কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না

>
মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমার বয়স ৩০ বছর। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর ধরে চাকরি করছি। একজন সহকর্মীর সঙ্গে শুরু থেকেই আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। সে বয়সে আমার চেয়ে ৫ বছরের বড়। অবিবাহিত। এরই মধ্যে আমরা একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমাদের দুজনের পরিবারের কেউই এ সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না। কারণ ওর বয়স। সে আমার চেয়ে বয়সে বড়! কিন্তু আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব না।

আমি এখন কী করতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

মেয়েটি তোমার চেয়ে ৫ বছরের বড় হলে ওর বয়স এখন ৩৫ বছর। তোমরা গত ৪ বছর খুব ভালো বন্ধু হিসেবে সময় কাটিয়েছ। হয়তো ওর পরিবারের কাঠামো, সংস্কৃতি, মূল্যবোধগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছ, তাই না? তোমার কি ওর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে? সহকর্মী কী কারণে আগে বিয়ে করেনি, তা কি জানা সম্ভব হয়েছে? ওর পরিবারের সদস্যরা কি তোমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছেন?

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে মেয়েদের বয়স তাদের স্বামীর চেয়ে বেশি হবে, এটি পরিবার সহজে মেনে নিতে চায় না। তবে অন্যান্য দেশের সমাজে এটিকে খুব বড় একটি বিষয় হিসেবে দেখা হয় না। সুস্থ দাম্পত্য সম্পর্ক সাধারণত দুজন মানুষের বোঝাপড়া, পারিপার্শ্বিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ওপরেই বেশি নির্ভরশীল। সেখানে বয়সের অল্প ব্যবধান অনেক সময়ে বাধা সৃষ্টি না-ও করতে পারে।

আমাদের দেশে যখন অত্যন্ত অল্প বয়সের মেয়েকে তার চেয়ে ২০ বা ৩০ বছরের বড় একজন মানুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, তখন পরিবার সেটি মেনে নিচ্ছে। বয়সের এ ধরনের বড় ব্যবধান থাকলে তখন দুজনের মানসিকতার খুব পার্থক্য থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক অসুবিধা হতে পারে। তুমি এখন উভয়সংকটে পড়ে গেছ তা বুঝতে পারছি। একদিকে তোমার পরিবার এবং অন্যদিকে মেয়েটির প্রতি তোমার ভালোবাসা এই জটিলতার সৃষ্টি করেছে। তুমি ভালো করে চিন্তা করে দেখো, তোমার মনের ভেতরেও কোনো দ্বিধা রয়েছে কি না। কারণ বাইরে থেকে আসা বাধাকে আমরা তখনই অতিক্রম করতে পারি, যখন আমাদের মনের ভেতরের যুদ্ধকে থামাতে সক্ষম হই।

তোমার মনের একটি অংশ যদি বলে, কেন তুমি মা-বাবাকে কষ্ট দিচ্ছ এবং এতে তুমি সুখী হবে না। আর অন্য অংশটি যদি বলে, ওকে ছাড়া তো আমি আর কারও কথা ভাবতে পারছি না, তাহলে খুবই কষ্ট হওয়ার কথা। তুমি ভেবে দেখো, মনের কোন অংশ বেশি শক্তিশালী হয়ে তোমাকে প্রভাবিত করছে, কেমন? যে অংশটি বেশি প্রভাব বিস্তার করছে, তোমাকে আবেগাপ্লুত করছে, সে অংশের কথা শুনলে ভালো হয়।

আশা করি তুমি নিজের চাওয়াটিকে ভালোভাবে বুঝে একটি সিদ্ধান্ত নেবে। পরবর্তী সময়ে যা-ই ঘটুক না কেন সিদ্ধান্তটিকে শ্রদ্ধা করবে।