পল্টারিং: সত্য যখন মিথ্যার সমতুল্য

সুজন এমনিতে ছাত্র ভালো। ইশকুলে নিয়মিত যায়। ক্লাস কামাই দেয় না। মাঝেমধ্যে টুকটাক মিথ্যে বলে এই যা। ঠিক মিথ্যাও নয়; একটু কায়দা করে সত্যটা আড়াল করে। 

কোনো দিন হয়তো মা বললেন, ‘কি রে হোমওয়ার্ক করেছিস?’
সে হয়তো বলে, ‘ইংরেজি ক্লাসের জন্য শেক্‌সপিয়ারের ওপর একটি রচনা লিখেছি।’

সুজন মিথ্যা বলেনি। কিন্তু সে হোমওয়ার্ক করেছে কি না, এটা তার উত্তর নয়। রচনাটি সুজন অনেক দিন আগেও লিখে থাকতে পারে। সে সত্য দিয়ে তার মাকে মিথ্যা বার্তা দিয়েছে। সে হয়তো হোমওয়ার্ক শুরুই করেনি।

বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনাল খুদে বার্তা দেখে কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের কোনো অফার গ্রহণ করার পর দেখা গেল আগের কলরেট সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। অফারটি নিলে যে আগের প্যাকেজের সুবিধা থাকবে না—এমন তথ্য জানানো হয় না। আর বিজ্ঞাপনে শর্ত প্রযোজ্যে কখনো বা উল্লেখ করা হলেও শর্তগুলো জানতে চোখের সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয়। এই কৌশলে ভোক্তাদের কাছে যেভাবে মিথ্যা বার্তা যায়, তা মহাভারতের ‘অশ্বত্থামা হতঃ-ইতি গজ’ বাক্যটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইতি গজ শব্দটি আস্তে বলায় দ্রোণাচার্য ভেবে বসেন, তাঁর ছেলে অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে, হাতির নয়।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শো রুমে গেলে বিক্রেতা বিক্রির জন্য তাঁর গাড়ির ভালো দিকগুলোর বিস্তারিত বয়ান দেবেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগেই গাড়িটি যে বিকল হয়ে গিয়েছিল—সেই তথ্য তিনি চেপে যাবেন। গাড়ির ভালো দিকগুলো নিয়ে তিনি যা বলছেন তা হয়তো সত্য। কিন্তু এই সত্য দিয়েই তিনি আরেক সত্যকে (গাড়ি বিকল হওয়ার কথা) আড়াল করে আপনাকে মিথ্যা বার্তা দেন।

প্রাত্যহিক জীবনে ‘সত্য’ বলার মধ্য দিয়ে ভুল পথে চালিত করার এই কৌশল প্রকট হয়ে উঠেছে। এই কায়দাটি সম্প্রতি ‘পল্টারিং’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ‘পল্টারিং’ নামের এই কূটকৌশল সমাজে এতটাই ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে যে সত্য-মিথ্যার সীমারেখায় আমাদের গভীর দৃষ্টি দিতে হচ্ছে। 

ব্যক্তিপর্যায়ের ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা খাত, কূটনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি ময়দান—সর্বত্রই চলছে এই কৌশল। সাম্রাজ্যবাদীরা লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফি ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তারা দুজনের খারাপ দিকগুলোকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে ঢালাওভাবে। কিন্তু তাঁদের শাসনামলের ভালো দিকগুলো চেপে গেছে কৌশলে। দুজনের খারাপ দিকগুলো হয়তো সত্য। কিন্তু সেটাই চূড়ান্ত বাস্তবতা নয়। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইএ কর্মকর্তা জন নিক্সন। ২০১৬ সালে নিক্সন তাঁর প্রকাশিত বই ‘ডিব্রিফিং দ্য প্রেসিডেন্ট: দ্য ইন্টারোগেশন অব সাদ্দাম হোসেন’-এ মত প্রকাশ করে বলেছেন, সাদ্দামকে ইরাক শাসন করতে দেওয়া উচিত ছিল। বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশ ইরাক পরিচালনা এবং সুন্নি উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁর মতো একজন কঠোর শাসকের প্রয়োজন ছিল। 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে সত্য দিয়ে বাস্তবতাকে এড়িয়েছিলেন। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে সত্য দিয়ে বাস্তবতাকে এড়িয়েছিলেন। ছবি: এএফপি

