জাতীয় সংগীত গাইতে হবে নিয়ম মেনে

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’—আমাদের জাতীয় সংগীত। আমাদের এক অস্তিত্বের নাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ২৫ লাইনের এই গানের ১০ লাইনকে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংগীত গাওয়ার কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। দেশে জাতীয় সংগীত বিধিমালা রয়েছে। ১৯৭৮ সালে এ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালা মেনেই জাতীয় সংগীত গাইতে হবে।

জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম

জাতীয় সংগীতের পুরোটা সব অনুষ্ঠানে গাওয়ার নিয়ম নেই। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে। তবে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠানে দুই লাইন শুরুতে বাজানোর নিয়ম রয়েছে। সব বিদ্যালয়ের দিনের কার্যক্রম জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করতে হবে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের আগে শুধু চার লাইন গাইলে হবে না। গাইতে হবে পুরো জাতীয় সংগীত। রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংসদ ভবনে প্রবেশ করার শুরুতে ও শেষে পূর্ণ জাতীয় সংগীত বাজাতে হবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ যখন জাতির উদ্দেশে সম্প্রচার করা হয়, তখন সম্প্রচারের শুরু ও শেষে দুই লাইন বাজাতে হবে। রাষ্ট্রপতি যখন কোনো প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন, তখনো দুই লাইন বাজাতে হয়। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হন বা কোনো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অথবা প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন, তাহলে এসব ক্ষেত্রে তাঁদের আগমন ও প্রস্থানের সময় দুই লাইন জাতীয় সংগীত বাজানোর নিয়ম রয়েছে। বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান তাঁর রাষ্ট্রীয় বা সরকারি সফরে বাংলাদেশে এলে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করার আগে জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন বাজাতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, রাজপরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার বা সমমর্যাদার কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি যখন রাষ্ট্রপতির সালাম গ্রহণ করেন, তখন দুই লাইন বাজাতে হবে। সিনেমা হলে সিনেমা প্রদর্শনের আগে দুই লাইন বাজাতে হবে। রেডিও এবং টেলিভিশনের প্রতিদিনের কার্যক্রমের শেষেও দুই লাইন বাজানোর কথা বলা হয়েছে।

গাওয়ার সময় যা করতে হয়

জাতীয় সংগীত কোনোভাবেই ভুল গাওয়া যাবে না। একদম সঠিক উচ্চারণে এবং সুরে শুদ্ধ করে গাইতে হবে এবং গাওয়ার সময় এর প্রতি যথাযথ সম্মানও দেখাতে হবে। যখন জাতীয় সংগীত বাজানো হয় ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করা হয়, তখন উপস্থিত সবাইকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। যখন পতাকা প্রদর্শন না করা হয়, তখন সবাইকে বাদক দলের দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে এবং কারও মাথায় টুপি থাকলে খুলে ফেলতে হবে। অনেককেই বুকে হাত রেখে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখা যায়। এটি আসলে সঠিক নয়। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। সাধারণ নাগরিকদের বাইরে ডিফেন্স বা প্রতিরক্ষাÿবাহিনীর জন্য জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম পৃথকভাবে বলা হয়েছে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট