শুরু থেকেই ত্বকের যত্ন...

কৈশোরে ত্বকের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস পরেও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। মডেল: ফাবিহা ও দৃনা, কৃতজ্ঞতা: িবন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: সুমন ইউসুফ
কৈশোরে ত্বকের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস পরেও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। মডেল: ফাবিহা ও দৃনা, কৃতজ্ঞতা: িবন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: সুমন ইউসুফ

উফ! মাকে নিয়ে আর পারা গেল না। একবার বলছে ত্বক এই বয়সে এমনিতেই ভালো থাকে। বেশি কিছু করার দরকার নেই। আরেকবার বলছে ত্বকের যত্ন নিচ্ছি না কেন? কোনটা করব?

কিশোরী বা টিনএজারদের এমনিতেই কিছু বলা যায় না। তার ওপর নিজের যত্ন কীভাবে নিতে হবে, সে বিষয়ে জ্ঞান দিতে যাওয়ার আগে দূরত্ব বজায় রাখাটা নিরাপদ। তবে বিষয়গুলো একটু বুঝিয়ে বললে মনে হয় না খুব বেশি না-বুঝ হবে। কিশোরী বয়স থেকেই ত্বকের ধরন বোঝা যায়। ত্বকের ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও এই বয়সে ত্বকের গুণগত মান থাকে সবচেয়ে বেশি। টুকটাক যত্ন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত এই বয়স থেকেই। কারণ আর কিছুই নয়, এখন থেকে যত্ন নিলে ত্বক ভালো থাকবে সারা জীবন। অন্তত বিশেষজ্ঞদের এমনই মত।

সাধারণ ত্বক

সাধারণত এ ধরনের ত্বক তেমন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করে না। মুখে দাগ থাকে না, রং মসৃণ হয়, হাসলে চেহারায় লালচে ভাবও খেলে যায়। ঘাম, ধুলা ধুয়ে ফেলতে দিনের মধ্যে তিনবার অন্তত পানি দিয়ে চেহারা পরিষ্কার করে ফলেতে পারেন। এ বয়স থেকেই ঋতু বুঝে ত্বকের যত্ন নিলে খুব একটা ঝামেলায় পড়বে না ভবিষ্যতে, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। পানি পান করতে হবে বেশি করে।

শুষ্ক ত্বক

ত্বকের ছিদ্রগুলো বড় থাকে, চুলকায়—শুষ্ক ত্বক এমনই। বেশি ঘষামাজা করতে গেলে আবার কুঁচকে যায়। সঙ্গে ত্বকের রুক্ষতা তো আছেই। এমন কিছু সমস্যা নিয়েই চলতে হয় শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের। আমরা দেখলে বলি ত্বকের যত্ন নেয় না, তাই ত্বকের এই অবস্থা। এটা বুঝতে পারি না যে ত্বকের ধরনটাই শুষ্ক। কিশোরী বয়স থেকেই ঝামেলায় পড়তে হয়। গোসল করার আগে তেল দিয়ে খুব ভালোভাবে মালিশ করে গোসল করে ফেলুন। ত্বকে আর্দ্রতা থাকবে। তবে এ ধরনের ত্বকে ভুলেও সুগন্ধযুক্ত কিছু ব্যবহার করতে যাবেন না। স্ক্র্যাবার ব্যবহার করা যাবে। গোসলের পর শরীর ভেজা থাকা অবস্থায় লোশন ব্যবহার করুন। ত্বক যদি খুব শুষ্ক হয় তাহলে প্রতিদিন ২০ মিনিট গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। ধীরে ধীরে ত্বকের অস্বস্তি কেটে যাবে।

ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁটেরও যত্ন নিতে হবে
ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁটেরও যত্ন নিতে হবে

তৈলাক্ত ত্বক

এ ধরনের ত্বকের জন্য অভিযোগের তালিকা তৈরি হয়েই থাকে। ব্রণ, ত্বকের ছিদ্র বন্ধ থাকা, ত্বকে চকচকে ভাব, ব্ল্যাকহেডস, চিটচিটে অনুভব ইত্যাদি...ইত্যাদি। কিশোরী বয়সে হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তনগুলো আরও বেশি অসুবিধায় ফেলে। যেমন—কিশোর বয়সে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণ হয়। এ কারণে শুরু হয়ে যায় বেশি চিন্তা করা। ফলাফল আরও বেশি ব্রণ।

এ সময় মন-মেজাজ ভালো রাখার পরামর্শ দিলেন আফরোজা পারভীন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সাবানের ব্যবহার বা ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ ব্যবহার, ক্লিনজিং প্যাক ব্যবহার ভালো উপকার দেবে। ব্যাগের মধ্যে রাখা যেতে পারে। দুপুরের দিকে আরেকবার মুখটা ধুয়ে নিতে পারেন। ব্রণ হলে নখ দিয়ে খোঁটা যাবে না। সংক্রমণ হয়ে যায়। এ ছাড়া শসার রস দিয়ে চেহারা পরিষ্কার করতে পারেন। নিম পাতার পানি জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। সময়মতো তুলোয় নিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এতে করে তেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মিশ্র ত্বক

