শীতের খেলা...

বছর ঘুরে শীতের মৌসুম এলেই ফেলে রাখা শাটল কর্কের ধুলো মুছে যায়। কুয়াশা ঘেরা সকালে কিংবা সন্ধ্যায় বাজতে থাকে সাইকেলের টুংটাং। কেননা, এই সময়টাই তো বিভিন্ন খেলাধুলার। বাড়ির সামনের জায়গায় কিংবা স্কুলের মাঠে জমে যায় নানা মৌসুমি খেলার আসর। শিশু, কিশোর কিংবা তরুণদের আগ্রহ দেখা যায় সমান তালে। শীত পড়তে না–পড়তেই শুরু হয়ে গেছে মৌসুমি খেলার বিভিন্ন আয়োজন।
শীত এলেই জমে ওঠে ব্যাডমিন্টন। ছবি: নকশা
শীত এলেই জমে ওঠে ব্যাডমিন্টন। ছবি: নকশা


ব্যাডমিন্টন

শুরুতেই বলা চলে ব্যাডমিন্টনের কথা। ক্রিকেট অথবা ফুটবলের মতো সারা বছর এর জনপ্রিয়তা না থাকলেও শীতের সময়ে এটিই হয়ে ওঠে প্রধান খেলা। শীতের সোনালি বিকেলে কিংবা কুয়াশামাখা সন্ধ্যায় বসে যায় এই খেলার আয়োজন। খেলা তো বটেই, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের র‍্যাকেট সংগ্রহের প্রতিও তৈরি হয় অনেকের ঝোঁক।

এর সুবিধা হলো একটু খালি জায়গা পেলেই তৈরি করে নেওয়া যায় ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। হোক সেটা নিজ বাড়ির আঙিনায় কিংবা কোনো খেলার মাঠে। এ ছাড়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও এটি বেশ উপকারী। আপনি যখন ব্যাডমিন্টন খেলছেন তখনই আপনার ফুসফুস এবং হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সচল পেশি, মজবুত হাড়ের গঠনে এবং ডায়েটের ক্ষেত্রেও করে উপকার—এমনটাই জানালেন ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞ কুশাল জয়।

টেবিল টেনিস

সহজেই এবং অল্প জায়গায় খেলতে পারেন টেবিল টেনিস। বাসায় কিংবা সিঁড়িঘরে যদি মেলে একটু ফাঁকা জায়গা, তাহলে অনায়াসেই বসিয়ে নিতে পারেন টেনিসের টেবিল। খেলার জন্য শুধু একজন সঙ্গী হলেই হবে। মাত্র দুজন খেলোয়াড় এবং একটি টেবিল, বল এবং র ব্যাট জোগাড় হয়ে গেলেই এ খেলা শুরু করা যায়। এই সরঞ্জামগুলো পাওয়া যাবে স্পোর্টস শপে। বসুন্ধরা শপিং মলের মুস্তফা মার্টের বিক্রেতা সামিয়া সুলতানা বলেন, ‘ঘরেই টেবিল টেনিস খেলতে চাইলে একটু ছোট টেবিল নেওয়া ভালো। তবে আন্তর্জাতিকভাবে টেবিল টেনিসের এই সরঞ্জামগুলোর নির্দিষ্ট একটি মাপ রয়েছে। আপনি চাইলে নিজ সুবিধা অনুযায়ী মাপ দিয়েও তৈরি করে নিতে পারেন টেবিল এবং ব্যাট। ব্যাডমিন্টনের মতোই আপনার হাড়ের গঠন, স্বাভাবিক রক্ত চলাচল, ফুসফুসের অধিক কার্যক্ষমতায় এটি বেশ উপকারী।

দুই চাকার সাইকেলেও ক্লান্তি ধরে না শীতল হাওয়ায়
দুই চাকার সাইকেলেও ক্লান্তি ধরে না শীতল হাওয়ায়


সাইক্লিং

সারা বছর সাইকেল চালানো হলেও শীতে যেন এর আনন্দটা একটু বেশি পাওয়া যায়। হিম শীতল সকাল কিংবা সন্ধ্যাই যেন এর অন্যতম কারণ। সূর্যি মামার তাপ থাকে না বলে ক্লান্তিও যেন ভর করে অনেক কম পরিমাণে। আজকাল বড় রাস্তাগুলোয় কিংবা অলিগলিতে দল বেঁধে সাইকেল চালানো সহজেই চোখে পড়ে। সবাই মিলে সাইকেল চালানোর আনন্দ তো আছেই, সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যায়ামটাও যে একই সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আপনার অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় থেকে শুরু করে বহুমূত্র রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, পেশির ব্যথা সহজেই নির্মূল হয়। তাই কুশাল জয় বলেন, ‘সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন অন্তত ৩০ মিনিট হলেও সাইক্লিং করা উচিত’। তাই দল বেঁধেই হোক কিংবা আপন পথে একাকীই হোক—শুরু করে দিন সাইকেল চালানো।

এ ছাড়া

এগুলো ছাড়াও দড়িলাফ, স্কেটিং, ক্রিকেট—এই খেলাগুলোও কিন্তু রয়েছে তালিকায়।

মনে রাখুন

  •  খেলার সরঞ্জাম এবং নিয়মাবলি স্পোর্টস শপ থেকেই জেনে নিন। সেই অনুযায়ী ঘর কিংবা বাইরে ব্যবস্থা করুন।
  •  টেনিস কোর্ট, সাইকেল কিংবা বিভিন্ন র‍্যাকেটের ১ থেকে ৬ মাসব্যাপী বিনা মূল্যে সার্ভিসিংয়ের সুবিধা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকমতো বুঝে নিন।
  •  আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে সেই অনুযায়ী পোশাক ও টুকিটাকি বেছে নিন। এখন যেহেতু শীতকাল তাই সাইক্লিংয়ের সময় গরম কাপড়, পানির পট সঙ্গেই রাখুন।
  •  যাদের হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা কিংবা আগে থেকেই কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে, তারা প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।

যেখানে পাবেন

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, আজিজ সুপার মার্কেট, পুরান ঢাকা, পুরানা পল্টন, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডের অনেক দোকানেই পাওয়া যাবে খেলাধুলার বিভিন্ন সরঞ্জাম। একেক ক্ষেত্রে খরচাপাতি পড়বে একেক রকম। যেমন টেবিল টেনিস কোর্টের জন্য পড়বে ১২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাডমিন্টনের জন্য খরচাপাতি পড়বে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যেই।