ঈদে কম সময়ে ঘরে নতুনত্ব আনবেন যেভাবে

অতিথির সংখ্যা বেশি হলে বসার ঘরের মেঝেতেও বসার সুন্দর ব্যবস্থা করতে পারেন।
অতিথির সংখ্যা বেশি হলে বসার ঘরের মেঝেতেও বসার সুন্দর ব্যবস্থা করতে পারেন।

রমজান প্রায় শেষের পথে। দুয়ারে দাঁড়িয়ে ঈদ এখন ঠক ঠক করছে। গৃহকর্ত্রীর চিন্তাও তাই বেড়ে চলেছে। চিন্তা তো হবেই, ঈদের আগে বাড়ির কত্ত কাজ জমা হয়ে আছে। রোজার মাসজুড়ে নিজেদের জন্য কেনাকাটা করলেও শেষ মুহূর্তে বাড়ির জন্য কিছু না কিছু বাজার সদাই করা চাই। আর এই প্রয়োজন বা শখ প্রায় সব বিত্তের মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। 

ঈদের মতো বড় উৎসবে নিজেদের পাশাপাশি বাড়িটিও মানুষ সাজিয়ে তুলতে চান নতুন করে। রোজার মাসজুড়ে বিনা বেতনে বাড়ির যে মেয়েটি ইফতারে শরবত বানানোর ‘চাকরি’ পেয়েছিল, তার হাতেই হয়তো চাঁদরাতে উঠবে ঝুল ঝাড়ু, নয়তো আসবাব পরিষ্কারের কাপড়। বাড়ির ছেলেটিও বা বাদ যাবে কেন? তাকেও বোনের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে দিন। সময় যেহেতু কম, সবাই মিলে কাজ ভাগ করে নিলে সবার ওপরেই চাপ কম পড়বে।

ঈদের দিন ঘরে রাখুন তাজা কিছু ফুল
ঈদের দিন ঘরে রাখুন তাজা কিছু ফুল

ঈদে বাড়ি সাজাতে হলে যে নতুন নতুন জিনিস কিনতে হবে, এমনটিও নয়। ঘর সাজাতে খুব বেশি খরচেরও দরকার নেই। যেকোনো দাওয়াতের আগে যেমন হয়, ঈদেও পুরো বাড়ির ধুলা, ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। জানালার পর্দা, সোফার কভার, টেবিল ক্লথ, চাদর ইত্যাদি আগেই ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখুন। এরপর শুরু করুন ঘর সাজানো।

অ্যাস্থেটিক ইন্টেরিয়রসের প্রধান নির্বাহী ও পরামর্শক সাবিহা কুমু বলেন, ‘একটি বাড়ির অন্দর সম্পর্কে অতিথির ধারণা শুরু হয় দরজার বাইরে থেকেই। তাই ঈদের অন্দরসজ্জায় বাড়ির এই অংশটুকুকেও মাথায় রাখতে হবে।’ এখন প্রশ্ন করতে পারেন এত অল্প সময়ে সিঁড়ির জায়গা টুকু আবার কীভাবে সাজাব? সত্যি বলছি, এ জন্য আপনাকে তেমন পরিশ্রমও করতে হবে না। জায়গা থাকলে সিঁড়ির কাছে একটি গাছের টব এনে রাখতে পারেন। আগে থেকেই যদি সেখানে কোনো গাছ থেকে থাকে তাহলে সেটি পালটে ছাদ থেকে অন্য কোনো গাছ এনে রাখা যায়। অন্দরসজ্জায় আলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খুব সাশ্রয়ী দামে বাজারে আজকাল নানা রকম ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়। সিঁড়িঘরে সুন্দর কোনো ল্যাম্পশেড অথবা দেয়ালে আয়না ঝোলাতে পারেন। আর পাপোশ নতুন করে না কিনলেও পুরোনোটিই আজ ঝেড়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।

ডাইনিং টেবিলের রানার আর ন্যাপকিন আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হবে
ডাইনিং টেবিলের রানার আর ন্যাপকিন আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হবে

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলসান নাসরিন চৌধুরী জানিয়েছিলেন কীভাবে খরচ না করেই অন্দরসজ্জায় নতুনত্ব আনা যায়। তাঁর মতে, ঘরের আসবারগুলোর জায়গা পরিবর্তন করলেই বাড়ির চেহারা অনেকটা পালটে ফেলা সম্ভব। সব আসবাব যে সরাতে হবে, বিষয়টা এমনও নয়। শুধু বসার ঘরের সোফাগুলো অন্যদিকে দিয়ে অথবা ডিভান আর শোকেসের জায়গা অদলবদল করলেও চলবে। এরপর আসা যাক ঘরের পর্দাতে। এটিও নতুন করে কিনতে হবে না। বসার ঘরের পর্দা শোয়ার ঘরে আর শোয়ার ঘরের পর্দা বসার ঘরে এনে লাগিয়ে দিন। দুই ঘরের পর্দায় সামঞ্জস্য থাকলে দুই সেট মিলিয়েও এক জানালায় লাগাতে পারেন। বাড়িতে যদি কোনো পুরোনো কাতান বা জামদানি শাড়ি থাকে সেটি শাড়ির মতো কুচি করে পিনআপ করে নিন। এরপর পর্দার ওপরে পেলমেটের মতো ঝুলিয়ে দিন। মনে হবে নতুন পর্দা লাগিয়েছেন। দেশীয় ঢঙে ঘর সাজাতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য সাবিহা কুমু পাটের কাপড়ের পর্দা লাগানোর পরামর্শ দেন।

