একে একে শত দেশে গেলেন নাজমুন

বাংলাদেশি নারী হিসেবে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করলেন নাজমুন নাহার। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের মাটিতে পা রেখে শততম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তাঁর ভ্রমণতালিকায় পূর্ব আফ্রিকার জাম্বিয়া ছিল ৯৯তম দেশ। দেশটির লিভিংস্টোন শহর থেকে হেঁটে তিনি জিম্বাবুয়ে পৌঁছান। বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের জিম্বাবুয়ে অংশে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে আবার জাম্বিয়ায় ফিরে আসেন তিনি।

জিম্বাবুয়েতে পা রাখার পর। ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের সামনে।
জিম্বাবুয়েতে পা রাখার পর। ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের সামনে।

উচ্ছ্বসিত নাজমুন নাহার ম্যাসেঞ্জারে বলছিলেন, ‘১০০তম দেশ ভ্রমণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশ্বের ১০০ দেশে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো নিঃসন্দেহে যে কারও জন্য গর্বের ব্যাপার, আমারও তা-ই। জাম্বিয়ার লিভিংস্টোন শহরের গভর্নর আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন, তাই জিম্বাবুয়েতে বেশি সময় থাকতে পারিনি। ৫ জুন আবার জিম্বাবুয়ে ভ্রমণে যাব।’
এ বছরের ২০ জানুয়ারি ‘দেখছি আমি জগৎটাকে’ শিরোনামে নাজমুন নাহারের ভ্রমণজীবনের গল্প প্রচ্ছদ করেছিল প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটিরদিনে। তখন পর্যন্ত তিনি ৯৩টি দেশ ঘুরেছিলেন। ছুটির দিনের প্রতিবেদনের মাধ্যমেই সবার কাছে পরিচিতি পান পরিব্রাজক নাজমুন। প্রথম আলোকে সে সময় তিনি বলেছিলেন, এ বছরের মধ্যে শততম দেশ ভ্রমণের লক্ষ্য তাঁর। আর সে দেশটি হবে আফ্রিকার কোনো দেশ।

দেশে থেকে দেশান্তরে
দেশে থেকে দেশান্তরে

কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি লক্ষ্য পূরণ করলেন। শততম দেশ ভ্রমণের লক্ষ্যে সুইডেন থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল গত ১১ মে। তিনি প্রথমে পৌঁছান আফ্রিকান দেশ ইথিওপিয়ায়। সে দেশ থেকে ১৭ তারিখ পৌঁছান কেনিয়ায়। এভাবে উগান্ডা, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া, জাম্বিয়া হয়ে ১ জুন পা রাখেন জিম্বাবুয়ের মাটিতে। নাজমুন নাহার বলেন, ‘পুরো ভ্রমণটি আমি সড়কপথে করেছি। অনেক সময় দীর্ঘ পথ বাসে কাটাতে হয়েছে। কষ্ট হলেও যাত্রাটা আমি উপভোগ করেছি।’
আফ্রিকার দেশগুলোতে তিনি শুধু ঘুরে বেড়িয়েছেন এমনটি নয়—স্থানীয় অনেক স্কুলে গেছেন, খুদে ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিজের গল্প বলেছেন। দেখেছেন প্রত্যন্ত আফ্রিকানদের জীবনযাপন।
৩৮ বছর বয়সী নাজমুন নাহারের বিশ্বভ্রমণের শুরুটা ২০০০ সালে, ভারত ভ্রমণের মাধ্যমে। তখন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ শেষে রাজশাহী থেকে ঢাকায় চলে আসেন নাজমুন। কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন এক বিনোদন সাময়িকীতে। ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চলে যান সুইডেন। লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নাজমুন সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। পড়াশোনার ফাঁকে খণ্ডকালীন কাজও করতেন তখন। কয়েক মাসের জমানো টাকায় জাহাজে ভ্রমণ করেন ফিনল্যান্ড।

স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছে ভ্রমণের-জীবনের গল্প বলেন নাজমুন নাহার
স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছে ভ্রমণের-জীবনের গল্প বলেন নাজমুন নাহার

তারপরই শুরু হয় তাঁর ভ্রমণ অধ্যায়ের অন্য পর্ব। সুইডওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন। রোজকার খরচ বাদে যা জমান, তা নিয়েই পা বাড়িয়েছেন নতুন কোনো দেশে। বাংলাদেশের এই নারী ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঘুরেছেন ৩৫টি দেশ। এ তালিকায় আছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু, চিলি, প্যারাগুয়েসহ দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি দেশ। এই দুই সাল মিলিয়ে এটাকে তাঁর ‘ভ্রমণবর্ষ’ বলা যায়!
অনূঢ়া নাজমুন নাহার ‘ইনসপিরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামের একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন স্কুল ও অনাথ আশ্রমে যাবেন। বর্ণনা করবেন নিজের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা। তিনি বললেন, ‘টাকা জমিয়ে মানুষ সম্পদ গড়ে। আমার স্বপ্নই নতুন কোনো দেশ ভ্রমণ। আপাতত দেশে ফেরার লক্ষ্য, ঈদের পরপরই দেশে ফিরব। এরপর পরিকল্পনা করব নতুন কোনো দেশে যাওয়ার।’