হাতার হালচাল

হাতার শেষে ফুলেল নকশায় কুঁচির ব্যবহার সাধারণ পোশাকে এনেছে ভিন্নতা। মডেল: সুণেহরা, পোশাক: পানাশ হাব, সাজ: বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: কবির হোসেন
হাতার শেষে ফুলেল নকশায় কুঁচির ব্যবহার সাধারণ পোশাকে এনেছে ভিন্নতা। মডেল: সুণেহরা, পোশাক: পানাশ হাব, সাজ: বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: কবির হোসেন

নকশাগুলো আদ্যিকালের। তাতে কী! সেই নকশা এখন সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। এই সময়ের পোশাকের হাতার দিকে নজর দিলে তা ভালোই বোঝা যায়। কখনো কুঁচির পর কুঁচি, কখনো ঝালর। হয়তো বা কনুই পর্যন্ত আঁটসাঁট, তারপর ঢিলে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশনেও এই হাতার নকশা বৈচিত্র্য এখন। মজার বিষয় হচ্ছে, একই ধাঁচের নকশার হাতা ব্যবহার করা যায় ব্লাউজ, কামিজ বা ফতুয়ায়। উনিশ শতকের বিভিন্ন সময়ের হাতার নকশাগুলোর সঙ্গে যোগ-বিয়োগ করে সাজানো হচ্ছে এই সময়ের হাতা।

বেল স্লিভ! নামের সঙ্গে এই হাতার ধরনেও মিল আছে বটে! ষাটের দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত জনপ্রিয় এই হাতার স্টাইলটি বর্তমান সময়ে আবারও ফ্যাশন ধারায় চলে এসেছে। ওপরের দিকটা সাধারণ হাতার মতো ছাঁট হয়ে কবজির দিকে এসে কম-বেশি চওড়া হয়ে যায়। আবার কনুইয়ের কাছে এবং তার একটু নিচে বা ওপরে ফিতা দেওয়া থাকে। কিছু কিছু হাতায় বেল বা ঘণ্টির মতো অংশটিও প্লেট প্লেট করা থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থ্রি-কোয়ার্টার বা ফুল স্লিভের হয়ে থাকে এই ডিজাইনের হাতা।

ওপরে ফিটিং, নিচের দিকে ছড়ানো ও মাঝখানে কাটা—এমন ছাঁটের হাতা টপে আনে আধুনিকতা  টপ: বিবি প্রোডাকশনস
ওপরে ফিটিং, নিচের দিকে ছড়ানো ও মাঝখানে কাটা—এমন ছাঁটের হাতা টপে আনে আধুনিকতা টপ: বিবি প্রোডাকশনস

বর্তমানে ভিন্ন ধাঁচের হাতার দিকে ঝুঁকছেন আমাদের দেশের ফ্যাশনপ্রেমীরা। এমনই জানালেন ফ্যাশন হাউস সেইলরের ডিজাইনার ফারহানা সুলতানা। তিনি বললেন, ‘কেপ, কিমোনো, পাফ, ট্রামপেট, প্রিন্সেস, অ্যাঙ্গেল,‌ লেগ অব মাটন ও ড্রপ শোল্ডার হাতার চল এখন বেশি।’ একপাশের হাতায় কোনো কাঁধ থাকে না এবং পুরো শরীরের সঙ্গে যোগ হয়ে নিচের দিকে কবজির কাছে এসে ফিটিং হয়ে যায়। কিছু হাতা আছে যেগুলো প্রায় মেঝে ছুঁয়ে যায়। হাত ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা লম্বা গোছের এই হাতার নাম প্রিন্সেস স্লিভ। এ ছাড়া আছে ট্রামপেট স্লিভ, যা হাতার ওপরের দিক থেকে ফিটিং হয়ে এসে নিচের দিকে লেয়ারের মতো হয়ে যায়। এখনকার লম্বা বা ছোট ছাঁটের পোশাকে এই হাতা বেশ ট্রেন্ডি লুক এনে দেয়।

সার্কুলার ফ্লন স্লিভকেও ফেলা যায় নতুন ধারার হাতার কাতারে। এই হাতা ওপরের দিকে সাধারণ ছাঁটের হয়। নিচের দিকে গোল করে কাটা হাতা আলাদা করে লাগানো থাকে। কাঁধ, কবজি বা কনুই, হাতার যেকোনো জায়গাতেই এই ডিজাইন করা যায়। এতে হাতায় একধরনের ফুলেল আবহ চলে আসে। পোশাকের ধরনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভিন্ন ধাঁচের এই হাতাগুলোর নকশা করা হয়।

