বেথুলি গ্রামের বটবৃক্ষ

প্রাচীন এই বটগাছটি আপনাকে মোহিত করে রাখবে। ছবি: লেখক
প্রাচীন এই বটগাছটি আপনাকে মোহিত করে রাখবে। ছবি: লেখক

গ্রামের নাম বেথুলি। মল্লিকপুর বা মল্লিক বাজার নামেই বেশি পরিচিত। অনেকে ডাকেন সুইতলা বলেও।

বেথুলি গ্রাম বহু আগে কুমার সম্প্রদায়ের বসতির জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানকার কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা তখন পাতকুয়া ব্যবহার করত। সেন বংশীয় কুমার পরিবারের কোনো একজনের পাতকুয়ার ওপর একদিন একটি গাছ জন্মে। ডালপালায় আভাস দেয় সেটি একটা বটগাছ। কারও কারও মতে, সে প্রায় ৩০০ বছর আগের ঘটনা। কেউ বলেন প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। বয়স নিয়ে যতই মতবিরোধ থাকুক, পুরোনো এই বৃক্ষের কাছে গেলে অবাক না হয়ে পারবেন না। বিশাল এলাকাজুড়ে ডালপালা মেলে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। দাঁড়িয়ে আছে না বলে বলা ভালো, কোথাও নুয়ে আছে আবার কোথাও শুয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বেথুলি গ্রামের বিশাল জায়গা নিয়ে বটবৃক্ষটির অবস্থান। উচ্চতা ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলি গ্রামটি পড়েছে মালিয়ট ইউনিয়নে। গ্রামটিকে নানা নামে ডাকার কারণে জায়গাটিতে পৌঁছাতে খানিকটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এলাকার পরিচিতি নিয়ে জটিলতা থাকলেও বটগাছটি নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। এমন বটবৃক্ষ এই একটিই। বিবিসি জরিপের পর ১৯৮৪ সালে গাছটিকে এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহত্তম বটবৃক্ষের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আমাদের যাত্রা শুরু হয় কমলাপুর স্টেশন থেকে। বাহনের নাম চিত্রা, যশোর হয়ে খুলনা যায় ট্রেনটি। ভোর চারটায় আমরা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর স্টেশনে নামি। শুরুতেই আমাদের গন্তব্য আগমুন্ডিয়ার রায়পুরা গ্রামের হাঙ্গার প্রজেক্টের বাংলো। এই বাংলোতে ঝিনাইদহে আমাদের আস্তানা। এখানে থেকেই আমরা ঝিনাইদহ ঘুরে বেড়াব, যাব শত শত বছরের পুরোনো বটবৃক্ষ দেখতে।
সকালে আমরা বটবৃক্ষ দেখতে এগিয়ে চললাম মাইক্রোবাসে। ১৫ মিনিট পর বিরতি। জায়গার নাম বারোবাজার। এখানে চা পান শেষে ১২ কিলোমিটারের মতো সরু পথ পার হয়ে চলে আসি বেথুলি গ্রামে। আমাদের সামনে এখন মূল ফটক। সবাই ভেতরে ঢুকি।
আমাদের চারপাশ ঘেরা একটা বটগাছ। ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ। ঘুরছি, দেখছি আর ভাবছি, কী বিশাল! শুক্রবার ছুটির দিন, তাই দর্শনার্থীও কম না। বনভোজনে দল বেঁধে এসেছেন অনেকেই। এক জায়গায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। বন বিভাগের দেওয়া স্মৃতিফলকও রয়েছে। যেখানে লেখা এশিয়ার প্রাচীন ও বৃহত্তম এই বটবৃক্ষ সম্পর্কে। গাছের গোড়ায় পূজার সামগ্রী দেখে বোঝা যায়, বটবৃক্ষটি নিয়ে শোনা গল্প বা মিথ বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা কম না। প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলাম আমরা। আদি এবং অকৃত্রিম শিল্পকর্ম যাকে বোঝায় বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম বটবৃক্ষটি ঠিক তা-ই।