আমরা কতটুকু সার্কাস্টিক হব?

সার্কাজমের আইকন ছবিটি ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
সার্কাজমের আইকন ছবিটি ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

সার্কাজম করা তনিমের (ছদ্মনাম) অভ্যাস। ফেসবুক বা সামনাসামনি, সার্কাজম সে করেই। এটি করতে ভালো লাগে তাঁর। সব সময় ইচ্ছে করেই, তা কিন্তু নয়।
অভিধান বলছে সার্কাজম শব্দের বাংলা অর্থ অনুভূতিকে আহত করার উদ্দেশ্যে করা তিক্ত মন্তব্য এবং এমন মন্তব্যের ব্যবহার। অর্থাৎ শ্লেষ, শ্লেষোক্তি। সংজ্ঞা বা অর্থ যা-ই হোক, এই যুগে এসে সার্কাজম হয়ে গেছে একধরনের মজা। ফেসবুকে ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে হোক কিংবা কোনো পেজ থেকে হোক সার্কাজম করতে পছন্দ করেন অনেকে। সার্কাজম নামেই তো ফেসবুকে এক বিখ্যাত পাতা আছে।
লক্ষ করার মতো ব্যাপার হলো আজকাল অনেকেই দেখা যাচ্ছে নিজের মতের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই সার্কাজম শুরু করে উড়িয়ে দিচ্ছি তার কথা। সার্কাজম করে বলা কথায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে ইদানীং। সার্কাজম করার অবশ্যই একটা সীমা আছে। সেটা কতটুকু? কিংবা আমরা কী কী বিষয়ে সার্কাজম করব, কী কী বিষয়ে করব না, এটাও একটা বড় প্রশ্ন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘সার্কাজম ব্যাপারটা অবশ্যই একটা সীমার মধ্যে থাকতে হবে। যখনই আমাদের করা সার্কাজম আরেকজনের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না, আমাদের উচিত তা না করা। সবার একটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে, ব্যক্তিগত ভালো লাগা না লাগা আছে। সে ব্যাপারগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে কিংবা সে ব্যাপারগুলোকে আঘাত করে, এমন কোনো সার্কাজম করা যাবে না।’
বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে সার্কাজম করার, ট্রল করার চল এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। মজা পেলেও তাঁদের সম্মানের দিকে নজর রাখতে হবে। আহমেদ হেলাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘যাঁরা তারকা বা বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁরা কিন্তু অনেকেরই আদর্শ, অনেকেই তাঁদের অনুসরণ করেন। তাঁদের দেখে মানুষ বড় হয়, তাঁদের মতো হওয়ার চেষ্টা করে। তাই তাঁদের নিয়ে সার্কাজম করার ব্যাপারে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। আপনি হয়তো মজার জন্যই সামান্য সার্কাজমটা করলেন, কিন্তু ওই সামান্য সার্কাজমটাই ব্যক্তিকে কিংবা তাঁর অনুসারীদের আঘাত করার মতো একটা বিষয় হতে পারে।’
এমন অনেক উদাহরণই কিন্তু আছে যে ফেসবুকের সামান্য মন্তব্য বক্সে একটা সার্কাজমের ফিরতি উত্তর আরেকটা সার্কাজম দিয়ে দিতে দিতে মন্তব্যকারীদের মধ্যে বেশ একটা তর্ক সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। তারা একজন আরেকজনকে অনেক সময় ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করছে। বর্তমান যুগে চলতে আমাদের হয়তো এই ব্যাপারটার মুখোমুখি হতে হবে। কেউ যদি এমন কোনো মজা করে, যা ভালো লাগল না কিংবা কোনো অনুভূতিকে আঘাত করল, তাহলে উচিত বিনীতভাবে সেই ব্যক্তিকে তার ভুলটা বুঝিয়ে দেওয়া।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোক কিংবা ক্যাম্পাস-ক্যানটিনে আড্ডাতেই হোক, সার্কাজম থাকবেই। তাতে সবাই হাসবে, আনন্দ করবে, মজা পাবে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সার্কাজম যেন কোনোভাবে কাউকে আঘাত না করে।