আর অল্প কিছু খরচ করলে সোফার কুশন কভার বা সোফা ব্যাগ কেনা যায়। সেন্টার টেবিলে ঈদের দিন তাজা ফুল রাখার জন্য কোনো ফুলদানি কিনতে গেলেও খুব বেশি টাকা গুনতে হয় না আজকাল। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে ছোট কোনো ওয়াল শোপিস, নতুন দেয়াল ঘড়ি বা ঝালর কেনেন অনেকে। এ ছাড়া নানা রকম ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। রং আর ব্রাশ কিনে টবগুলো বাড়িতেই রাঙিয়ে নিতে পারেন। পাতাগুলো পরিষ্কার করে নিলে গাছ আরও বেশি সজীব দেখাবে। আর টেবিল ল্যাম্পের শেডটি পুরোনো হয়ে গেলে শুধু শেডটি পালটে নিতে পারেন।

বসার ঘরের টেবিলে একটি ক্রিস্টালের পাত্রে পানি দিয়ে তার ওপর কিছু ফুলের পাপড়ি ও ভাসমান মোমবাতি রাখতে পারেন। ঈদে অতিথিদের বরণ করে নিতে সুন্দর বাটিতে কিছু কটন বল ও আতরদানি রাখার বুদ্ধি দিলেন গুলসান নাসরিন চৌধুরী। ঈদে যেহেতু হিসাবের বাইরেও অনেক মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে চলে আসতে পারেন, তাই বাড়তি বসার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। মেঝেতে মাদুর ও এর ওপর ছোট ছোট নকশিকাঁথার গদি বা মোড়ার ব্যবস্থা রাখতে পারেন।

শোয়ার ঘরের বিছানায় এদিন উজ্জ্বল রঙের চাদরেই ভালো লাগবে
শোয়ার ঘরের বিছানায় এদিন উজ্জ্বল রঙের চাদরেই ভালো লাগবে

ঈদে বড় একটি অংশ দখল করে রাখে রান্নাবান্না ও ভূরিভোজ। তাই ডাইনিংয়ের সৌন্দর্যের দিকেও নজর দিতে হয়। বেশির ভাগ মানুষই আজকাল ঈদের আগের রাতে রান্নার কাজ এগিয়ে রাখেন। এর ফাঁকে ফাঁকেই বাসনকোসন বের করে ধুয়ে রাখতে পারেন। একসঙ্গে অনেক অতিথি হাজির হয়ে গেলেও যেন হুড়োহুড়ি না লেগে যায়। এ জন্য খাওয়ার প্লেট, হাফ প্লেট, তরকারির বাটি, মিষ্টি খাওয়ার ছোট বাটি, গ্লাস ও চামচ বের করে একটি ট্রলিতে সাজিয়ে রাখুন। অথবা ছোট কোনো ফোল্ডিং টেবিল খাবার ঘরের এক কোনায় রেখে সেখানেই এগুলো রেখে দিন। ঈদে পুরোনো শাড়ির আঁচল কেটে টেবিল রানার বা ম্যাট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। টেবিল ক্লথ নতুন না কিনলেও ওপরের স্বচ্ছ প্লাস্টিকটি নতুন করে কেনা যেতে পারে। অন্দরসজ্জাবিদেরা জানালেন, আজকাল খাবার পরিবেশনে ডিনার সেটের চল কমে গেছে। পছন্দমতো বাসন মিলিয়ে ব্যবহার করার চলই এখন বেশি। তবে বাড়ির ডাইনিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে যেকোনো একধরনের বাসন ব্যবহার করলেই ভালো। সিরামিক থাকলে সব সিরামিক, মাটির থাকলে সব বাসন মাটিরই হতে হবে। ক্রিস্টাল, মাটি, সিরামিক সব ধরনের মিলিয়ে ফেললে ভালো দেখাবে না।

খাবার টেবিলের সাজে কার্ভিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈদে চাইলে ফল ও সবজি দিয়ে খাবার সুন্দর করে ডেকোরেশন করে নিতে পারেন। হাতের মুঠোয় এখন ইউটিউব থাকায় এসব অনেক সহজ হয়ে গেছে। যেকোনো কাজ ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে সেরে ফেলা যায়। হাত ধোয়ার জায়গায় পরিষ্কার তোয়ালে বা নতুন একটি গামছা রেখে দিন। এখন বাজারে অনেক আকর্ষণীয় বাথরুম সেট কিনতে পাওয়া যায়। বেসিনের কাছে ছোট ছোট গাছও রাখতে পারেন। সময় পেলে পুরোনো ন্যাপকিন ও টেবিল ম্যাটগুলোতে নিজেই লেস বসিয়ে নিন।

আর শোয়ার ঘরে রঙিন কোনো বেডকভার বেছান ঈদের দিনে। এতে ঘরে উৎসবের আমেজ যেমন ফুটে উঠবে, তেমনি বাড়িতে শিশুরা বেড়াতে এলে ময়লাও হবে কম। অন্দরসজ্জাবিদের মতে, রঙিন শতরঞ্জিও ঘরের সাজ ফুটিয়ে তুলতে পারে। আর এগুলো যেমন বড় দোকানে কিনতে পাওয়া যায়, তেমনি সাধারণ অনেক মার্কেটেও খুঁজে পাবেন। ঈদের আগের রাতে আতর, টুপি বা টুকটাক মসলাপাতি কেনার সময়ই ঘরের ছোটখাটো এই জিনিসগুলো কিনে নিতে পারেন। বাড়ি ফিরে শুধু গুছিয়ে ফেললেই হলো।