শীতের দাওয়াতে খাওয়া

কনকনে ঠান্ডায় গনগনে চুলায় চলতে থাকুক রান্না। সময়টা দাওয়াতের। কারণ-অকারণ মিলিয়ে শীত তাড়াতে খাওয়াও যেন একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে এতে তেমন অপরাধবোধ কাজ করে না। বছরের এই দুটি মাসই তো। বাজারে গেলেই বোঝা যায় বেশ, জুড়িয়ে যায় চোখ-মন। তাজা শাকসবজি, ফল আর পিঠা যেন ডাকতে থাকে সমানে। বাড়ির দাওয়াতে আয়োজনটা জমানো উচিত এই সময়ের খাওয়া দিয়েই। জমকালো পোশাক পরে জম্পেশ ভোজের স্বাদ পাওয়া যাবে শীতের ঠান্ডাতেই।

দাওয়াত দিনের কোন সময়টাতে দেবেন, তার ওপর ভিত্তি করেই খাওয়ার তালিকা তৈরি করুন। ছুটির দিনে নাশতার দাওয়াত তো হতে পারেই। তাওয়ায় সেঁকা গরম আটার রুটির বা ছিটা রুটির সঙ্গে গরু বা খাসির নেহারি বা পায়া ভালো লাগবে। নান কিংবা পরোটাও রাখতে পারেন। সবজি পরোটা বানাতে পারেন। ফুলকপি, নতুন আলুর যেকোনো রেসিপিও মন্দ হবে না। ধোঁয়া বের হওয়া ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, চুঁই পিঠা, গুড় বা খেজুরের রসে তৈরি নানা ধরনের পিঠা সকালের নাশতায় বাড়তি নম্বর এনে দেবে বলে জানান রন্ধনশিল্পী সিতারা ফেরদৌস।

দুপুরের দাওয়াত বলে হালকা-পাতলা রান্না করতে হবে। এই চিন্তা দুই মাস না করলেও চলবে। রন্ধনশিল্পী ফারাহ্‌ সুবর্ণা জানালেন, সবজি পোলাও, কিমা মটর পোলাও, আস্ত বাঁধাকপি রোস্ট, বোয়াল মাছের দোপিঁয়াজি, শোল বা কই মাছের ঝুরি করতে পারেন। হাঁস এ সময়ের অন্যতম আকর্ষণ। হাঁস ভুনা থাকা কিছুটা যেন আবশ্যকই। গরুর মাংস করতে চাইলে বাঁধাকপি দিয়ে রান্না করে ফেলুন।

শীতের সময়টায় বিভিন্ন ধরনের শাক পাওয়া যায়। বেছে নিতে পারেন বুটের শাক, ছোলার শাক, মটর শাক, খেসারি শাক, পালংশাক, কলাইয়ের শাক, বতুয়া শাক থেকে। সবজি চপ বা সবজি কাটলেট, সবজির কোরমা, পাবদা, বাছা, পুঁটি, কাজলি, রুই বা কাতলা মাছ থেকে কোনোটা দিয়েও তালিকা সমৃদ্ধ করতে পারেন।

মটরশুঁটি যেকোনো রান্নায় ব্যবহার করা তো যায়ই। ধূসর সন্ধ্যায় বা বিকেলে মচমচে স্বাদ নিয়ে আসবে পেঁয়াজ দিয়ে ভাজা মটরশুঁটি। সঙ্গে রাখতে পারেন মুড়ি। ধনেপাতা দিয়ে বরইভর্তা কিংবা চুলায় ভুট্টা সেঁকে ওপরে ছিটিয়ে দিন চাট মসলা, ধনেপাতা। ঝাল খেতে পছন্দ করলে কাঁচা মরিচ বাটাও দিতে পারেন। এ ছাড়া ফুলকপির পাকোড়া, ভেজ পানতারাশ, নতুন আলুর ওয়েজেস, খেজুর গুড়ের দুধ লাউ, বাঁধাকপির পায়েস, তেলে ভাজা পিঠা ইত্যাদি। বিকেলের মধ্যেই পিঠার পাট চুকিয়ে ফেলার ওপর জোর দিলেন সিতারা ফিরদৌস। এত কিছুর পর এক কাপ চা না হলেই নয়। ভিন্নতা আনতে খেজুর গুড়ের চা মন্দ হবে না।

স্যুপও কিন্তু এই সময়ের জন্যই। পালংশাকের স্যুপ, টমেটো স্যুপ, সবজি স্যুপ সন্ধ্যা কিংবা রাতের খাবার আগে পরিবেশন করতে পারেন। রাতের শিরশিরে বাতাসে খাওয়াটা হালকা ভারীর দিকে যেতেই পারে। এ তালিকায় সবজি পোলাও, কিমা মটর পোলাওয়ের বাইরে সবজি বিরিয়ানি বা মটরশুঁটি পোলাও রাখতে পারেন। টমেটো, ফুলকপি বা বাঁধাকপির দোলমা, রোস্ট বা কোরমা ভালো লাগবে। ফুলকপি বা ওলকপি, টমেটো দিয়ে বড় মাছের কোনো পদ করা যায়। বিভিন্ন সবজির খোসা দিয়ে ভর্তা বা টমেটোর চাটনি অনেকটাই বাধ্যতামূলক। হাঁসের মাংস এ বেলাতেও রাখতে পারেন। ভাত বা পোলাওর সঙ্গে নান বা পরোটা রাখতে পারেন। রাতের মিষ্টি আয়োজনে গাজরের হালুয়া বা কেক, কমলার কেক, গরম ব্রেড পুডিং, আপেল ক্রামবেল পাই ইত্যাদি রাখতে পারেন।

শীতে দাওয়াত চলতে থাকুক। বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে সেসব উপাদান নিয়েই রান্নায় ভিন্নতা নিয়ে আসুন।