১০ মাস বয়সেই ওজন ২৮ কেজি!

পরিবারের সঙ্গে লুইস। চেয়ারে বসা। ছবি: এএফপি
পরিবারের সঙ্গে লুইস। চেয়ারে বসা। ছবি: এএফপি

প্রায় ১০ মাস আগে মেক্সিকোর কোলিমায় দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ইসাবেল প্যানতোজা। জন্মের সময় তাঁর এই শিশুর ওজন ছিল সাড়ে তিন কেজি। প্যানতোজার তিন বছর বয়সী বড় ছেলে মারিও একই ওজন নিয়ে জন্মেছিল। ২৪ বছর বয়সী এ মা খুব সাধ করে তাঁর দ্বিতীয় শিশুটির নাম রেখেছিলেন লুইস ম্যানুয়েল। এখন সেই লুইসকে নিয়েই প্যানতোজার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, ১০ মাস বয়সী লুইস বিশ্বের সবচেয়ে স্থূলকায় শিশু!

বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলার সময়। ছবি: এএফপি
বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলার সময়। ছবি: এএফপি

২ মাস বয়সে লুইসের ওজন ছিল ১০ কেজি। এর ৮ মাস পর, মানে এখন শিশুটির ওজন ২৮ কেজি! স্থূলকায় লুইসের সঙ্গে শারীরিক আয়তনে তাঁর বড় ভাইও নস্যি। ১০ মাসেই শিশুটির যে ওজন, সেটা আসলে ৯ বছর বয়সী বাচ্চার সমান। প্যানতোজা তাই ভীষণ চিন্তিত। এই বয়সেই এমন বিশাল শরীর হয়ে যাওয়ায় তাঁর দ্বিতীয় শিশুটি শেষ পর্যন্ত সুস্থ-সবল হয়ে বাঁচতে পারবে তো?
লুইসকে নিয়ে প্যানতোজা ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকদের কাছে লুইসের এই ‘অতি বাড়ন্ত’ শরীরের কোনো ব্যাখ্যা নেই। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, শিশুটি হয়তো ‘প্রাদের-উইলি সিনড্রোম’ রোগে ভুগছে। জিনগত এ রোগের বৈশিষ্ট্য হলো, সব সময় প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগবে এবং মাংসপেশি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু লুইস খাওয়ার ব্যাপারে মোটেও পেটুক-প্রকৃতির নয় এবং এই বয়সে একটি শিশুর যেটুকু স্বাভাবিক খাবার, সেটুকুই সে গ্রহণ করে থাকে। তাহলে?

২৮ কেজি ওজনের শিশুকে বহন করতে বেশ কষ্টই হয় মারিওর। ছবি: এএফপি
২৮ কেজি ওজনের শিশুকে বহন করতে বেশ কষ্টই হয় মারিওর। ছবি: এএফপি

সাহায্যের হাত বাড়ালেন শিশু পুষ্টিবিদ এবং সার্জন সিলভিয়া ওরোজকো। প্যানতোজার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি শিশুটিকে প্রথমে পা থেকে মাথা পর্যন্ত নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওরোজকোর কাছে মনে হয়েছে, শিশুটির জীবন বিপন্ন। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর টিস্যু পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান না। তবে এই শিশু চিকিৎসক মোটামুটি এটুকু নিশ্চিত যে ‘প্রাদের-উইলি সিনড্রোম’ নয়, প্যানতোজা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁর শরীরে নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টির অভাব ছিল। এ কারণে শিশুটির গ্রন্থিগুলো স্বাভাবিক নয়। তবে ওরোজকোর ধারণাটা ঠিক না ভুল, তা নিশ্চিত হবে টিস্যু পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর। শেষ পর্যন্ত তাঁর ধারণা ঠিক হলে লুইসকে বাঁচাতে অবশ্যই কিছু হরমোন ইনজেকশন দিতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিটি ইনজেকশনের দাম ৫৫৫ ডলার। একটি জুস তৈরির প্ল্যান্টে কাজ করা লুইসের বাবা মারিও গঞ্জালেসের মাসিক আয় মাত্র ২০০ ডলার। টেনেটুনে না হয় লুইসের ইনজেকশনের টাকাটা জোগাড় করা গেল কিন্তু সংসার চলবে কীভাবে? বাবা-মা কিন্তু হাল ছাড়েননি। বুকের মানিককে বাঁচাতে প্যানতোজা-গঞ্জালেজ দম্পতি এরই মধ্যে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে সবার আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা শুরু করেছেন। 

শুধু চেয়ারে বসে থাকা কিংবা শুয়ে থাকা ছাড়া লুইস আর কিছুই করতে পারে না। এমনকি হামাগুড়িও না! ছবি: এএফপি
শুধু চেয়ারে বসে থাকা কিংবা শুয়ে থাকা ছাড়া লুইস আর কিছুই করতে পারে না। এমনকি হামাগুড়িও না! ছবি: এএফপি

আপাতত সপ্তাহে চার দিন করে লুইসকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে নিয়ম করে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকেরা। লুইসের শরীর থেকে রক্ত নিতে প্রতিবারই হন্যে হয়ে শিরা খুঁজতে হয় নার্সদের। বাবা হয়ে এমন দৃশ্য মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয় গঞ্জালেসের। তাঁর ভাষ্য, ‘নার্সরা যখন ওর মোটা মোটা হাতের শিরা খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেই দৃশ্য দেখতে খুব খারাপ লাগে।’
পৃথিবীতে শিশুদের স্থূলতা ও ডায়াবেটিস হওয়ার হারে মেক্সিকো সবচেয়ে এগিয়ে। প্যানতোজা-গঞ্জালেস পরিবারের দ্বিতীয় সন্তানটি এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু সেই ‘উদাহরণ’টি যাঁরা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যাঁরা লুইসকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন, সেই মা-বাবার ব্যথার ভাগ নেবে কে, দেশ নেবে? সূত্র: এএফপি, এনজেড হেরাল্ড, বিবিসি।