সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর

সম্পর্ক ভেঙে গেলে শূন্যতা পূরণের জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সহযোগিতা নিন। মডেল: তুষ্টি ও নায়ের, ছবি: কবির হোসেন
সম্পর্ক ভেঙে গেলে শূন্যতা পূরণের জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সহযোগিতা নিন। মডেল: তুষ্টি ও নায়ের, ছবি: কবির হোসেন

তিল তিল করে আশা-স্বপ্ন, ভালোবাসা-মমতা, শ্রম-সাধনা দিয়ে গড়ে ওঠে একেকটি সংসার। রোমান্টিক প্রেমের সম্পর্ক। মমতায় জড়ানো, স্বপ্ন মাখানো সাধনার সে সৌধ হঠাৎ একদিন ভেঙে পড়লে, তছনছ হয়ে গেলে বুকের পাঁজর ভেঙে যায় আমাদের। সে কষ্ট, সে বেদনা, সে আর্তনাদ আমরা কতজন শুনতে পাই? না শুনতে পারার খেসারত দিতে হয় কাউকে আত্মহননের মাধ্যমে বা তাদের প্রিয়তম সন্তানদের আত্মহত্যার মাধ্যমে।

ঘটনা-১
অতি সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আকতার জাহান নিজ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছেন। নিজের সহকর্মীকে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। বিবাহবিচ্ছেদের চার বছর পর তিনি শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেন। সঙ্গে ছেলে সোয়াদকে যাতে তার বাবা কোনোভাবেই নিজ হেফাজতে নিতে না পারেন, সে ব্যাপারেও অনুরোধ রেখে গেছেন।

ঘটনা-২
কয়েক বছর আগে এক প্রবীণ সাংবাদিকের ছেলের বউ ও তাঁর সন্তানেরা একত্রে আত্মহত্যা করার আগে ঘরের দেয়ালে দাদা-বাবার বিরুদ্ধে শত অভিযোগনামা লিখে যায় সুইসাইড নোট হিসেবে।
ফিরিস্তি বাড়িয়ে লাভ নেই। এ রকম অসংখ্য ঘটনা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি। সম্পর্ক যত দিনের হোক না কেন, যে কারণেই ভেঙে যাক না কেন, সম্পর্কচ্ছেদ হলে প্রত্যেকের জীবনেই অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এমনকি দীর্ঘদিনের অসুখী, অশান্তির সংসার ভেঙে গেলেও স্বস্তি না পেয়ে মনে বেদনাবোধ জাগে। এর কারণ সম্পর্ক নিছক একটি সম্পর্ক মাত্র না, এতে জড়িয়ে থাকে দুজনের স্বপ্ন ও দায়িত্ববোধ। ফলে সম্পর্ক ভেঙে গেলে ‘হারানোর’ যন্ত্রণা সবাইকে পেয়ে বসে (ব্যতিক্রম বাদে)।

ওয়েব পোর্টাল হোপগাইড ডট অরগের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘সম্পর্কচ্ছেদ আমাদের অচিহ্নিত মানচিত্রে ফেলে দেয়। সবকিছুই তছনছ হয়ে যায়—ব্যক্তির রুটিন, দায়িত্ব, বাড়িঘর, অন্যান্য সম্পর্ক ও বৃহত্তর পরিবার। বন্ধুবান্ধব এমনকি ব্যক্তির আত্মপরিচয়ও। ব্রেক-আপ ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। তাকে ছাড়া সারা জীবন কেমনে কাটাব? অধিকতর উত্তম কাউকে কি খুঁজে পাব? নাকি একাকীই সারাটি জীবন কাটিয়ে দেব? অসুখী সম্পর্কের চেয়ে এই উত্তর না-জানা প্রশ্নগুলো আরও বেশি কষ্টদায়ক।’

এ ছাড়া তারুণ্যের রোমান্টিক প্রেমঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে অফুরান আনন্দ ও ভবিষ্যতের উজ্জ্বল রঙিন স্বপ্ন। যখন সে সম্পর্ক ভেঙে যায় তারা দিশাহীন হয়ে পড়ে। যেন অতল সমুদ্রে পড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের অবস্থা (ব্রেইন মেজিং) পরীক্ষা করে দেখেছেন সম্পর্ক ভেঙে গেলে হুবহু মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেগুলো সক্রিয় হয় যখন কোনো মাদকাসক্ত তাঁর ‘প্রয়োজনীয়’ মাদক থেকে বঞ্চিত হন। তার মানে সম্পর্ক বা ভালোবাসা একটি ‘নেশা’র মতন। সম্পর্ক ভেঙে গেলে সে কারণে, বিশেষ করে তরুণেরা মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মতো আচরণ করতে থাকেন।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর

বিচ্ছেদের শোক সইতে হবে: মনে রাখবেন দুঃখিত হওয়া, রেগে যাওয়া, ক্লান্ত হওয়া, হতাশ হওয়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া সবার জন্যই স্বাভাবিক ঘটনা। সময়ে-সময়ে এই অনুভূতিগুলো তীব্রও হতে পারে। যেমন বিচ্ছেদের পর আপনার। জেনে রাখুন, এই কষ্টদায়ক অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে। এ সময়ে আপনি আগের মতো তত কার্যক্ষম না-ও থাকতে পারেন। নিজেকে একটু ব্রেক দিন। আমরা কেউই সুপারম্যান, সুপার উইমেন নই। ড. এলিজাবেথ কুবলারের মতে, তীব্র শোকের সময়ে আমাদের পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে যেতে হয়। সেগুলো হলো—

* ঘটনাকে অস্বীকার করা ও নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, ক্রোধ অনুভব, দর-কষাকষি করা (বারগেইনিং), বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) ও সর্বশেষে ঘটনাকে মেনে নেওয়া। আপনাকে ওই স্তরগুলো পেরিয়ে অপ্রিয় বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। এ সময়ে নিজের ক্ষুদ্র গহ্বরে ঢুকে থাকবেন না।

* নিজের যত্ন নিতে হবে। আপনার দেহ-মন-আত্মার পরিচর্যা করুন। শোকের গ্রেস পিরিয়ড দ্রুত পেরিয়ে আসুন। যত দ্রুত আবেগগত নিরাময় করতে পারবেন, তত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

* ভালো খাবেন, ভালো কাপড় পরবেন, ভালো ঘুম দেবেন, ব্যায়াম করবেন। এর জন্য প্রকৃতির কাছে যাবেন, হাঁটবেন, ঘুরবেন, বেড়াবেন। প্রকৃতিকে আপনার আরোগ্য লাভে সহায়তা করতে দিন।

* জিমে যান, রান্নার রেসিপি শিখুন, সাইকেল চালান। সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন। নতুন মানুষ, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। নতুন জামাকাপড় কিনুন, পুরোনোগুলো কাউকে দান করুন। নিজের কক্ষটি নিজের মতো করে নতুন করে সাজান।

* সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ: আশ্রয়হীনদের জন্য হাসপাতাল, দাতব্য সংঘ, শিশু-নারী সংগঠনে নিজের সময় দিন। লেখক শিবির, রান্না শেখা, পোলট্রি শেখা—যা পারুন সেটিতে যোগ দিন। নিজেকে আবার তুলে ধরুন।

* পোষা প্রাণী পালন করতে পারেন।

* বন্ধু-আত্মীয়দের নিয়ে বাইরে বের হোন। সিনেমা দেখুন, বাইরে রাতের খাবার খেতে পারেন। কিছু সিনেমা দেখতে পারেন। যেমন—দ্য নোট বুক, দ্য ব্রেক আপ,ন্টারনাল সানসাইন অব স্পটলেস মাইন্ড ইত্যাদি।

* কখনোই একা থাকবেন না। পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করে নিন।

* জীবনের মূল কথা হচ্ছে—এগিয়ে যেতে হবে। মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ। যত বড় বিপর্যয় ঘটুক, যত সীমাহীন কষ্ট থাকুক, আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। নেতিবাচক চিন্তায় বুঁদ না থেকে এবং পরিস্থিতিকে অতিরিক্ত বিশ্লেষণ না করে জীবনমুখী হোন। ভাবতে থাকুন, ‘আমার এখনো ভবিষ্যৎ রয়েছে।’

* আমি বেশ ভালো আছি—এ রকম ভান করবেন না। কৃত্রিম গর্বে প্রকৃত আবেগ গোপন করবেন না। শোক করুন, কাঁদুন।

* মদ, মাদক কখনোই গ্রহণ করবেন না; ঘুমের ওষুধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

* প্রতিপক্ষ বা তাদের পরিবার সম্বন্ধে কদর্য মন্তব্য করবেন না।

* স্বাভাবিক শোক ও ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে। দিনে দিনে অল্প অল্প করে আমরা শোক কাটিয়ে উঠি। কিন্তু যদি তা নয়, যদি দেখেন সামনে এগোতে পারছেন না তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিন। তা না হলে আত্মহত্যাসহ নানাবিধ মনো-সামাজিক জটিলতা দেখা দেবে।

