনি সেটা তাঁর ল্যাপটপে লিখে নিয়ে চলে যান। পরের শনিবারে যথারীতি সেটা প্রকাশিত হয়। আমি বিশ্বাস রাখি এভাবেই আমি রাশিফল লিখে যাব, যত দিন প্রথম আলো আমাকে তাড়িয়ে না দেয়। ঠিক আছে পাঠক, আগামী শনিবারের জন্য আপনার জানালা খুলে রাখবেন। দেখা হবে। শুভ হোক!