বৈশাখী সাজে ওরা

নতুন পোশাকে বৈশাখী আনন্দ। মডেল: এলিনা, ফাইয়াদ ও ইপসার, পোশাক: শৈশব, স্থান কৃতজ্ঞতা: রিকশা ক্যাফে, ছবি: সুমন ইউসুফ
নতুন পোশাকে বৈশাখী আনন্দ। মডেল: এলিনা, ফাইয়াদ ও ইপসার, পোশাক: শৈশব, স্থান কৃতজ্ঞতা: রিকশা ক্যাফে, ছবি: সুমন ইউসুফ

একসময় বৈশাখ মানেই ছিল মেলা। বৈশাখী মেলা। খোলা মাঠে থরে থরে সাজানো মাটির পুতুল, কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, হাওয়াই মিঠাই, বায়োস্কোপ আর নাগরদোলা। মা-বাবার হাত ধরে ছোট্ট শিশুর মেলাজুড়ে টইটই। ফেরার পথে এক হাতে মিছরির তৈরি একটা হাতি নয়তো ঘোড়া। গ্রামের দিকে টিকে থাকলেও শহুরে জীবনে এমন মেলা এখন বলতে গেলে উধাও। এই বৈশাখী মেলা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে শিশুদের, আর বায়নাও তাদের সবচেয়ে বেশি।

পোশাক: টুথ ফেইরি
পোশাক: টুথ ফেইরি

বিশেষ এই দিনটিতে বাড়ির ছোট সদস্যটিরও চাই রঙিন পোশাক। বৈশাখে শিশুকে কী পরাবেন, তা নির্ভর করবে অনেক কিছুর ওপর। কিন্তু কয়েকজন মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা সন্তানের আরামকেই দিচ্ছেন প্রথম প্রাধান্য। আজকাল স্কুলগুলোতেই বৈশাখের অনুষ্ঠানে লাল–সাদা পোশাক পরতে বলা হয়। স্কুলের বেঁধে দেওয়া ড্রেস কোড অনুযায়ী সন্তানের বৈশাখের পোশাক কিনে ফেলতে পারেন। পয়লা বৈশাখ আর স্কুলের অনুষ্ঠানে আলাদা পোশাক পরাতে চান, তাহলে পয়লা বৈশাখের দিন বেগুনি, সবুজ, ম্যাজেন্টা, কমলা ও হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙের সমন্বয়ে কোনো ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরাতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পোশাক হতে পারে শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজ। ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, পায়জামা, ধুতি, টি-শার্ট বা ফতুয়া। চাইলে লুঙ্গিও পরাতে পারেন। এখন ফ্যাশনে সবাই চায় চলতি ধারা অনুসরণ করতে। তবে বড়দের ফ্যাশনে যত দ্রুত পরিবর্তন আসে ছোটদের ক্ষেত্রে কিন্তু ততটা নয়। বড়দের পোশাকের কিছু কিছু ধারাই বরং ঢুকে পড়ে শিশুদের পোশাকে। তবে শিশুদের পোশাকের ‘ট্রেন্ড সেটার’ মূলত মায়েরা। মা যেমন পোশাক পরাতে চান, শিশু তেমন পোশাকই পরবে। একজন মা-ই বোঝেন তাঁর শিশুকে কেমন পোশাক পরলে মানাবে, কোনটাতে তারা আরাম পাবে।

অন্যরকম কাট এবং উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার শিশুদের পোশাকে।  মডেল: জারা, এলিনা ও সাবিন, পোশাক: গাও গেরাম
অন্যরকম কাট এবং উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার শিশুদের পোশাকে। মডেল: জারা, এলিনা ও সাবিন, পোশাক: গাও গেরাম

শিশুপোশাকের দোকান টুথ ফেইরির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তানিমা রহমান জানালেন, এবার যেহেতু প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তাই সুতি কাপড়েই শিশুদের সব পোশাক নকশা করা হয়েছে। মূল রং রেখেছি লাল ও সাদা। কোনো কোনো পোশাকে সামান্য সোনালি, হলুদ কিংবা নীলের ছোঁয়াও দেখা যাবে।’ বেল, প্রিন্সেস, পাফ, কোল্ড শোল্ডারসহ বিভিন্ন কাটে সাজানো হয়েছে পোশাকের হাতা। পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে ট্যাসেল ও পমপম। ছেলেদের পাঞ্জাবিগুলোও স্ক্রিন প্রিন্টের ওপর খুব ছিমছাম নকশায় তৈরি। তানিমা বলেন, ‘ঘরের ভেতর বৈশাখের দাওয়াতে পরার জন্য শিফনের তৈরি কিছু পোশাকও রেখেছি।’

বাজার ঘুরে দেখা গেল মেয়েদের পোশাকে এখন ঢেউ খেলানো, ফোলানো ও কুঁচি দেওয়া হাতার পাশাপাশি দুই স্তরের পোশাক চলছে। ছেলেদের পোশাকে ব্লক ও ঐতিহ্যবাহী নানা নকশা উঠে এসেছে। ফ্যাশন হাউস শৈশবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব চৌধুরী জানালেন, তাঁদের বৈশাখী সংগ্রহে আছে শিশুদের নিমা থেকে শুরু করে ফ্রক, ফতুয়া, সালোয়ার–কামিজ, স্কার্ট, টপ, হাওয়াই শার্ট, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট ও তৈরি করা শাড়ি। এ ছাড়া প্রায় সব বাজারে শিশুদের পয়লা বৈশাখে পরানোর জন্য নানা রকম পোশাক পাবেন। হাতে যেহেতু আরও কিছুদিন সময় আছে, চাইলে কাপড় কিনেও নিজের পছন্দের নকশায় শিশুর পোশাক বানিয়ে নিতে পারেন। নিজের জন্য পোশাকের যে কাপড় কিনেছেন, সেখান থেকে বেঁচে যাওয়া কাপড় দিয়েও ছোট শিশুর সুন্দর পোশাক বানিয়ে ফেলতে পারেন অনায়াসে। তবে দরজির কাছে পোশাক বানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর মাপ দিয়ে নেবেন। ডিজাইনারদের মতে, শিশুদের একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরালেই ভালো। গরমে তাহলে হাঁসফাঁস লাগবে না।

পোশাক: টুথ ফেইরি
পোশাক: টুথ ফেইরি

বৈশাখের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হচ্ছিল চাকরিজীবী মা রাদিয়া রুহুলের সঙ্গে। জানালেন, মেয়ে রায়িফা আর তিনি এবার মিলিয়ে শাড়ি পরবেন। পয়লা বৈশাখের ভোরেই তাঁরা পরিবারসহ ঘুরতে বেরিয়ে যাবেন। গরমে শিশুর যেন অস্বস্তি না লাগে, এ জন্য তাকে লাল আর সাদার মিশেলে সুতির রেডিমেড শাড়িই পরাবেন। এটি ছোটরা সহজে বহন করতে পারে, পরাতেও কোনো ঝামেলা নেই। মেয়েকে রাদিয়া সাজাবেন ফুল দিয়ে। কপালে থাকবে টিপ, পায়ে আলতা আর হাতে চুড়ি। ব্যস, শিশুদের সাজাতে এর থেকে বেশি আর কী লাগে?