ছুরির কোপে শরীর ম্যাসাজ!

ম্যাসাজ সেন্টারে চলছে ছুরি ম্যাসাজ। ছবি: এলএ টাইমস
ম্যাসাজ সেন্টারে চলছে ছুরি ম্যাসাজ। ছবি: এলএ টাইমস

শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল রাখতে বডি ম্যাসাজ করান অনেকে। এই বডি ম্যাসাজের রয়েছে নানা রকম বিচিত্র রূপ। যেমন ধরুন, ফিলিপাইনের একটি চিড়িয়াখানায় বডি ম্যাসাজ করাতে পারেন শরীরে অজগর পেঁচিয়ে! কিংবা নিজেকে সঁপে দিতে পারেন বাচ্চা হাতির পায়ের তলায়। এতেও আশ না মিটলে চলে যান জাপানের পশ্চিমাঞ্চলে, সেখানে পাবেন নুডলস দিয়ে গোসলের সুযোগ। যদি আরও বিচিত্রধর্মী কোনো ম্যাসাজ চান, তাহলে যেতে পারেন তাইওয়ানে। সেখানকার ম্যাসাজ থেরাপিস্টরা আপনার অপেক্ষায় বসে আছেন ছুরি হাতে!
ঠিকই ধরেছেন। ছুরি ম্যাসাজ! আপনি চিত কিংবা উপুড় হয়ে শুয়ে থাকবেন। ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা থাকবে পুরু কাপড়ে। এর ওপর ছুরি দিয়ে কসাইয়ের মতো ছোট ছোট ‘কোপ’ মারবেন থেরাপিস্টরা। ভয়ের কিছু নেই। ছুরির মাথা ধারালো নয়। তাইওয়ানে এই ম্যাসাজের নাম ‘দাও লিয়াও’—বাংলায় ছুরি ম্যাসাজ। এই ম্যাসাজের অন্তর্গত দিকটা বেশ আধ্যাত্মিক। ম্যাসাজ থেরাপিস্টদের দাবি, ছুরি চালানোর মাধ্যমে শরীর থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর হবে। আর ইতিবাচক শক্তি প্রবেশ করবে সেই ছুরি দিয়ে!
ছুরি ম্যাসাজের আধ্যাত্মিক দিকটা ব্যাখ্যা করেছেন তাইপের খ্যাতনামা প্রাচীন আর্ট অব নাইফ থেরাপি এডুকেশন সেন্টারের মালিক সিয়াও মেই ফং, ‘আমরা কোনো ধর্ম প্রচার করছি না। এটা কোনো বিজ্ঞানও নয়। আমরা শুধুই শরীরের শক্তি নিয়ে চর্চা করি, যেখান থেকে মানুষ উপকৃত হয়ে নিজের হৃদয় ছুঁতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘দাও লিয়াও’ ছুরির নিচে নিজের শরীর সঁপে দিতে একটু ভয় লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ম্যাসাজ ব্যক্তির শরীরের গভীরে শক্তির সঞ্চার করে এবং মনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
বাতজনিত নানা সমস্যা আর অনিদ্রায় ভুগছেন যাঁরা, ছুরি ম্যাসাজ তাঁদের জন্য অব্যর্থ চিকিৎসা—পরামর্শ দিয়েছেন সিয়াও মেই ফং। এই ম্যাসাজের জন্য ঘণ্টাপ্রতি আপনাকে গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ তাইওয়ানিজ ডলার (প্রায় ৪০ ডলার)। তাইপের এক বছর বয়সী শিশু থেকে ১০০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পর্যন্ত ছুরি ম্যাসাজের স্বাদ নিতে ভিড় জমান সিয়াওয়ের সেন্টারে।
ভাবতে পারেন, এই ম্যাসাজ হয়তো আধুনিক দুনিয়ার মানুষের চটকদার চিন্তার ফসল। ভুল। ছুরি ম্যাসাজ নতুন কিছু নয়। প্রায় দুই হাজার বছর আগে থেকেই এটি তাইওয়ানের সংস্কৃতির অংশ। দেশটির নানহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় জানিয়েছে, চীনে হান ও তাং রাজবংশের শাসনামলে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মুমূর্ষু রোগীর শেষ চিকিৎসা হিসেবে ছুরি ম্যাসাজ করতেন। প্রচলিত চিকিৎসায় কাজ না হলে ব্যবহার করা হতো এই ছুরি ম্যাসাজ পদ্ধতি। চীনে এখন ছুরি ম্যাসাজের তেমন কদর না থাকলেও তাইওয়ানে তা আজও টিকে আছে সগৌরবে। সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।