ঘর ছেড়ে হোস্টেলে

মেয়ে যাচ্ছে হোস্টেলে, তাকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন। ছবি: অধুনা
মেয়ে যাচ্ছে হোস্টেলে, তাকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন। ছবি: অধুনা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শেষ, ফলও বেরিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, আর কিছু কিছু জায়গায় হবে হবে করছে। তার মানে, এবার নিজ নিজ স্বপ্নের জায়গায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সব ছাত্রছাত্রীর বাসা ছাড়ার পালা। পরিচিত সবকিছু ছেড়ে এসে সবাইকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে অপরিচিত অনেক কিছুর সঙ্গে।

বাসা ছেড়ে হোস্টেলে এসে থাকার ব্যাপারটা যতটা সহজ মনে হয়, তত সহজ কিন্তু ব্যাপারটা নয়।
সেই শৈশব থেকে জীবনের প্রায় আঠারো বছরের মতো সময় বাবা-মায়ের আদর-সোহাগ, নিবিড় পরিচর্যায়, ভাই-বোনের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বড় হয়ে ওঠা একজন ছাত্রছাত্রী যখন হোস্টেলে এসে যখন দেখে তার মাথার নিচের বালিশ, তার বিছানার চাঁদর থেকে শুরু করে আশপাশের সবকিছু তার অচেনা, তখন মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়। নতুন হোস্টেলে এসে যেমন থাকা-খাওয়াসহ বাহ্যিক অনেক কিছুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়, তেমনি খাপ খাওয়াতে হয় মানসিক অনেকগুলো বিষয়ের সঙ্গেও।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক ও কাউন্সেলর অ্যানি বাড়ৈ বলেন, ‘বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে এসে একেবারে নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোটা মাঝে মাঝে সমস্যা হিসেবে ঠেকতে পারে অনেকের কাছে। নতুন হোস্টেলে এসে যে কারও প্রথমেই বাছাই করে নিতে হবে ঠিক কোন বিষয়টিতে খাপ খাওয়াতে তার সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তারপর কেন সমস্যা হচ্ছে, সেই কারণটা খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। যদি নিজের একার পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য কারও পরামর্শ কিংবা সাহায্য নিতে হবে।’
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিংয়ের খবরাখবর মাঝে মাঝে এখনো পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়। যে বিষয়টা কিনা মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত করতে পারে সদ্য বাসা থেকে হোস্টেলে এসে ওঠা ছাত্র কিংবা ছাত্রীটির। হোস্টেলে এসে আমাদের অনেকেই আবার নিজের পছন্দমতো বন্ধু পাই না। একা একা লাগে। কেন যেন মনে হয় সবার বন্ধু হচ্ছে, আমার কেন হচ্ছে না! তারপর দেখা যায় আমরা বাছাই করে নিই ভুল বন্ধুত্বকে। অ্যানি বাড়ৈ বলেন, ‘নতুন ও পুরোনোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে র‍্যাগ মনে হয় স্বাস্থ্যকর কোনো উপায়। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দুর্বল যে কাউকে কিন্তু মানসিকভাবে চরমভাবে আহত করতে পারে। সম্প্রীতি বাড়ানোর আরও অনেক স্বাস্থ্যকর উপায় আছে অবশ্যই। র‍্যাগ বর্জন করা উচিত। আর বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। আগ্রহ, আদর্শ, মানসিকতার সঙ্গে মেলে এমন কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করা উচিত। সময় লাগলে সময় নিতে হবে।’
হোস্টেলের চার বছর বন্ধুদের
সঙ্গেই কিন্তু কাটাতে হবে আপনাকে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, দিন শেষে ভুল বন্ধু নির্বাচন করেছেন বলে যেন পরিতাপ করতে না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলে এসে নতুন পরিবেশ পাই, নতুন বন্ধু পাই। চারপাশের সবকিছুই আমাদের চোখে নতুন। তারপরও ফেলে আসা সম্পর্কগুলোর দাবি রাখে আমাদের কাছে। বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন—সবার সঙ্গে হয়তো আগের মতো কথা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরও সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখা দায়িত্ব। এদিকে নতুন আরও অনেক সম্পর্ক তৈরি হয়। নতুন-পুরোনো সম্পর্ক সবগুলো টিকিয়ে রাখতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। যদি বিশেষভাবে মা-বাবার কিংবা স্বজনদের কথা বলি, তবে বলতে হয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁ খুব চিন্তায় থাকেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে। আগের মতো কথাবার্তা বলা যদিও বা অসম্ভব, তবে আমরা যেন সম্পর্কগুলোকে ভুলে না যাই, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি।’
দীর্ঘ বারো বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর আরও পড়ালেখা করার জন্য বাড়ি ছেড়ে আমাদের অনেককেই হোস্টেলে যেতে হয়, হবে—এটাই নিয়ম। আমাদের হোস্টেলের জীবনটা সুখী হোক, মজার হোক। যেন পরবর্তী সময়ে এই হোস্টেল-জীবনের গল্পগুলোই অন্যকে হেসে হেসে শোনাতে পারি।