মায়ের আহারে
মা হওয়ার আগে ও পরে বদলে যায় মুখের স্বাদ। আবার মাকে এই সময় খেতে হয় স্বাস্থ্যকর খাবার। তেমনই মুখরোচক কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপি দিয়েছেন কল্পনা রহমান।
মায়ের জন্য পুষ্টি
গর্ভকালীন ও সন্তান জন্মের পর মায়ের পুষ্টিকর খাবার জরুরি। পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো বলেন, মা সুস্থ থাকলেই ভালো থাকবে সন্তান। তাই এই সময় মায়ের খাদ্যতালিকায় থাকা দরকার কলিজা, ছোট মাছ, দুধ-খেজুর ও ফলমূল, যা থেকে পূরণ হবে মায়ের প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এ, সি, মিনারেল, লৌহ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এখানে একটি খাবারের রেসিপিতে লাউ আর মাগুর মাছের সঙ্গে থাকা বড়ি মায়েদের হজমে দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া ফলের ঠান্ডাই বা খেজুরের মিল্ক সেক প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন সির অভাব পূরণ করবে। মলা মাছ ভিটামিন এর উৎস, চোখের জন্যও উপকারী। কলিজা থেকে পাওয়া যাবে আয়রন ও ভিটামিন এর মতো উপাদান।
মাগুর ঝোলে লাউ বড়ি
উপকরণ
মাগুর মাছ ৪টি, লাউ অর্ধেকটা, কুমড়া বড়ি ১৫টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ ও তেল আধা কাপ।
প্রণালি
মাগুর মাছ কেটে ধুয়ে লবণ মেখে রাখতে হবে পাঁচ মিনিট। কুমড়া বড়ি অল্প তেলে ভেজে রাখুন।
এবার পাত্রে তেল দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা এক কাপ পানি দিয়ে কষাতে হবে। যখন মসলার কাঁচা গন্ধ চলে যাবে, তখন লাউ দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালোভাবে কষানো হলে গরম পানি দিয়ে ঝোল করতে হবে। লাউ সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা বড়ি ও ভাজা মাছ দিয়ে দমে ঢাকনা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। বড়ি সেদ্ধ হলে ধনে পাতা দিয়ে ২ মিনিট চুলায় রেখে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
আচারি মলা মাছ
উপকরণ
মলা মাছ ২০০ গ্রাম, মিষ্টি আলু ২৫০ গ্রাম, তেলসহ আচার এক টেবিল চামচের তিন ভাগের দুই ভাগ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, বোম্বাই মরিচ ১টি ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
মাছের মাথা বাদ দিয়ে কাটুন। মাছ ধুয়ে লবণ ও লেবুর রসে মাখিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। মিষ্টি আলু মাছের সমান লম্বা করে কেটে নিতে হবে।
পাত্রে তেল দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা এক কাপ পানি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এবার মসলা দুই ভাগ করে এক ভাগে মাছ বিছিয়ে আধা রান্না করে রাখতে হবে। বাকি মসলায় আলু কষিয়ে ১ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সেদ্ধ হলে আচার দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে লবণ চেখে মাছগুলো আলুর ওপর বিছিয়ে বোম্বাই মরিচ চার ফালি করে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে পাঁচ-ছয় মিনিট মৃদু আঁচে দমে রেখে নামিয়ে রাখুন।
খেজুরের মিল্ক সেক
উপকরণ
খেজুর ১ কাপ, ঠান্ডা দুধ ২ গ্লাস, সাগর কলা ১টা, গুঁড়া দুধ আধা কাপ ও ভেষজ শরবত (যেমন রুহ আফজা) প্রয়োজনমতো।
প্রণালি
