নতুন করে পুরোনো পোশাক

আলমারিতে ঠেসে রাখা কম ব্যবহার করা পোশাকগুলো নতুন আঙ্গিকে তৈরি করে নেওয়া যায়। ছবি: নকশা
আলমারিতে ঠেসে রাখা কম ব্যবহার করা পোশাকগুলো নতুন আঙ্গিকে তৈরি করে নেওয়া যায়। ছবি: নকশা

‘নানির বিয়ের লাল বেনারসি। মাকেও শাড়িটি পরতে দেখেছি কয়েকবার। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বেনারসি শাড়িটি ঘিরে। এখন আমার আলমারিতে পড়ে আছে। কিন্তু পরা হয়নি কখনো।’ পুরোনো শাড়ি বলে পরা হয়নি, এই দোষ দিয়ে লাভ নেই। আলমারি খুললেই চোখে পড়ে রাজ্যের কাপড়-চোপড়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, কোনো কামিজ এখন আর ফিট হয় না, আবার কোনো শাড়ির চল নেই। ছয় মাস, এক বছর আগে কেনা পোশাকগুলো স্মৃতি নিয়েই বন্দী হয়ে আছে দুই পাল্লার ভেতরে। এসব পোশাক যেন কখনোই আর পরা হবে না আপনার। আলমারির জায়গাটুকুই নষ্ট হচ্ছে। থেকে থেকে একসময় পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই পোশাকগুলো ভালো থাকতে থাকতেই কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারেন নানাভাবে। উপকারে আসবে আপনার ও অন্যদের।

পুরোনো পোশাক আবারও নতুন

কাতান কিংবা জামদানি শাড়ি দিয়ে সহজেই কামিজ বানানো সম্ভব। ডিজাইনার মারিয়া সুলতানা জানান, পুরোনো কাতান শাড়ির পাড়টি ভালো থাকলে কেটে অন্য কোনো শাড়িতে বসিয়ে দেওয়া যায়। কামিজেও ব্যবহার করা যায় লেইস হিসেবে। একইভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির পাড়ও ব্যবহার করা যায়। একটি শাড়ি দিয়ে অনায়াসেই একটি স্কার্ট ও ওড়না করা যায় বলে জানান তিনি। আবার অনেক সময় দেখা যায়, খুব পছন্দের একটি কামিজ ছোট হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে মিলিয়ে কাপড় কিনে কলি দিয়ে নিলে আবারও পরতে পারবেন। কামিজ নষ্ট হয়ে গেলেও ওড়না অনেক দিন ভালো থাকে। এই ওড়না দিয়ে কামিজ তৈরি করে নিতে পারেন। এর সঙ্গে লেইসের ব্যবহার সৌন্দর্য বহু গুণ বাড়িয়ে তোলে, বলেন মারিয়া সুলতানা।

কাজে লাগাই অন্য কোথাও

পুরোনো শাড়ি বা ওড়না দিয়ে টেবিল রানার ও টেবিল ম্যাট তৈরি করা যায়। আমরা ঈদ-পার্বণে নতুনভাবে ঘর সাজাতে পছন্দ করি। প্রতিবার বাজার থেকে না কিনে নকশা করে নতুনত্ব নিয়ে আসার বুদ্ধিটি দিলেন মারিয়া সুলতানা। ছোট শিশুদের ফ্রকগুলো প্রায় নতুনই থেকে যায়। ফ্রকের নিচের কুচির অংশটি দিয়ে টপস বা অন্য কোনো ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন একটি পোশাক বানিয়ে দিতে পারেন। ছোট ছোট কাপড় জোড়া দিয়ে একসঙ্গে পকেটের মতো বানিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা যায়। রান্নাঘর বা বাচ্চাদের রুমে রাখলে ছোটখাটো জিনিসগুলো আলাদাভাবে রাখা যায়, খুঁজে পেতে সহজ হয়।

বাড়ির কোনো কিছুই ফেলনা নয়, একটু এদিক-সেদিক করে ব্যবহার করা যায় পুরোনো পোশাকগুলোও, জানান গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত। পরা হয় না অথবা একটু নষ্ট হয়ে গেছে, এমন জামদানি, কাতান বা সুতি শাড়ি দিয়ে কুশন কভার তৈরি করা যায়। এ ছাড়া ল্যাম্পশেড এবং পাপোশও বানানো সম্ভব খুব সহজেই।

দিতে পারি প্রিয়জনকে

জামাকাপড় ছোট হয়ে গেলে ছোট বোন, প্রিয় মানুষ বা অন্য কোনো কাছের আত্মীয়কে দিয়ে দেওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখবেন পোশাকটি যেন ভালো থাকে। ছেঁড়া বা রং জ্বলে যাওয়া পোশাক কাউকে দিলে তা আপনার লজ্জারই কারণ হবে।

কিছু জিনিস থাকুক যতনে

আমাদের আলমারিতে এমন অনেক জিনিসই থাকে, যা ফেলা যাবে না বা কাউকে দিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। এই যেমন বলছিলাম নানির বিয়ের শাড়ি। মারিয়া সুলতানা এবং তাসমিয়া জান্নাত দুজনই পরামর্শ দেন, স্মৃতি জড়িয়ে আছে এমন পোশাক কাটাকাটি করে কিছু করা উচিত নয়। জিনিসটি থাকুক অ্যান্টিক পিস হিসেবে। আবার এমনও হয়, নিজের কাপড়ই আগামী কয়েক মাস পরা হবে না। এগুলোও উঠিয়ে রাখা যায়। কাপড়ের ধরন অনুযায়ী ড্রাই ওয়াশ অথবা হাতে ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে পলি ব্যাগে ন্যাপথলিন দিয়ে সংরক্ষণ করুন। কিছুদিন পরপর ট্রাঙ্ক বা স্যুটকেস থেকে বের করে রোদে দিন। দীর্ঘদিন ভালো থাকবে আপনার স্মৃতি। এ ছাড়াও পুরোনো বিছানার চাদর তোশকের কভার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কাঁথা তৈরি করতে সুতি শাড়ির কোনো বিকল্প নেই, সুতি ওড়না বা শাড়ি ছোট শিশুদের গামছা হিসেবেও খুব ভালো কাজে দেবে।