স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দায়দায়িত্ব

স্বামীকে তাঁর স্ত্রীর প্রতি আইনগত সব দায়দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু একজন স্বামী হিসেবে নয় বাবা হিসেবেও তাঁর সন্তানদের প্রতিও দায় দায়িত্ব রয়েছে। কোনোভাবেই তাঁর দায়দায়িত্ব থেকে রেহাই নেই। স্বামী বা বাবা হিসেবে তাঁর দায়দায়িত্ব পালন না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব

একজন স্ত্রীর ভরণপোষণ তাঁর স্বামীকে বহন করতে হবে। এ ভরণপোষণের মধ্যে স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ তাঁর প্রয়োজনীয় যুক্তিসংগত খরচ রয়েছে। এমনকি স্ত্রী কর্মজীবী হলেও তাঁর ভরণপোষণ দিতে হবে। যদি আইনে ভরণপোষণ কেমন দিতে হবে, কত দিতে হবে, এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি, তবে যুক্তিসংগত ভরণপোষণ দিতে হবে। এটি অনেকটা নির্ভর করে স্বামীর আয়রোজগার এবং সামাজিক মর্যাদার ওপর।

স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়া স্বামীর জন্য একটা আইনি বাধ্যবাধকতা। স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নিতে পারে। স্ত্রী যদি কর্মক্ষম হন কিন্তু স্বামী কোনো কারণে ততটা সক্ষম না হলে তখন স্ত্রী বিষয়টি নৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করতে পারেন। স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ না-ও দাবি করতে পারেন। মুসলমান স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পাওয়ারও হকদার। স্ত্রী যুক্তিসংগত কারণে আলাদা থাকলেও স্ত্রীর ভরণপোষণ দিয়ে যেতে হয়। তবে স্ত্রীকে তালাক দিলে কিংবা স্ত্রী তালাক নিলে ইদ্দতকাল ভরণপোষণ দিতে হবে।

সন্তানের প্রতি দায়িত্ব

সন্তান যদি নাবালক হয় তাঁর সব ভরণপোষণ বাবাকে বহন করতে হবে। এমনকি সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সংগত কারণে যদি সন্তানেরা কর্মহীন হন তাহলেওÿক্ষেত্রবিশেষে বাবাকে ভরণপোষণ দিতে হয়। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বাবার ওপরই সব দায়দায়িত্ব থাকবে। যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয় কিংবা স্ত্রী পৃথক সন্তানদের নিয়ে বসবাস করলেও নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে হবে সন্তানের বাবাকেই। কোনো কারণে সন্তানের ভরণপোষণ না দিলে বা দায়দায়িত্ব পালন না করলে নাবালক সন্তানদের পক্ষে পারিবারিক আদালত তাঁদের মা ভরণপোষণের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। মুসলিমদের ক্ষেত্রে ছেলের সাবালক হওয়া পর্যন্ত এবং মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ দেওয়া বাবার দায়িত্ব। কোনো কারণে যদি বিধবা হন কিংবা তালাকপ্রাপ্ত হন এবং মেয়ে যদি কর্মহীন বা সামর্থ্যবান না হন তাহলেও বাবাকে ভরণপোষণ দিতে হয়।

বিরোধ হলে

যদি কোনো কারণে স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি কিংবা বাবা হিসেবে তাঁর সন্তানদের প্রতি দায়দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে কেন তিনি পারছেন না, সেটি সবাই মিলে বসে আলাপ-আলোচনা করে বের করতে হবে। অনেক সময় বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে স্ত্রী কিংবা সন্তানদের চাহিদা অনুযায়ী ভরণপোষণ জোগাতে সক্ষম না-ও হতে পারেন। তাই বলে হুট করে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়াও উচিত নয়।

সংসারের কর্তা হিসেবে স্বামীর বা সন্তানদের বাবার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংসারের সুখ-শান্তির জন্য নিজেরাই বসে সমাধান করে নেওয়া উচিত। যদি স্বামী বা সন্তানদের বাবা ইচ্ছে করে কিংবা অবহেলা করে তাঁর দায়দায়িত্ব পালন না করেন কেবল সে ক্ষেত্রেই আইনের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সন্তানদের মনে রাখা দরকার সাবালক হওয়ার পর এবং কর্মজীবী হওয়ার পর কর্মহীন বাবাকেই উল্টো ভরণপোষণ দিতে হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।