কর্মক্ষেত্রে বড়-ছোট সম্পর্ক

কর্মক্ষেত্রে ছোট–বড় সবার সঙ্গে ইতিবাচক ব্যবহার দরকার। ছবি: অধুনা
কর্মক্ষেত্রে ছোট–বড় সবার সঙ্গে ইতিবাচক ব্যবহার দরকার। ছবি: অধুনা

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান খান (ছদ্মনাম)। কাজের দক্ষতার জন্য অল্প বয়সে পদোন্নতি পেয়ে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কাজ করছেন। জিল্লুর রহমান খান তাঁর চেয়ে বয়সে বড় কিংবা বয়সে ছোট অনেক সহকর্মীর সঙ্গে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজ করেন। তবে মাঝেমধ্যে নিজের অফিসেই সহকর্মীদের বড়-ছোট দ্বন্দ্বে তাঁকে বিচারকের ভূমিকা পালন করতে হয়। তিনি জানান, অনেক সময় বয়সে বড় কেউ তার বয়সে ছোট কিন্তু পদে বড় এমন কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। আবার বয়সে ছোট অনেকেই বয়স কিংবা পদে জ্যেষ্ঠদের সঙ্গে বেশ দুর্ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রে এমন বিরোধ হরহামেশাই দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে যাঁরা সম্পৃক্ত, তাঁদের ইতিবাচক পেশাদারি ও মানবিক আচরণেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। 

সাবেক বিতার্কিক মাহফুজ মিশু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই বয়সে কিংবা পদে বড়-ছোট অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন। পেশাজীবনে কখনো কখনো অন্যের অধীনে কাজ করেছেন আবার কখনো নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে আমরা নানান বয়সের মানুষের সঙ্গে কাজ করি। পেশাজীবনে বড়-ছোট সম্পর্কের কারণে অনেক বিপত্তি ঘটে। আপনি কতটা দক্ষভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে আপনি কীভাবে সমস্যার সমাধান করছেন।’

শুধু স্থানীয় প্রতিষ্ঠান নয়, আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানেও বড়-ছোট সম্পর্কের কারণে বিরোধের ঘটনা ঘটার কথা শোনা যায়। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়ায় ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক সম্পর্কের সূত্রে বিরোধ নিষ্পত্তিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে অনেক সময় ব্যাপারটা উল্টো দেখা যায়। আমরা অভিযোগ করতে বেশ পছন্দ করি। যা আসলে নিজের পেশাদারিত্বের দুর্বলতা প্রকাশ করে।

কর্মক্ষেত্রের সুস্থ পরিবেশ তৈরির জন্য বড়-ছোট সম্পর্ককে ইতিবাচক হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ এস এম আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বয়সে বড় কিংবা ছোট বিষয়টি আপেক্ষিক। কে কত ভালো কাজ করছে, কে কতটা দক্ষ নির্বাহী ও পেশাজীবী—এ ধরনের সংকটের সময় তা বোঝা যায় ।

এস এম আরিফুজ্জামান কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। 

বয়সে বড় হলে

 যেকোনো সমস্যায় পেশাদার আচরণ ও নিজের ব্যক্তিত্বের ছাপ রাখুন। সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিন। সমস্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা মানবসম্পদ বিভাগে হইচই করার প্রচলিত অভ্যাস দূর করুন।

ছোটদের আচরণে বিরক্ত না হয়ে তাদের মনন ও ধ্যানধারণা বুঝে চলার চেষ্টা করুন।

বয়সে ছোট হলে

সব সময় ‘গ্রোথ মাইন্ড সেট’ বা সৃজনশীল মনন বিকাশে গুরুত্ব দিন।

সবকিছুকেই অভিজ্ঞতা ভেবে কাজ শেখা ও বোঝার চেষ্টা করুন।

যেকোনো সমস্যায় পেশাজীবনে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিন।

বয়সে ছোট কিন্তু পদমর্যাদায় জ্যেষ্ঠ

আপনার অধীনে বয়সে বড় কেউ কাজ করলে তাঁকে বোঝার চেষ্টা করুন। তাঁর সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করুন।

‘কম বয়সে দুনিয়া জয় করে ফেলেছেন’, এমন মনোভাব মন থেকে দূরে রাখুন।

পদমর্যাদার সম্পর্কের চেয়ে শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তোলাই নেতৃত্ব বিকাশ, তা মনে রাখুন।

যেকোনো বিরোধে ইতিবাচক ও সংযত আচরণ প্রকাশ করুন।

বয়সে বড় কিন্তু পদমর্যাদায় ছোট

বয়সে ছোট বলেই যে কেউ ভালো কাজ করতে পারে না, এমন মনোভাব নিজের মধ্য থেকে দূর করুন।

বয়সে ছোট পদমর্যাদায় আপনার চেয়ে বড় কারও সঙ্গে বিরোধ ঘটলে চেষ্টা করুন আপনার অবস্থান ও মতামত তাকে বুঝিয়ে বলার। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করুন।

বয়সে ছোটরা অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে ভুল করে ফেললে তাকে বুঝিয়ে বলুন।