এখন তো সময়...

একজনের একরঙা পাঞ্জাবি, অন্যজনের পরনে ছাপা নকশার কামিজ। যুগল পোশাকে বৈপরীত্য।  পোশাক: লা রিভ
একজনের একরঙা পাঞ্জাবি, অন্যজনের পরনে ছাপা নকশার কামিজ। যুগল পোশাকে বৈপরীত্য। পোশাক: লা রিভ

আগুনরঙা ফুলের সমাহার, ফাগুনরাঙা পোশাকে চলছে প্রস্তুতি। হলুদ, কমলা, বাসন্তীর জয়গান। আর ভালোবাসার টকটকে লাল রংও তো আছে। ফাল্গুনের প্রথম দুই দিন বসন্ত আর ভালোবাসায় মাখামাখি।

প্রেম নিবেদন কিংবা প্রেম উদ্‌যাপন—বসন্তের প্রথম দুটি দিনে এমন দৃশ্য দেখা যায় ফি বছর। এই সময়ে অনেকেই টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্কটার তিতকুটে ভাবটুকু মিটিয়ে নেন। কেউ আবার মধুর সম্পর্কটাকে মধুরতর করতে চান বিশেষ দিবসে। একই রঙের পোশাক পরা, পছন্দের খাবার খাওয়া, একান্তে কিছুটা সময় কাটানো বা বেড়াতে যাওয়া—এই করেই বেলা বয়ে যাবে যুগলদের। লা রিভের ডিজাইন ও ক্রিয়েটিভ পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস—দুটি দিনেই যুগলবন্দী হয়ে ঘুরতে পছন্দ করে এই প্রজন্ম। যুগল পোশাকের রঙে বৈপরীত্য আনলে বেশ মানায়। হয়তো নকশায় থাকতে পারে সাদৃশ্য।

কয়েক বছরের দিকে ফিরে তাকালে অবশ্য দৃশ্যটা ঠিক এ রকম নয়। ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার স্বত্বাধিকারী ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘একসময় এত বড় পরিসরে বসন্তবরণের প্রচলন ছিল না। কলেজের মেয়েরা হয়তো একদিন হলুদ শাড়ি পরেছে এমন দৃশ্য দেখে অনেকে বুঝতেন, আজ তবে পয়লা বসন্ত। কিন্তু এখন পরিবারের সব বয়সীদের নিয়ে পয়লা বসন্ত উদ্‌যাপন করতে দেখা যায়, আগে থেকে এর প্রস্তুতিও নেয়।’

পোশাকে ভালোবাসা, যুগলবন্ধন

লিপি খন্দকার জানালেন, বসন্তের উত্সবগুলোতে উজ্জ্বল ফুলেল রঙের নানান পোশাকের মধ্য থেকে যুগল পোশাক বেছে নেওয়া যেতে পারে। এমনকি শিশুসহ পরিবারের অন্যদের জন্যও এমন উজ্জ্বল রঙের পোশাক মানানসই। বয়স ও রুচি অনুযায়ী রঙের ভিন্নতাও বেছে নিতে পারেন। হালকা নকশার পোশাকই উত্সবগুলোর উপযোগী।

মেয়েদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া যেমন বাজারে রয়েছে; তেমনি ছেলেদের জন্য আছে পাঞ্জাবি-শার্ট। মন্নুজান নার্গিস জানালেন, মেয়েরা লাল বা কমলা রঙের পোশাক পরলে যুগল পোশাক হিসেবে এর সঙ্গে ছেলেদের জন্য গোলাপি ধাঁচের শার্ট মানিয়ে যাবে। নীল পাঞ্জাবির সঙ্গে লাল শাড়ির যুগলবন্দীটাও দারুণ। পয়লা বসন্তে মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরলে আবার ছেলেরা সবুজ রং পরতে পারেন। পোশাকে ছাপার কাজ, সিকোয়েন্স, ডলার বা বোতামের নকশা থাকলে মেয়েরা এর সঙ্গে মিল রেখে গয়না বেছে নিতে পারেন।

পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস তো যুগলদের আরও কাছে আসার, আরও ভালোবাসার। মডেল: সুমি ও আজাদ, পোশাক: িববিয়ানা ও লা রিভ, সাজ: পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন
পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস তো যুগলদের আরও কাছে আসার, আরও ভালোবাসার। মডেল: সুমি ও আজাদ, পোশাক: িববিয়ানা ও লা রিভ, সাজ: পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন

