সঠিক মানুষকে বলছি তো?

যাকে নিজের সব কথা বলে হালকা হচ্ছেন, ভেবে দেখুন সে কি আপনার অনুভূতির মর্যাদা দেবে? ছবি: অধুনা
যাকে নিজের সব কথা বলে হালকা হচ্ছেন, ভেবে দেখুন সে কি আপনার অনুভূতির মর্যাদা দেবে? ছবি: অধুনা

‘নিজেকে অন্যের সামনে খোলা বই হিসেবে উপস্থাপন কোরো না’ অর্থাৎ নিজেকে অন্য কারও সামনে এমনভাবে তুলে ধরা উচিত নয়, যাতে নিজের ভেতরের সব কিছু অন্য কেউ জেনে যায়। এতে নিজের ভিতটা দুর্বল হয়ে পড়ে।

মানুষের মন খারাপ হলে কিংবা কোনো কিছু অন্য কাউকে বলতে বা শেয়ার করতে ইচ্ছা হয়। এতে অনেকটা হালকাও হওয়া যায়। কেউ তার কথা আরেকজনকে বলতেই পারে। কিন্তু নির্ভর করছে সে কতটা শেয়ার করছে আর কী কথা বলছে। আবার কার কাছে নিজের কথাগুলো বলছে। যাদের কাছে বলা হলো তাদের কেউ কেউ তো সেটার সুযোগ নেয়। কিছু মানুষ সেই সমস্যা নিয়ে আবার অন্যদের সঙ্গেও আলোচনা করে। তাই সব বিষয় সবাইকে বলা উচিত নয়।

অনেকের মধ্যে একটি প্রবণতা রয়েছে, হোক তা পারিবারিক কোনো সমস্যা কিংবা কর্মক্ষেত্রের—কথাটি তৎক্ষণাৎ কাউকে না কাউকে বলে ফেলে। তখন বিবেচনায় থাকে না যে যাকে বলা হচ্ছে আসলে তাকে বলা উচিত কি না। মনের কথা শেয়ার করা ভালো, ছোটখাটো সব সমস্যা নিয়ে সব সময় আলাপ করা উচিত নয়। এতে অনেকে হয়তো সামনে সহমর্মিতা দেখাবে, পরামর্শও দেবে, কিন্তু কেউ কেউ এটিকে দুর্বলতা ভেবে সুযোগ নেবে। পেছনে গিয়ে পরচর্চা করবে।

ধরা যাক, কারও পরিবারে কোনো সদস্যের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে, তখন সে দিশেহারা হয়ে কিংবা গল্পচ্ছলে তা নিয়ে বাইরের কারও সঙ্গে আলাপ করল—এটা সে হয়তো এমনিই বলে কিংবা পরামর্শ করার জন্য শেয়ার করে। পরিবারের অন্য সদস্যরা এ জন্য তাকে অপছন্দ করতে শুরু করে এবং বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ট হতে থাকে। ফলে সম্পর্ক খারাপ হয়। কিন্তু বাইরের কাউকে না বলে যদি সে যার সঙ্গে সমস্যা তাকে বলে তবে সমস্যাটা কমে যাবে।

মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, ‘আমরা যখন কোনো সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে অথবা হালকা হতে চাই, তখন অন্য কারও কাছে কথাটা বলি। এর ভালো ও মন্দ দুটো দিকই আছে। তবে কারও সঙ্গে শেয়ার করার আগে তার মানসিকতা কেমন, সেটা বিবেচনা করা উচিত।’

কারও সঙ্গে কোনো বিষয় শেয়ার করার আগে তার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক কেমন তা দেখতে হবে। তার মানসিকতা, গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটা বুঝে নিজের কথা বলা উচিত। আবার কোনো সমস্যা হোক সেটা পারিবারিক, বন্ধুমহলে বা কর্মক্ষেত্রে—হুট করেই তা শেয়ার করতে হবে এমন মানসিকতা না রাখাই ভালো। প্রথমে নিজে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে, সেটা সম্ভব না হলে খুব কাছের কারও সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।