ফ্যাশনে নানা উপাদান বিভিন্ন সময়ে ফিরে ফিরে আসে। মাঝখানে ফ্যাশনে হাতা তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু এখন ড্রপ শোল্ডার, কোল্ড শোল্ডার নকশাগুলো পাশ্চাত্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জায়গা করে নিয়েছে আমাদের দেশের ফ্যাশনেও! ভিন্ন ধাঁচের হাতাগুলো সাধারণ কাজের পোশাকের সঙ্গেই বেশি মানায়। পোশাক জমকালো হলে হাতার সৌন্দর্যের বিষয়টি হারিয়ে যায়।

পোশাক:  মুমু মারিয়া
পোশাক: মুমু মারিয়া

টাই স্লিভ নামের হাতাও এখন চোখে পড়ে। নতুন করে সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তার সঙ্গে এই হাতা দেখা যাচ্ছে। হাতার যেকোনো জায়গায় এক বা দুই থাক ফিতা বাঁধা থাকে—এই হলো টাই স্লিভ। চিকন বা মোটা ফিতা দিয়ে বো বাঁধা হয় এই হাতায়।

দেশালের জ্যেষ্ঠ ডিজাইনার বিলকিস জাহান বলেন, ক্রেতাদের পছন্দ আর চাহিদার ওপর নির্ভর করেই ভিন্ন ধাঁচের হাতা যোগ হচ্ছে এই সময়ের পোশাকে। ফ্রিল দেওয়া ফুলেল মোটিফের হাতা রয়েছে, যা ফুলের মতো ছড়িয়ে থাকে। এই হাতাকে বলা হয় ঝালর হাতা। টিউলিপ ফুলের মতো দেখতে হাতাও রয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে টিউলিপ হাতা।

এখন পোশাকের হাতায় বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বললেন বিলকিস জাহান। সে ক্ষেত্রে পোশাকের বাকি অংশ একেবারে সাধারণ রাখা হয়। কারণ হাতাটিই এতটা জমকালো লাগে যে পুরো পোশাকে আর ভারী কাজের দরকার হয় না।

বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকার বললেন, ‘হাতার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে তা হলো ফ্রিল। হাতার মাঝখান থেকে বা কনুইয়ের ওপর থেকে ফ্রিল দেওয়া হচ্ছে। হাতার অর্ধেকটা সোজা হয়ে বাকি অংশে যোগ করা হচ্ছে ফ্রিল। আবার গোলাকার হাতায়ও ফ্রিলের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।’ পুরো হাতায় ফ্রিল দেখা যায়, যা কবজির কাছে এসে কিছুটা কুঁচি দিয়ে শেষ হয়ে যায়। আবার হাতার মাথায় কুঁচি দিয়ে ঘটি বা বেলুনের মতো হাতাও তৈরি হচ্ছে। বড় ও ছোটদের পোশাক, এমনকি ব্লাউজের হাতায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্রিল।

ফ্রিল দেওয়া লেসের হাতা আবারও ফিরে এসেছে ফ্যাশনে। পোশাক: পানাশ হাব
ফ্রিল দেওয়া লেসের হাতা আবারও ফিরে এসেছে ফ্যাশনে। পোশাক: পানাশ হাব

ফ্যাশন উদ্যোগ পানাশ হাবের উদ্যোক্তা সাবেরা আনোয়ারা জানান, বর্তমানে বেল, ভলিউম হাতাগুলো বেশ চলছে। এই ধারা মাথায় রেখেই হাতার ডিজাইনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জোর দেওয়া হচ্ছে সমসাময়িক নকশার হাতার দিকে।

কিমোনো ধঁাচের হাতা। পোশাক: বিবি প্রোডাকশনস
কিমোনো ধঁাচের হাতা। পোশাক: বিবি প্রোডাকশনস

সাবেরা আনোয়ার বললেন, ‘এখানে যেমন এক রঙের গোলাপি কামিজে ব্যবহার করা হয়েছে দুই স্তরের বেলস্লিভ। নতুনত্ব আনার জন্য নেট কাপড় দিয়ে হাতাটি বানানো হয়েছে। পেস্ট রঙের কামিজের হাতাটিকে বলা হচ্ছে বেলস্লিভ। এই হাতার গাউন বা ওরফ কাট দেওয়া হয়েছে। আর হাতায় রয়েছে অনেক ঘের ও ভলিউম।’ তাঁর মতে, কামিজের ডিজাইন বা কাট একেবারে সাধারণ রাখা হয় যেন হাতার ভিন্নতা খুব সহজেই ফুটে ওঠে।