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মিথ্যার মধ্য দিয়ে মানুষ লাভবান হতে চায়। কিন্তু সোজাসাপটা মিথ্যা বলে মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিত হতে চায় না। সে মিথ্যাটাকে কায়দা করে এড়িয়ে গিয়ে নীতিমান ও সৎ বলে পরিচিত থাকতে চায়। আর এ কারণেই পল্টারিংয়ের আশ্রয় নেয়। তবে শেষ বিচারে সে সফল হতে পারে না। পল্টারিংকে শেষ পর্যন্ত মানুষ মিথ্যা বলেই সাব্যস্ত করে। এই কৌশল সমাজে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা অতি পুরোনো প্রবণতা। নৈতিক দিক থেকে এই প্রবণতাকে সমর্থন করা যায় না। এ ধরনের প্রবণতাকে অনেক সময় ‘রবিনহুড মর‍্যালিটি’ বলা হয়ে থাকে। রবিনহুড দরিদ্রদের সহায়তা করার মধ্য দিয়ে ডাকাতিকে ন্যায়সংগত মনে করতেন।

বিবিসির এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বিতর্ক চলাকালে রাজনীতিকেরা সত্য বলার মধ্য দিয়ে কীভাবে কোনো প্রশ্নকে ধোঁকা দিয়ে এড়িয়ে যান, তা দেখার চেষ্টা করেছেন গবেষক ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আচরণগত বিজ্ঞানী টোড রোজার্স এবং তাঁর সহকর্মীরা। রোজার্স বলেন, রাজনীতিকেরা প্রায়ই এটা করে থাকেন। তাই তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। তিনি দেখেছেন, যেকোনো আলোচনায় পল্টারিং অত্যন্ত সাধারণ কৌশল। তাঁর গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১৮৪ জন নির্বাহীর মধ্যে অর্ধেকই স্বীকার করেন, তাঁরা ওই কৌশল অবলম্বন করেন। গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা পল্টারিং করেন, তাঁরা মনে করেন, এই কৌশল অবলম্বন করাটা সোজাসাপটা মিথ্যা বলার চেয়ে কিছুটা নৈতিক। যদিও প্রতারিত ব্যক্তিরা মিথ্যা ও পল্টারিংয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না।

সত্য তথ্য দিয়ে যখন কোনো বাস্তবতাকে আড়াল করা হয়, তখন শ্রোতাদের পক্ষে তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভোটার হওয়ার বয়স কমাতে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি যে প্রচারণা চালিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, ‘আপনার বয়স যদি হয় ১৬, তবে আপনি বিয়ে করতে পারেন; সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেন এবং পূর্ণকালীন চাকরিও করতে পারেন।’ 
অর্থাৎ ১৬ বছরে আপনি এত কিছু করতে পারলেও কেন ভোটার হতে পারবেন না—দলটি তাদের প্রচারণায় এই যুক্তি তুলে ধরে। কিন্তু বিবিসির বস্তুনিষ্ঠতা পরীক্ষাকারী দল দেখেছে যে ওই প্রচারণায় পূর্ণ সত্য তুলে ধরা হয়নি। দলটি বলেছে, ‘১৬ বা ১৭ বছর বয়সে আপনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেন, তবে তা বাবা-মায়ের অনুমোদন সাপেক্ষে। স্কটল্যান্ডে ওই বয়সে বিয়ে করতে হলে বাবা-মায়ের অনুমোদন প্রয়োজন। আর যুক্তরাজ্যে ২০১৩ সাল থেকে ১৬ বা ১৭ বছরে কেউ পূর্ণকালীন কাজ করতে পারে না।’ 

এখানে স্পষ্টতই বাবা-মায়ের অনুমতির শর্তটিকে কৌশলে ঢেকে রাখা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে সত্য দিয়ে বাস্তবতাকে এড়িয়েছিলেন বা মিথ্যা বলেছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তাঁর হাউজিং কোম্পানিতে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ উঠেছিল। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর কোম্পানি ‘অপরাধ স্বীকার’ করেনি। নিউইয়র্ক টাইমস তদন্ত করে দেখেছিল, ট্রাম্পের কোম্পানিতে বর্ণবৈষম্য ছিল। আর এটা স্বীকার না করে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর কোম্পানি অপরাধ স্বীকার করেনি। মানে তিনি সরাসরি প্রশ্নের জবাব দেননি। পল্টারিং করেছেন। 

আবার সোজাসাপটা মিথ্যাকে আমরা তাঁকে যেভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারি; পল্টারিং বুঝে ফেললেও সামাজিক ভদ্রতার কারণে আমরা একে সেভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারি না। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক মাইকেল হাওয়ার্ডের এক ‘কুখ্যাত’ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি প্যাক্সম্যান ওই সাক্ষাৎকারে মাইকেল হাওয়ার্ডকে বারবার প্রশ্ন করেন, তিনি তৎকালীন প্রিজনস গভর্নরের ওপর ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর হুমকি দিয়েছেন কি না? 

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক মাইকেল হাওয়ার্ডের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি প্যাক্সম্যান। ওই সাক্ষাৎকারে মাইকেল হাওয়ার্ড বারবার অন্য সত্য ঘটনা তুলে ধরে একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। ছবি: বিবিসি।
যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক মাইকেল হাওয়ার্ডের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি প্যাক্সম্যান। ওই সাক্ষাৎকারে মাইকেল হাওয়ার্ড বারবার অন্য সত্য ঘটনা তুলে ধরে একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। ছবি: বিবিসি।

বারবার অন্য সত্য ঘটনা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যান হাওয়ার্ড। এটি ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। আর কেউ যখন এভাবে কোনো কিছু আড়াল করতে চান, তখন তা চ্যালেঞ্জ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনা যেমন সচরাচর ঘটে, তেমনি প্রাত্যহিক জীবনেও ঘটে।

রোজার্স মনে করেন, এর কারণ ‘আমরা আমাদের সংকীর্ণ লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, আবার একই সঙ্গে আমরা এটাও চাই যে মানুষ আমাদের নীতিমান ও সৎ বলে বিবেচনা করুক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি, পল্টারিং যাঁরা করেন, তাঁরা ভুল করেন। এ ধরনের চিন্তার সমস্যা গোটা সমাজের ওপরে প্রভাব ফেলে। এই পল্টারিংয়ের কারণেই জনগণ রাজনীতিকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন।’

২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা গেছে, রিয়েল স্টেট এজেন্টস, ব্যাংকার এবং সাংবাদিকদের চেয়ে রাজনীতিকদের প্রতি যুক্তরাজ্যের জনগণের বিশ্বাস কম।

রাজনীতিকেরা পল্টারিংয়ের মাধ্যমে যখন মিথ্যা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ধরা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এর পরেও পল্টারিং নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ানোর কারণে বর্তমান যুগে আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে মিথ্যাই বেশি প্রত্যাশা করি।

‘দ্য লায়ার ইন ইয়োর লাইফ’ গ্রন্থের রচয়িতা মনস্তাত্ত্বিক রবার্ট ফেল্ডম্যান মনে করেন, পল্টারিং ব্যক্তি ও জাতীয় উভয় পরিসরেই দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা যখন আমাদের কাছে মিথ্যা বলেন, তখন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এটা অনৈতিক এবং এটা আমাদের গণতন্ত্রকে নিকৃষ্টতম করে তুলছে।’