খেজুর কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এবার বিচি ও বোঁটা ফেলে এক গ্লাস পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। আধা লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে রাখতে হবে। কলা ঠান্ডা করে টুকরা করে নিতে হবে। এবার ব্লেন্ডারে ভেজানো খেজুর পানিসহ দিতে হবে। সঙ্গে বাকি উপকরণগুলো দিয়ে খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন।
ঝটপট স্যুপ
উপকরণ
গাজর, বরবটি, পেপে, পটোল, চিচিঙ্গা, শসা, চালকুমড়া, পাতা কপি সব মিলিয়ে ৩ কাপ, চিকেন কিউব ২টি, পানি ১০ কাপ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া সিকি চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৩-৪টি, চিনি ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, মাখন ২ টেবিল চামচ ও তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি
সবজি একই রকম করে ডাইস আকারে কেটে গরম পানিতে ২ মিনিট রেখে পানি ছেঁকে নিন। এবার ১০ কাপ পানি ফুটিয়ে ২টি চিকেন কিউব দিন। চিকেন কিউব গলে গেলে পর্যায়ক্রমে সবজিগুলো দিতে হবে। সবজি যখন হালকা সেদ্ধ হবে, তখন গোলমরিচ, কাঁচা মরিচ ও চিনি দিতে হবে। যেহেতু চিকেন কিউবে লবণ থাকে, তাই স্যুপটা চেখে প্রয়োজনে সবার শেষে লবণ দিন।
পরিষ্কার একটি প্যানে তেল দিয়ে মাখন গলাতে হবে। এবার রসুন কুচি বাদামি করে স্যুপ বাগাড় দিতে হবে। গরম গরম পরিবেশন। রসুন ছাড়া অন্য যেকোনো ভেষজের ফ্লেভার দিয়েও আমরা এই স্যুপ খেতে পারি।
ফলের ঠান্ডাই
উপকরণ
আনারস কিউব ২ কাপ, নাশপাতি কিউব ১ কাপ, আঙুর কিউব ১ কাপ, পেয়ারা কিউব আধা কাপ, লাল আনার আধা টেবিল চামচ, ধনে পাতা ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ৪ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ২ টেবিল চামচ, আখের গুঁড় বা বাদামি চিনি এক টেবিল চামচের ৩ ভাগের ২ ভাগ, লবণ স্বাদমতো, বিট লবণ সিকি চা-চামচ ও লেবুর খোসা (কুচি কুচি করা) ১ চা-চামচ।
প্রণালি
ফলগুলো ধুয়ে লবণ-পানিতে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর আবার ভালোভাবে ধুয়ে কিউব করে কেটে গুড় বা বাদামি চিনি (ব্রাউন সুগার) দিয়ে মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে আধা ঘণ্টা।
এবার অন্য সব উপকরণ আলতোভাবে চামচ দিয়ে মিশিয়ে আনার দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
বারকিউ কলিজা
উপকরণ
খাসির কলিজা ১ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, বাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, টক দই ২ টেবিল চামচ, কাবাব মসলা ১ চা-চামচ, বারবিকিউ সস ১ টেবিল চামচ, কচুরি মেথি সিকি চা-চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, বাটার ২ টেবিল চামচ ও ফ্রেশ ক্রিম ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি
কলিজা বড় বড় কিউব করে কেটে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
বারবিকিউ সস, বাটার ও ক্রিম বাদে বাকি সব উপকরণ ২ কাপ গরম পানিতে দিয়ে সেদ্ধ করে শুকিয়ে নিন। মসলা থেকে কলিজা আলাদা করে বারবিকিউ সস দিয়ে মাখিয়ে শাশলিকের কাঠিতে দুটি করে টুকরা গেঁথে মাঝে তিন রঙের ক্যাপসিকাম দিয়ে সাজিয়ে নিন। ওভেন অথবা ফ্রাইপ্যানে ১০ মিনিট বেক করে সার্ভিস ডিশে সাজিয়ে নিতে হবে। অন্য একটি পাত্রে বাটার মাখিয়ে কষানো মসলা দিয়ে নেড়ে ফ্রেশ ক্রিম দিয়ে সস বানিয়ে নিতে পারেন।