মা, আমার মা...

হুমায়ূন আহমেদ, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক
হুমায়ূন আহমেদ, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক

দিনরাত চলত মায়ের সেলাই মেশিন
১৬ ডিসেম্বরের পর মা আমাদের ভাইবোন সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলেন। হাতে একটি পয়সাও নেই। এই অবস্থায় পুরানা পল্টনে বাড়ি ভাড়া করলেন, আমাদের সবাইকে এমন করে বললেন, তোরা তোদের পড়াশোনা চালিয়ে যা। সংসার নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। আমি দেখব।
পুরানা পল্টনের ওই বাড়িতে আমাদের কোনো আসবাব ছিল না। আমরা মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে ঘুমাতাম। কেউ বেড়াতে এলে তাকে মেঝেতেই বসতে হতো। মা নানা সমিতিতে ঘুরে ঘুরে সেলাইয়ের কাজ জোগাড় করলেন। দিনরাত মেশিন চালান। জামা-কাপড় তৈরি করেন। সেলাইয়ের রোজগারের সঙ্গে বাবার পেনশনের নগণ্য টাকা যুক্ত হয়ে সংসার চলত। তিনি শুধু যে ঢাকার সংসার চালাতেন তা-ই না, মোহনগঞ্জে তাঁর বাবার বাড়ির সংসারও এখান থেকেই দেখাশোনা করতেন। অনেককাল আগে গ্রামের এই বোকা বোকা ধরনের লাজুক কিশোরী মেয়েটি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি কী কঠিন সংগ্রামময় জীবন অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।

সূত্র: হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমার ছেলেবেলা বই থেকে সংগৃহীত

শচীন টেন্ডুলকার, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক
শচীন টেন্ডুলকার, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক

 ‘শচীন, শচীন’ শুরু করেছিলেন মা
আমার কাছে আমার মা হলেন পৃথিবীর সেরা রাঁধুনি। যিনি আমার মুখের হাসি দেখার জন্য সব করতে পারেন। পৃথিবীর সেরা মাছ, চিংড়ির তরকারি, বেগুনভর্তা ও ডাল-ভাত রান্না হতো আমাদের বাসায়। আমার মুখের রুচি গড়ে উঠেছে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে। পেট ভরে খেয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে ভীষণ ভালো লাগত। মায়ের কোলে মাথা রেখেই আমি শুনেছি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গান। যেই গান গেয়ে মা আমাকে ঘুম পাড়াতেন। গানের প্রতি ভালোবাসা ও সংগীতের রুচিবোধও পেয়েছি তাঁর কাছে।

ভরপুর দর্শকের গ্যালারি থেকে যে ‘শচীন, শচীন’ রব আমি শুনেছি, সেটাও তো মা-ই শুরু করেছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে যখন ভাইদের সঙ্গে বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলতাম, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মা আমাকে এভাবেই ডাকতেন। কখনো ভাবিনি, মায়ের এই ডাক একদিন ক্রিকেট মাঠ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

সূত্র: টেন্ডুলকারের আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে

টেইলর সুইফট, স্বনামধন্য মার্কিন গায়িকা
টেইলর সুইফট, স্বনামধন্য মার্কিন গায়িকা

 মা সবচেয়ে ভালো বন্ধু
স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুরা আমাকে পছন্দ করত না। তারা ভাবত, আমি একটা উদ্ভট মেয়ে। আমার চুলগুলো সুন্দর না। আড়ালে-আবডালে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করত। আমি অবশ্য সেসবের পরোয়া করতাম না। একদিন বললাম, ‘তোমরা কি আমার সঙ্গে বার্কশায়ার মলে যাবে?’ তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ছুতোয় আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলো না। অতএব, আমার সঙ্গী হলো আমার মা। মাকে নিয়ে আমি মলের এ মাথা থেকে ও মাথা রীতিমতো দৌড়েছি। কেনাকাটা করেছি। চোখের পানি আড়াল করতে পারিনি। মা ঠিকই সব বুঝেছিল।

আমার ভালোবাসা ও ঘৃণাগুলো প্রকাশ পায় আমার লেখার মধ্য দিয়ে, এটা সবাই জানে। কিন্তু সবাই যেটা জানে না, তা হলো আমি আমার সেরা গানটা লিখেছি মাকে নিয়ে। যে কথাগুলো মাকে বলতে পারিনি, সেগুলো আছে আমার ‘দ্য বেস্ট ডে’ গানে। গ্রীষ্মের ছুটিতে গোপনে আমি গানটা লিখেছিলাম। এমনকি রেকর্ডিংও হয়েছে গোপনে। মাকে জানাইনি। চেয়েছিলাম, বড়দিনে তাঁকে চমকে দেব। আমার ছেলেবেলা থেকে বেড়ে ওঠার সময়ের ছবিগুলো এক সাথ করে একটা মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছি। বড়দিনের সন্ধ্যায় যখন মাকে ভিডিওটা দেখালাম, সে কেঁদে ফেলল।

সূত্র: টেইলর সুইফটের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার