গলায় পিন আটকে গেলে...

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রুমি আক্তার হিজাবের একটি পিন দিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছিলেন। পেছন থেকে একজন ধাক্কা দেয়। পিন চলে যায় শ্বাসনালিতে। প্রথমে ব্যথা তেমন না হলেও দু-তিন দিন পর কাশি শুরু হয়। বরিশালে এক্স-রে করে দেখেন, শ্বাসনালির নিচের দিকে পিন আটকে আছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রুমির বুকে অস্ত্রোপচার করে সেই পিন বের করা হয়। 

শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই শ্বাসনালিতে বিভিন্ন জিনিস আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অসতর্কতার ফলে বড়দেরও হয়। শ্বাসনালির ওপরের দিকে থাকলে বের করে আনা সহজ হয়। কিন্তু ভেতরের দিকে অর্থাৎ ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেলে তা ভয়ংকর হতে পারে। অবস্থা খারাপ হলে বুকে অস্ত্রোপচার এমনকি ফুসফুসও কেটে ফেলতে হতে পারে। 
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিদিনই শ্বাসনালিতে কোনো বস্তু আটকে যাওয়া রোগী ভর্তি হয়। মাগুরার আট বছরের সিয়াম মোল্লা ভর্তি হয়েছিল শ্বাসনালিতে বাঁশির পেছনের অংশ নিয়ে। হাসপাতালে তাঁর মা শারমিন আক্তার বলেন, ‘কুরবানির দুই দিন আগে পুতুলের বাঁশির পিছের অংশ গলার ভিতরি চলি যায়। নিশ্বাসের সাথে বাঁশি বাজছিল।’ ফরিদপুর-নড়াইল-যশোর ঘুরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আসেন। গলার ভেতর থেকে বাঁশির অংশ বের করা হয়েছে। এখন সিয়াম সুস্থ। 
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান সিয়াম ও রুমির চিকিৎসা করেন। তিনি বলেন, ‘শ্বাসনালির প্রথম অংশে কিছু আটকে গেলে তা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞেরা বের করতে পারেন। নিচের দিকে চলে গেলে ক্রিটিক্যাল হয়ে যায়। ফুসফুসের কোনো অংশে চলে গেলে তার চিকিৎসা একমাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতালেই হয়।’ 
এই চিকিৎসক বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে অজ্ঞান করে ‘রিজিড এন্ডোস্কপির’ মাধ্যমে ক্যামেরা ঢুকিয়ে আটকে যাওয়া বস্তুটি বের করার চেষ্টা করেন। ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবারের চেষ্টায় বের করা যায়। না হলে দ্বিতীয়বারও একই পদ্ধতিতে চেষ্টা করা হয়। এভাবেও সম্ভব না হলে বুকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। তিনি জানান, ফুসফুসে গিয়ে যদি কিছু আটকে থাকে তখন ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট হতে থাকে। অনেক সময় ফুসফুস কেটেও ফেলতে হয়। 
২০১৬ সালে বক্ষব্যাধিতে এ ধরনের দুই শতাধিক রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এদের শ্বাসনালী থেকে পুঁতি, বাদাম-বুটের খোসা, গয়না, বোর্ড পিন, পেরেক, বাঁশির অংশ, গরুর হাড়সহ নানা জিনিস তাঁরা বের করেছেন। এ বছর পিন আটকে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পিন সূক্ষ্ম হওয়ায় তা বের করতে হয় সাবধানে। ভেতরে গেঁথে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সতর্কতা: 
* মুখের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে কথা না বলা। 
* বাচ্চাদের মুখে খাবার দিয়ে হাসানোর চেষ্টা না করানো। 
* বাঁশি উল্টো করে ফুঁ না দেওয়া। 
* বাচ্চাদের সামনে গয়না না রাখা। 
* পিন মুখে না নেওয়া। 
* যদি বোঝা যায় যে কোনো কিছু শ্বাসনালির নিচের দিকে চলে গেছে, তাহলে সরাসরি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চলে আসা।