কপাল, নাক আর থুতনি জায়গাটুকু তৈলাক্ত, চেহারার বাকি অংশ শুষ্ক। এ যেন পৃথিবীর তিন ভাগ পানি এক ভাগ মাটির মতো অবস্থা। এক জায়গা থেকে চামড়া ওঠে, আরেক জায়গা থেকে তেল। ত্বকের শুষ্ক জায়গায় ক্রিম ব্যবহার করুন। পানি বা সাবান অথবা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে চেহারার শুষ্ক জায়গায় ক্রিম লাগাতে হবে ঝটপট।

চুল

ত্বক ও মাথার চামড়ার ধরন একই রকম হয়ে থাকে। আফরোজা পারভীন বলেন, ‘মাথার ত্বক শুষ্ক হলে চুল হবে রুক্ষ, শুষ্ক ও কোঁকড়ানো। ত্বক তৈলাক্ত হলে চুল হবে সোজা ও সিল্কি। ধরন বুঝে যত্ন নিতে হবে চুলের।’

মাথার ত্বকের ধরন বুঝে চুলের যত্ন চাই
মাথার ত্বকের ধরন বুঝে চুলের যত্ন চাই

শুষ্ক চুলে সপ্তাহে চার দিন মাথায় তেল দেওয়া, শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনার ব্যবহার করা আবশ্যক। তৈলাক্ত ত্বকে আর তেল দেওয়ার দরকার নেই। অনেক বেশি গরমে না থাকাই ভালো। না হলে তেল নিঃসরণ হবে বেশি। প্রতিদিন মানানসই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল থাকবে ঝরঝ‌রে। কন্ডিশনার যদি ব্যবহার করতেই হয়, মাসে একবার লাগাতে পারেন।

সাধারণ ত্বকের ঢেউখেলানো চুলের জন্য সপ্তাহে এক-দুই দিন তেলের মালিশ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ব্লো ড্রাইয়ের ব্যবহার চুলকে রাখবে ঝরঝরে।

রূপবিশেষজ্ঞ শারমীন কচি তুলে ধরলেন ভিন্ন কিছু সমস্যার কথা। খেয়াল রাখতে হবে যে অতিরিক্ত তেল, মসলাসহ খাবার খেলে ব্রণের আক্রমণ হয়। র‌্যাশ দেখা যায়। এরপর শুরু হয়ে যায় ত্বকের ওপর খোঁচাখুঁচি। পুরস্কার হিসেবে দাগ বসে যায় ত্বকে। বাড়িতে ডিপ ক্লিনজিং করে নিতে পারেন কয়েক দিন পরপর। কিংবা সময় পেলে সপ্তাহে একদিন। ১৫ মিনিট পর্যন্ত বৃত্তাকারভাবে, ওপর থেকে নিচে, নিচে থেকে ওপরের দিকে আলতোভাবে মালিশ করার মাধ্যমে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে পারে। ব্যবহার করা যাবে ভেষজ উপকরণ, ক্রিম, সুজির স্ক্র্যাবার, ভালো মানের ক্লিনজার। এর জন্য সৌন্দর্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিশোরীদের এমনিতেই ও পথে না যাওয়াই ভালো। মুখের দুপাশে এক হাত ব্যবহার করে অথবা দুই হাত ব্যবহার করা যাবে এ সময়। স্টিমও নিতে পারেন। তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন ভালোভাবে। এবার সেটা মুখের ওপর ফেলে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। এতে ব্ল্যাকহেডস কমে যাবে। বাজারে পাওয়া যায়, এমন ভালো মানের প্যাক লাগাতে পারেন। এ ছাড়া মুলতানি মাটি, বেসন দিয়ে বানানো যেকেনো প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

পেট পরিষ্কার না হলে ত্বকের ওপর এর প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত কনস্টিপেশন হলে বাবা-মাকে জানানো উচিত। না হলে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হবে। বাইরে থেকে বাড়িতে ঢুকে মুখ পরিষ্কার করে বরফ লাগানো যেতে পারে। পানির সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে বানানো বরফের ব্যবহার ত্বকের ওপর পোড়া ভাব স্থায়ীভাবে বসতে দেবে না। খুশকি হয়? টক দই পানির সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানান। তালুতে ৩০ মিনিট লাগিয়ে বই পড়ুন, গান শুনুন কিংবা ছবি দেখতে বসে যান ৩০ মিনিটের জন্য। এরপর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে ফেলুন। মরা চামড়া উঠে আসবে। শ্যাম্পু করে, কন্ডিশনার লাগালেই চুল ঝরঝরে। নিয়মিতভাবে চুল আঁচড়াতে হবে। এতে করে ময়লা ঝরে পড়বে।

 এই বয়সে মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না। জানালেন শারমীন কচি। সামনে অনেক সময় আছে। মেকআপ ত্বকের চামড়া সময়ের আগেই বুড়িয়ে (ম্যাচিওর) দেয়। খুব ইচ্ছা করলে ক্রিম ব্যবহারের পর সাধারণ সাদা পাউডার লাগানো যাবে। একটু লিপজেল। খুব বেশি হলে হালকা কাজল। ব্যস শেষ। ত্বক ভালো থাকলে যেকোনো বক্তিকেই সুন্দর লাগে। ত্বকের যত্ন এখন থেকে নিলে ত্বকও মনে রাখবে সে কথা। ফলাফল সুস্থ থাকবে ত্বক, সুন্দর দেখাবে আপনাকে।

প্যাক ব্যবহারে ত্বক ভালো থাকবে
প্যাক ব্যবহারে ত্বক ভালো থাকবে