সবাইকে যা মনে রাখতে হবে

*    সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে এটি রূঢ় বাস্তবতা। যত বেদনাদায়ক, হাহাকারপূর্ণ বা হতাশাজনকই হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে আপনার তিলে তিলে গড়া সাজানো বাগান শুকিয়ে গেছে, ভেঙে পড়েছে এবং তা চিরতরে হারিয়ে গেছে। প্রথমেই আপনাকে এই অপ্রিয় নিষ্ঠুর বাস্তব সত্য মেনে নিতে হবে। এটি কঠিন, কিন্তু অনিবার্য।

*    যা কিছু কঠিন, যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই সেটিকে ছেড়ে দেওয়া (লেট গো) হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।

*    মার্কিন ​মনোবিজ্ঞানী টিম্বার হাই কিউ বলেন, ‘আপনি ঝড় থামাতে পারেন না। তাই সে চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।’ সময় দিন ঝড় একসময় থেমে যাবে।

*    মার্কিন লেখক ও বক্তা জিগ জিগলার বলেন, ‘জীবনে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়াটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো ও আবার চলতে শুরু করা আপনার চয়েজ।’ আমাদের জীবনে কী ঘটবে তা আমরা সব সময় নির্ধারণ করতে পারি না। কিন্তু সে বিষয়ে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব, সেটি নিয়ন্ত্রণের ভার আমাদের। উঠে দাঁড়ান, ঘুরে দাঁড়ান ও মুভ অন।

*    আরেকজন মার্কিন লেখক এবং আচরণবিজ্ঞা​ন বিষয়ের শিক্ষক মারাবোলি বলেন, ‘আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলছি, এমন কিছুই তত বিপর্যয়কর নয় যতটুকু আপনি মনে করছেন, এমন কিছুই তত বিষময় নয়, যতটুকু আপনি ভাবছেন।’ আমিও দৃঢ়ভাবে বলছি, আপনি নিজের জীবনকে যতটুকু বিপর্যস্ত, বিষময় মনে করছেন তা ততটুকু বিষময় নয়। জীবনে এর চেয়ে খারাপ কিছু ঘটতে পারত বা পারে। তাই পরিস্থিতিকে এত ভারবহ মনে করবেন না।

*    নিজের ‘বাস্তবতা’ নিজে তৈরি করুন। সে ক্ষমতা আপনার রয়েছে। আপনি যেদিকে মনোযোগ বেশি দেবেন, সেদিকের বিস্তার তত বাড়তে থাকবে। সংকটকালীন মনোযোগ সেদিকে কেন্দ্রীভূত না করে জীবনের নতুন বাস্তবতা নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করুন।

*    নিজের ওপর আস্থা রাখুন: জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন, অনেক দূরের পথ হেঁটে এসেছেন থেমে থাকেননি। বর্তমানেও আপনি টিকে যাবেন সে আস্থা রাখুন।

*    আমরা হয়তো পুনরায় এটি শুরু করতে পারি না। কিন্তু আমরা নতুন কোনো যাত্রা শুরু করতে পারি। সব সময় পুরোনোকে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যেতে হবে তেমনটি নয়। অনেক সময় আমাদের নতুন পথ আবিষ্কার করতে হয়। কখনো আপনাকে হয়তো স্রেফ ‘রিসেট বাটনে’ চাপ দিতে হবে।

সন্তানেরা যা করবে

*    মা-বাবা উভয় পক্ষকেই বারবার আশ্বস্ত করতে হবে যে আমরা তোমাদের সঙ্গে আগের মতো আছি, থাকব।

*    সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে দীর্ঘ মেয়াদে সন্তানদের কোনটি মঙ্গলজনক হবে, সেটি গুরুত্ব দিতে হবে।

*    সক্রিয়ভাবে উভয় পক্ষকে তাদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে হোমওয়ার্কে সহায়তা সবই।

*    স্থিতিশীল পরিবেশ ও রুটিন দিতে হবে।

*    যেসব সম্ভাব্য পরিবর্তন আসবে তা জানিয়ে দিয়ে সহায়তার আশ্বাস দিতে হবে। যেমন—স্কুল পরিবর্তন, রুটিন পরিবর্তন, বাড়ি পরিবর্তন ইত্যাদি।

*    তারা মা-বাবা দুজনকেই ভালোবাসতে চায়। ইচ্ছে করলে তারা মনে করবে আপনি তাদের আপনার পক্ষে নিতে চাইছেন।

