বন্ধু আর পথচলার সঙ্গী

বন্ধুই হোক আর পথচলার সঙ্গীই হোক, পরস্পরের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা। মডেল: রাজ ও নাজিফা, ছবি: অধুনা
বন্ধুই হোক আর পথচলার সঙ্গীই হোক, পরস্পরের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা। মডেল: রাজ ও নাজিফা, ছবি: অধুনা

কম-বেশি প্রত্যেকেই চান আমাদের পথচলার সঙ্গীকে একজন বন্ধু হিসেবে পেতে। এমন একজন বন্ধু, যার সঙ্গে মন খুলে প্রতিটি কথা বলা যায়! কিন্তু সব সময় কি তা হয়?
আসলে সবারই আলাদা একটি বন্ধুমহল রয়েছে। এমনকি আপনার পথচলার সঙ্গী যা করতে পারেন না, সেটিও হয়তো পারেন আপনার কোনো প্রিয় বন্ধু। কিন্তু সমস্যা তখনই দেখা দেয় যখন আপনার ভালোবাসার মানুষ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসেন বন্ধুর ওপর। সে ক্ষেত্রে কিন্তু দোটানায় পড়তে হয়।

সমস্যা তখনই দেখা দেয়
আপনার প্রেম কিংবা বিয়ের পরের সম্পর্ক কিন্তু আপনার বন্ধুমহলের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা বন্ধুদের জন্য যে সময়টুকু আপনি বরাদ্দ রাখতেন, সেটাই এখন দিতে হচ্ছে আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, ‘এমনটি স্বাভাবিক, কেননা আপনি যখন আরেকজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে থাকছেন, তখন তাঁর প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব চলে আসে। আবার সেটাও কিন্তু আমরা পাশের মানুষের থেকে আশা করি। একসঙ্গে কিছু সময় কাটানো কিংবা নিজেদের জন্য একান্তেই সময় বরাদ্দ রাখা। কিন্তু এটি তখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন সামান্য কারণেই আপনি বিধিনিষেধ দিয়ে বসছেন।’
এ ক্ষেত্রে কিছু উদাহরণ দিলেন মেখলা সরকার। ‘যেমন আপনার কোনো এক বন্ধুর আচরণ হয়তো আপনার সঙ্গী পছন্দ করছে না। আর সে কারণেই আপনাকে সরাসরি বলে বসল, “না, ওর সঙ্গে আর মেশা যাবে না।” কিংবা সন্দেহ করে প্রেমিকার কাছের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে মানা করে দিলেন। এটি যেমন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে বলতে পারেন, তেমনি অন্যপক্ষ থেকেও আসতে পারে। আবার কখনো কখনো কোনো পক্ষের পরিবার থেকেও আরোপ করা হতে পারে।’

কেন এমন নিষেধাজ্ঞা?
মেখলা সরকার বলেন, ‘আপনার সঙ্গীর মানা শুনেই তো আপনি রেগে গেলেন। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, কেন আপনার সঙ্গী এই বিধিনিষেধ আরোপ করলেন।’ আর এটি হতে পারে বিভিন্ন কারণে—

কোনো আচরণ পছন্দ না হওয়া
এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। আমরা চাই সঙ্গীর মানসিকতা, পছন্দ-অপছন্দ হবে আমাদের মতোই। কিন্তু এর বাইরে যখন সে অন্য একজনের সঙ্গে মিশছে, যার সঙ্গে আপনি মোটেও অভ্যস্ত নন, তখন সমস্যাটি হয়।

সন্দেহপ্রবণতা
সন্দেহপ্রবণতা এমন এক ব্যাপার, যার ফলে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক দুটোই নষ্ট হতে পারে। আপনি হয়তো আপনার বন্ধুর সঙ্গে আপনার সব ব্যাপারে আলোচনা করছেন। এটাই আপনার সঙ্গীটি মেনে নিতে পারছেন না। ফলে একপর্যায়ে সন্দেহ থেকে দেখা দিতে পারে বন্ধুর সঙ্গে মেলামেশার বিধিনিষেধ।

সম্মান না করা
আপনার বন্ধু হয়তো আপনার সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন। কিন্তু তাই বলে যে তিনি একই আচরণ আপনার সঙ্গীর সঙ্গেও করবেন, এমন নয়। আর একেকজন মানুষের আচরণ কিন্তু বদলে যায় না পাশে থাকা মানুষের ওপর ভিত্তি করে। এমনও হতে পারে যে আপনার বন্ধুর কোনো কথা বা বাক্যালাপ আপনার পথচলার মানুষের জন্য অপমানজনক হলো।

নিজের কোনো আচরণ
হয়তো এই পুরো সমস্যার জন্য দায়ী আপনি নিজেই। ভেবে দেখুন, আপনি বন্ধুদের সামনে সঙ্গীকে ছোট করছেন না তো? কিংবা সঙ্গীকে যথাযথ সম্মান না করায় আপনি তার প্রতিবাদ করলেন না। এতে আপনার ওপর সঙ্গীর আস্থা অনেকটাই কমে যাবে।

তুলনা দেওয়া
আপনার বন্ধু ও সঙ্গীর মধ্যে তুলনা করলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই এটা না করাই ভালো।

কর্তৃত্ব ফলানো
আপনি হয়তো সবই জানেন। আপনার সঙ্গীও সব খুলেই বলছেন। কিন্তু তারপরও আপনি নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

যা করা যায়
সমস্যা চিহ্নিত করার পর সমাধান করে ফেলুন। কেননা এ ধরনের সমস্যা পরবর্তী প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদের দুজনকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

বন্ধুকে বুঝিয়ে বলা
বন্ধুরা যেমন আপনার চেনা, তেমনি পাশের মানুষের প্রতিও আপনার দায়-দায়িত্ব আছে। তাই আপনার সঙ্গীকে আঘাত করে কিছু বললে আপনি তার প্রতিবাদ করুন। এমন নয় তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ করতে হবে। আপনি বরং বুঝিয়ে বলুন।

সঙ্গীর মনোভাবকে গুরুত্ব দেওয়া
 আগে যাচাই করুন কেন আপনার সঙ্গী এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কোনো কিছু অবজ্ঞা না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন।
 কখনোই কারও সঙ্গে তুলনা না করা। এটি ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে দেয়।
 এমনও হতে পারে, আপনার এবং বন্ধুর কোনো কাজ দুজনের জন্যই নেতিবাচক। তাই এমন নিষেধাজ্ঞা। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের যেকোনো কাজ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
 বড় সমাধান হলো একে অপরকে বিশ্বাস করা। এটি না হলে কোন ধরনের সম্পর্কই টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
 মানুষের জীবনে বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার সম্পর্ক দুটিই প্রয়োজন। তাই নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্তটি আপনি নিজে নিন।