হালকা সাজে ফাগুন মাঝে

ফাগুনের কোমলতায় থাক হালকা সাজ। গয়নায় তাজা ফুল থাকুক বা কৃত্রিম ফুল, উৎসবের উপলক্ষ ফুটে উঠবে তাতেই। মন যদি তাজা ফুলের জন্য আকুল থাকে, তবে আগের সন্ধ্যায় তাজা ফুল কিনে রাখতে পারেন। বইমেলার বাইরে থেকে ফুলের রিং কিনে মাথায় পরেন অনেকেই। আর প্রেমময় বিকেলে শাহবাগের ফুলের দোকান থেকে ফুল নেওয়ার সুযোগও থাকে; দুই দিনব্যাপী প্রেমের আবেশে ফুলের মূল্যটা খানিক বেড়ে যায় বৈকি।

‘চলো না ঘুরে আসি’

ঢাকায় এই সময়ে সবচেয়ে ভিড় থাকবে বইমেলা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এ ছাড়া ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের কিছু এলাকা থেকে। ধানমন্ডি লেক, ৩০০ ফিট রাস্তা বা দিয়াবাড়ি যেতে পারেন। সময়-সুযোগ পেলে সারা দিনের জন্য বেড়িয়ে আসতে পারেন জিন্দা পার্ক, গোলাপ গ্রাম বা ভাওয়াল গড়, পানাম নগর থেকে। একটু বড় ছুটি না মিললে সমুদ্র দেখার সুযোগ হয়তো পাবেন না, তবে সৈকতের আমেজ পেতে চাইলে মৈনট ঘাট যেতে পারেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু আয়েশি সময় কাটাতে চাইলে গাজীপুরের রিসোর্টগুলোর যেকোনোটিতে সারা দিনের জন্য চলে যান। সন্তানদের নিয়ে স্বামী-স্ত্রী যদি একটু রোমাঞ্চকর সময় কাটাতে চান, তবে সাফারি পার্কে যেতে পারেন। ঢাকায় এই দুই দিনের উৎসবের মূল কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। চারুকলা, শাহবাগ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকে নানা ধরনের আয়োজন। চট্টগ্রামের ডিসি হিল, নেভাল একাডেমি এলাকা, সিআরবি, ফয়’স লেক, স্বাধীনতা পার্ক ইত্যাদি জায়গাগুলোতে থাকে লোকজনের ভিড়।

নানা ধরনের অনুষ্ঠান আর বেড়ানোর জন্য সিলেটেও উৎসবের আমেজ থাকে। বিশেষ করে এমসি কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এখানে সবুজ গাছপালা, টিলা আর নানা রকম অনুষ্ঠান থাকে। কাজীর বাজার এলাকায়ও বিকেল থেকে ভিড় বাড়তে থাকে।

একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া

নগরীর যে প্রান্তেই থাকুন, ফেরার পথে একটা বেলা প্রিয়জনের সঙ্গে বসে খাবার খেতে মন চাইতেই পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে অনেকেই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে যান, খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় একটু বেশিই থাকে এ দুই দিন। ভিড় এড়াতে এবং ভিন্নধর্মী খাবারের খোঁজে ধানমন্ডি, বনানী বা গুলশানেও চলে যেতে পারেন। কিছু জায়গায় ছাড় থাকে কাপল লাঞ্চ বা ডিনারে। হোটেল ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন ঢাকার বিপণন নির্বাহী সৈয়দা ফায়কা ফারিয়া জানালেন, গত বছর থেকেই ভালোবাসা দিবসের বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, শুধু যুগল হিসেবেই নয়, বন্ধু এবং পরিবারের অন্যদের নিয়েও ভালোবাসা দিবসে আসেন অনেকে। ছুটির দিন না হওয়ার কারণে রাতের বেলায় লোকসমাগম বেশি হয়। তাই এই হোটেলে যুগল, ছাত্রসহ নানা ধরনের ক্যাটাগরিতে ছাড়ে খাবার মিলবে।

প্রেমিক যুগল হলে তো আয়োজনের পরিকল্পনা ছাড়া উপায় নেই। তবে দম্পতিরাও একজন আরেকজনকে এই দিনগুলোতে বিশেষ আয়োজনে চমকে দিতে পারেন। এতে দুজনের ভালোবাসা আরও গাঢ় হবে।