তোমার কাজল চোখে

কাজল টানা চোখ। পুরোনো দিনের বাংলা ছায়াছবির নায়িকাদের পরিচিত সাজ। চোখের পাশে একটু বেশি টেনে কাজল দেওয়াই ছিল সেই সময়ের ফ্যাশনের ধারা। সময়ের সঙ্গে সাজের ধরন বদলেছে, তবে টিকে আছে কাজলের ব্যবহার। বাংলা ভাষায় কাজল কখনো কখনো উপমাও হয়ে দাঁড়ায়। ‘কাজলকালো’ শব্দটি বললে যেমন কালো বর্ণের নিখুঁত এক রূপ ভেসে ওঠে চোখে, তেমনি কাজলে সাজানো চোখও অপরূপ।

সোনালি’স এইচডি মেকআপ স্টুডিও ও স্যালনের স্বত্বাধিকারী এবং রূপবিশেষজ্ঞ সোনালি ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা কাজল ব্যবহার করেন প্রায় প্রতিদিনই। বাড়িতে, অফিসে বা অনুষ্ঠানে—কাজলের সাজ সবখানেই। চোখের সাজ ছাড়া মূল সাজটাই অসম্পূর্ণ, আর কাজল ছাড়া চোখের সাজের কথা ভাবাই যায় না।’

যে চোখে যেমন কাজল

চোখ ছোট হলে একটু সরলভাবে কাজল লাগালে ভালো দেখাবে। ছোট চোখে পুরু করে কাজল লাগালে চোখ আরও ছোট দেখায়। বড় চোখে কাজলের পুরু রেখা মানানসই।

কোন সাজে কাজলে

শাড়ি পরলে গাঢ় করে কাজল দিন। সুতি শাড়ি পরলে একটু টেনে কাজল লাগাতে পারেন, চুলটাও হয়তো খোঁপা করে বেঁধে নিলেন। শিফন বা জর্জেটের শাড়ির সঙ্গে আবার হালকা কাজল বেশ মানায়। এ ক্ষেত্রে চুল একটু বেণি করে ছেড়ে রাখতে পারেন।

কামিজ বা কুর্তা পরলে একটু বাঁকা করে টেনে উইংড্ আইলাইনার (ডানার মতো) বা ক্যাট আইলাইনার সাজে কাজল ব্যবহার করতে পারেন, আইলাইনারের পরিবর্তে কাজল দিয়েই সাজটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাজল সরলভাবে টানতে শুরু করে ধীরে ধীরে চওড়া হতে থাকে; চোখের শেষ প্রান্তটা পেরোনোর পর বাঁকিয়ে নিয়ে খানিকটা সরু করে কাজল টানা শেষ হয়। চুল খোলা বা আধখোলা থাকতে পারে।

সারা দিন হালকা কাজল রাখতে পারেন। রাতে একটু গাঢ় করে কাজল লাগালে ভালো দেখায়।

মেকআপে আরও কাজল

স্মোকি আইয়ের জন্য কালো আই শ্যাডোর পরিবর্তে কাজল ব্যবহার করতে পারেন। চোখের পাতায় সরাসরি কাজল লাগিয়ে নিন প্রথমে। এরপর ভালোভাবে লেপটে মিশিয়ে নিন। ব্রাশ দিয়ে মেশানোই ভালো, তবে চাইলে হাত দিয়েও লেপটে নিতে পারেন। পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরলে কাজল ব্যবহার করে স্মোকি আই করতে পারেন; ফ্রেঞ্চ খোঁপা বা বেণি করতে পারেন, সঙ্গে থাকুক হালকা লিপস্টিক। আবার যেকোনো পোশাকের উপযোগী করে চোখ সাজাতে কাজল আর আইশ্যাডো-এ দুটি একসঙ্গেও ব্যবহার করতে পারেন।

চোখের কাজল বানানো যাবে বাড়িতেই। কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: নকশা
চোখের কাজল বানানো যাবে বাড়িতেই। কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: নকশা

বাড়িতেই তোলা কাজল

কাজল তুলতে পারেন বাড়িতেই। দুই টেবিল চামচ ঘি দিয়ে একটি মাটির প্রদীপের সলতে জ্বালিয়ে নিন। অপর একটি প্রদীপের বাটি উল্টোভাবে বসিয়ে দিন এর ওপর, যাতে উল্টে রাখা প্রদীপটা উত্তাপ পায়। সারা রাত এভাবে রেখে দেয়ার পর সকালে দেখা যাবে উল্টে রাখা প্রদীপের বাটিতে কালি পড়েছে। এবার এই বাটিতে অল্প অল্প করে ঘি মিশিয়ে নিন। বেশি কালো রং চাইলে ঘি-এর পরিমাণ কম দিতে হবে। ঘি মেশানো শেষে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, জমে গেলেই তৈরি হয়ে যাবে কাজল। পাত্রে উঠিয়ে রেখে এই কাজল ব্যবহার করতে পারেন। জমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার আগেই ১-২টি ভিটামিন ই-ক্যাপসুল ভেঙে ভেতরের ভিটামিনটুকু মিশিয়ে নিতে পারেন।

খেয়াল রাখুন

কাজল লাগানো একটি শিল্পও বৈকি। সঠিকভাবে লাগাতে না পারলে তা সহজেই ছড়িয়ে যায়। এ সমস্যা এড়াতে কাজল লাগানোর আগে চোখের নিচের ত্বকে একটু পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। কাজল কিনতে হলে ভালো ব্র্যান্ডের কেনা উচিত। চোখের মেকআপ তোলার যে বিশেষ রিমুভার কিনতে পাওয়া যায়, কাজল ওঠাতে সেটি ব্যবহার করুন।

কাজল পরতে বারণ?

কারও কারও ত্বকে অবশ্য কাজল লাগালে কিছু সমস্যা হতে দেখা যায়। নির্দিষ্ট কোনো উপাদানে অ্যালার্জির জন্য এ রকম হতে পারে। তবে এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখনো কখনো দেখা যায়, অতি সংবেদনশীল ত্বকে কোনো ধরনের কাজলই ব্যবহার করা যায় না।