চিকিৎসকের কাছে রোগীর প্রস্তুতি

চিকিৎসকের কাছে অনেকে নিজের সমস্যার কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না, কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলেন। অনেকে রোগের ইতিহাস বা ওষুধের নাম-বৃত্তান্ত বলতে পারেন না। ফলে অনেক অপেক্ষার পর সিরিয়াল নিয়ে যখন চিকিৎসকের দেখা পান, তখন অল্প সময়ে তালগোল পাকিয়ে আসল কথাটাই অনেক সময় বলা হয় না। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেও প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা দরকার। এতে আপনার এবং চিকিৎসক—দুজনেরই সুবিধা হবে।

এক. আপনি মূলত যে সমস্যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন, তা সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। অপ্রধান ও আনুষঙ্গিক সমস্যাগুলো পরে বলবেন। কত দিন ধরে ভুগছেন তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন। এ সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন কি না জানান।

দুই. আপনার যদি এর সঙ্গে অন্য কোনো রোগ থেকে থাকে (যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি) তাও মেয়াদ উল্লেখসহ জানান। সেগুলোর জন্য নিয়মিত কী কী ওষুধ কত মাত্রায় গ্রহণ করছেন, তা উল্লেখ করুন। মনে না থাকলে লিখে আনুন বা ওষুধের পাতা সঙ্গে রাখুন। কোনো বিশেষ ওষুধে ইতিপূর্বে কোনো সমস্যা হলে তা জানাবেন। নিকট অতীতে কোনো অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে তা জানান।

তিন. চিকিৎসকের প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে ও সংক্ষেপে দিন। হঠাৎ করে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলবেন না। তাতে চিকিৎসকও তাঁর জিজ্ঞাসা থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। অপ্রাসঙ্গিক ও অকারণ তথ্য দেওয়ার দরকার নেই। এতে দুজনেরই সময় নষ্ট।

চার. রোগীর সমস্যার কথা তাঁকেই আগে বলতে দিন। তিনি কিছু ভুলে গেলে সঙ্গী ধরিয়ে দিতে পারেন। আগেই সঙ্গে থাকা ব্যক্তির কথা বলা উচিত নয়। চিকিৎসকের কাছে কোনো কিছু লুকানো উচিত নয়, আবার কোনো কিছু বাড়িয়ে বলারও দরকার নেই। রোগীর সঙ্গে অবশ্যই এমন কারও আসা প্রয়োজন, যিনি রোগীর রোগ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন।

পাঁচ. চিকিৎসা পদ্ধতি, রোগের বিবরণ এবং ওষুধের মাত্রা-মেয়াদ চিকিৎসকের কক্ষ ত্যাগ করার আগেই তাঁর কাছ থেকে ঠিকভাবে বুঝে নিন।

ছয়. একই চিকিৎসকের কাছে আবার এলে আগের প্রেসক্রিপশন অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখা থাকে। আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র গুছিয়ে সঙ্গে রাখুন। অন্য কারও প্রেসক্রিপশন থাকলেও তা আনুন।

সাত. আর্থিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসককে জানিয়ে রাখুন। তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অল্প কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারবেন। প্রয়োজনে কম খরচে সরকারি হাসপাতালে বা কোথায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়, তাও জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।

আট. চিকিৎসকের কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করার সময় অসহিষ্ণু আচরণ করবেন না। দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। কক্ষে আপনার মতোই আরেকজন রোগী সেবা নিচ্ছেন। মনে রাখবেন, প্রত্যেকেই নিজের কষ্ট নিয়ে এসেছেন। জরুরি রোগী, গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের আগে যাওয়ার সুযোগ দিতে চেষ্টা করুন।

নয়. অনেকে চিকিৎসকের সামনে গিয়ে ঘাবড়ে যান, রক্তচাপ বেড়ে যায়। ঠিকমতো বলতে পারেন না। দুশ্চিন্তা করবেন না। চিকিৎসকের প্রতি আস্থা রাখুন। আপনার অনাস্থা, অসহযোগিতা, ভুল তথ্য প্রদান আপনারই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়