*    অন্য পক্ষ সম্বন্ধে কিছু বলতে চাইলে ‘ভালো’ কিছু বলুন, যদি তা না পারেন, কিছুই বলবেন না। নিজেকে সংযত রাখুন, ধৈর্য ধরুন।

*    কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেটির নিরসন করুন।

*    তাদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন না, এতে তারা অশান্তির জন্য নিজেদের দায়ী মনে করবে।

*    তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

*    তাদের কাছে থাকুন, বুকে জড়িয়ে নিন। পিঠ চাপড়ে দিন, চুমু দিন। ঘনিষ্ঠভাবে ধরে রাখুন।

*    সর্বোপরি নিজের যত্ন নিন, আপনি সুস্থ থাকলেই কেবল তাদের যত্ন, লালন-পালন সঠিকভাবে করতে পারবেন।

*    যদি দেখেন নিজে সে অসুস্থতা থেকে বের হতে পারছেন না বা সন্তানদের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সময় নষ্ট না করে বিলম্বে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রফেশনাল সহায়তা নিন, জীবন বাঁচান।

তারুণ্যে প্রেম ভেঙে গেলে

*    ‘বন্ধু’ হয়ে থাকব, এই চিন্তা করবেন না। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হতে পারে, কিন্তু প্রেম থেকে নেমে বন্ধুত্বে আসা খুব কম ক্ষেত্রেই সম্ভব। তাই দূরত্ব তৈরি করুন।

*    প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। অপর পক্ষের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না, বিশেষ করে রাগের মাথায় এমন কিছু করবেন না যাতে আইনি জটিলতায় পড়তে হয়।

*    সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যমকে ব্লক করে দিন। মুঠোফোন, ফেসবুক, ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপসহ সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিন। হয়তো তীব্র ইচ্ছে হবে ফোন করি বা কোনোভাবে যোগাযোগ করি, সে তাগিদ সংবরণ করুন, নিজকে সংযত রাখুন। শূন্যতা পূরণের জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের শরণাপন্ন হোন।

*    সে আবার ফিরে আসুক, পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হোক বা সমঝোতা হোক—এমন ভিক্ষা করবেন না: নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখুন। নিজেকে আরও ছোট, হেয় করবেন না। মনে রাখবেন সব পাখি ঘরে ফেরে না।

*    ফেসবুক ব্যবহারে দুটি জিনিস মনে রাখবেন। ব্রেক-আপ নাটকের ঘটনা আকারে-ইঙ্গিতেও পোস্ট দিয়ে জানাবেন না এবং কোনোভাবে গোপনে ওই পক্ষকে অনুসরণ করবেন না। আপনাকে ছাড়া তার জীবন কত হাহাকার হয়েছে, সে কত খারাপ আছে অথবা সে কত ভালো আছে—এসব কিছু জানার চেষ্টা করবেন না। সে ভালো থাক, মন্দ থাক সেটি দেখার দায়িত্ব এখন আপনার না। তার কোনো কিছুতেই যেন আপনার কিছু যায়-আসে না।

*    পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহায়তা নিন, কান্না করুন, ক্রোধ প্রকাশ করুন, নিজকে হালকা করুন।

*    এ সময় চটজলদি অন্য কাউকে বেছে নেবেন না, নিজের কথা ভুলে যাওয়ার জন্য। এতে ওই লোককে প্রতারণা করা হবে। নিজেও শান্তি পাবেন না।

*    বিরহের গান শুনুন, বেদনাবিধুর ছায়াছবি দেখুন।

*    নিজের বাসাকে ‘লাভ-ডিটক্স’ সেন্টার হিসেবে বানান (যেমন আমরা মাদকাসক্তি চিকিৎসায় মাদক ডিটক্স সেন্টার গড়ি)। প্রেমের টক্সিন ধীরে ধীরে কেটে গেলে, বাস্তব জগতে নতুনভাবে অভিভূত হোন।

*    এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিন—ব্যর্থ সম্পর্ক শুধু কষ্ট দেয় না, আমরা এ থেকে জীবনের উৎকৃষ্ট শিক্ষাও নিতে পারি। নিজেকে পুনর্নির্মাণ করার ভুল শুধরে আগে উত্তম, আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার এটি বড় সুযোগ। প্রতিটি ব্যর্থতা আমাদের সফলতার একেকটি সোপান। লেবু থেকে লেমনেড পানীয় তৈরি করতে শিখুন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।