সত্যের চেয়ে মিথ্যা বলার জন্য অনেক বেশি মানসিক প্রচেষ্টা খরচ করতে হয়। এ সত্ত্বেও আমরা মিথ্যা বলি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একদা বলেছিলেন, ‘সফল মিথ্যুক হওয়ার জন্য কারোরই পর্যাপ্ত স্মরণশক্তি নেই।’ ১৯৯৬ সালে গবেষক বেলা ডেপাওলো দেখেন, আমরা প্রত্যেকেই দিনে একটি বা দুটি মিথ্যা বলি। ভালো উদ্দেশ্য নিয়েও আমরা মিথ্যা বলি।

দুর্ভাগ্যবশত আমরা যে প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠি, সেখান থেকেই মিথ্যাচারের প্রবণতা তৈরি হয়। ছোটবেলা থেকেই আমাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় মিথ্যাচার একটি ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকেই আমরা ‘নিষ্পাপ মিথ্যা’ বলে থাকি। যেমন কাউকে ভালো না দেখালেও বলি ভালো দেখাচ্ছে। আবার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেও স্বামী তার স্ত্রীর কাছে বা স্ত্রী তার স্বামীর কাছে মিথ্যা বলে থাকেন। আমরা শিশুদের রূপকথার অলীক গল্প শোনাই। ফেল্ডম্যান মনে করেন, ‘আমরা আমাদের শিশুদের মিশ্র বার্তা দিই। সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা—শিশুরা এই শিক্ষা পেলেও তারা এটাও শেখে যে কখনো কখনো মিথ্যা বলা ভালো ও বাঞ্ছনীয়।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের উচ্চারণ করা বাক্য ‘অশ্বত্থামা হতঃ-ইতি গজ’ এটাই প্রমাণ করে যে পৌরাণিক যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে কৌশলে মিথ্যা বলার প্রবণতা ছিল। রাজ্য জয়, ব্যক্তিকে জয় করা থেকে শুরু করে প্রাপ্তির জন্য মানুষ সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা বলে আসছে। এই প্রবণতা অতি পুরোনো। নৈতিক দিক থেকে এই প্রবণতাকে সমর্থন করা যায় না।

আহমেদ হেলাল বলেন, কয়েকটি পর্যায়ে শিশুর নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটে। এই পর্যায়গুলোতে চারপাশ থেকে পর্যবেক্ষণমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু বুঝতে পারে, মিথ্যা বলে মানুষ লাভবান হচ্ছে। একপর্যায়ে মানুষ নৈতিকতাকে নিজের সুবিধামতো সংজ্ঞায়িত করে। এটাকে অনেক সময় ‘রবিনহুড মর‍্যালিটি’ বলা হয়ে থাকে। রবিনহুড ডাকাতি করতেন এবং অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি সেটাকে ন্যায়সংগত ভাবতেন। নৈতিকতার মানদণ্ডে রবিনহুডের কাজগুলোকে সমর্থন করা যায় না। ঠিক তেমনি কোনো ভালো উদ্দেশ্য হলেও কোনো মিথ্যাকে নৈতিকতার মানদণ্ডে সমর্থন করা যায় না। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বা দেশের প্রেক্ষাপট সব জায়গাতেই আমরা যদি পারিবারিক পর্যায়ে সত্যের চর্চা থেকে পিছিয়ে থাকি, তবে শিশুরা মিথ্যা বা পল্টারিংয়ের মাধ্যমে যেকোনো প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতে চাইবে। সবার আগে উচিত পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনে মিথ্যাকে পরিহার করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন, শৈশবকাল থেকেই শিশুদের স্পষ্ট করে কথা বলতে শেখানো উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অপ্রিয় সত্য বলার জন্য শিশুদের শাস্তি দিই। শিশুদের সত্য কথনকে কোনো অবস্থাতেই যেন আমরা অপমান না করি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রিয় সত্য বলে যদি শিশু শাস্তি পায়, তবে তার জীবনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং সে মিথ্যা বলা শিখবে অর্থাৎ পল্টারিং করবে। পাশাপাশি পল্টারিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা থাকলে হয়তো অনেকে এ জাতীয় কূটনৈতিক মিথ্যাচার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করবে।