প্রবীণদের ঈদ ফ্যাশন

রাজধানীর নিউমার্কেটে লুঙ্গি কিনছেন একজন ক্রেতা। গতকাল বিকেলে।  প্রথম আলো
রাজধানীর নিউমার্কেটে লুঙ্গি কিনছেন একজন ক্রেতা। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো

‘অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে নানুর জন্য একটা শাড়ি কিনেছি,’ বেশ গর্ব নিয়ে বললেন ওয়ারী লারমিন স্ট্রিটের বাসিন্দা শামসুন্নাহার এলমা। র‍্যাঙ্কিন স্ট্রিটের নবরূপা ফ্যাশন হাউসে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। এলমাকে তাঁর বাবা ও বড় বোন ঈদের জামা দিয়েছেন। আর তিনি নিজে টাকা জমিয়ে নানির জন্য শাড়ি কিনতে পেরে মহাখুশি।

ঈদে পরিবারের ছোট সদস্যদের দাবি সবার আগে মেটানো হয়। তারপর অন্যরা নিজেদের মতো বাজার করেন। তবে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের কথা ভাবনায় থাকে। প্রবীণদের জন্য নতুন পোশাক সব পরিবারেই প্রাধান্য পায়। আর বিক্রেতারাও বিষয়টি গুরুত্ব দেন। রাজধানীর বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউস—সবখানেই রয়েছে প্রবীণদের উপযোগী পোশাক।

গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেট, মালিবাগের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে প্রবীণদের জন্য পাঞ্জাবির সংগ্রহ রয়েছে অনেক বেশি। এ ছাড়া টিকাটুলীর রাজধানী সুপারমার্কেট, সদরঘাটের বিভিন্ন বিপণিবিতান, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, বেইলি রোডের বিপণিবিতানগুলো ছাড়াও আড়ং, নবরূপা থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, অন্যমেলা, সাদাকালোতে পাওয়া যাচ্ছে নানি-দাদিদের শাড়ি। এসব বিপণিবিতানে প্রবীণদের উপযোগী পাঞ্জাবিও মিলছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, রোজায় শুধু প্রবীণদের পাঞ্জাবিই বেশি বিক্রি হয়েছে।

‘এখন আর নাতনির জন্য জামা বানাতে পারি না। বরং ও-ই এখন আমার জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। ঈদের জন্য জুতা, ম্যাক্সি কিনে নিয়ে আসা—সবই নাতি-নাতনিরা করে। আমি বলি, বুড়ো মানুষের আবার কিসের ঈদ, ঈদ তো ছোটদের।’ বলছিলেন টিকাটুলীর ষাটোর্ধ্ব কোহিনুর বেগম।

টিকাটুলীর রাজধানী সুপারমার্কেটে দাদির জন্য শাড়ি কিনতে এসেছিলেন সামিন হক। অনেক ঘুরে সাদা জমিনে চিকন পাড়ের একটি শাড়ি কেনেন তিনি। সামিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে যে শাড়িই কিনি, আমার দাদিজি তা ভীষণ পছন্দ করেন। ঈদের দিন আমার দেওয়া শাড়িটাই পরেন।’

বয়সের ভারে ন্যুব্জ প্রবীণেরা ঈদের কেনাকাটা সাধারণত করেন না। তাঁদের জন্য ঈদের পোশাক কেনার কাজটি করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। বিক্রেতারা জানালেন, হালের ঈদ ফ্যাশনে ষাটোর্ধ্ব নারীদের উপযোগী কোটা শাড়ি, তাঁতের শাড়ি ও সুতি জামদানি চলছে বেশ। রং হিসেবে রয়েছে হালকা গোলাপি, আকাশি, ঘিয়ে, হলুদ ও সাদার প্রাধান্য। কাজের মাধ্যম হিসেবে এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ, ব্লক ও ছাপা বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।

রাজধানী সুপারমার্কেটের নীলা ক্লথ স্টোরের শামসুল হক জানালেন, প্রবীণদের জন্য ধবধবে সাদা সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামাই বেশি চলছে। পাঞ্জাবির গলায় সাদা সুতায় হালকা কিংবা ভারী হাতের কাজ থাকছে।