মিটুর ভয়েই কি তবে...

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেকেইএখন সতর্ক থাকছেন। ভেবেচিন্তে কথা বলছেন। বেঁফাস কথা বা কোনো কিছু বলার আগে চৌদ্দবার ভাবছেন। এটা কি হ্যাশট্যাগ মি টুর প্রভাব? সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ইন্সুরেন্স কোম্পানি ডাইরেক্ট লাইন বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। ফলটা দাঁড়িয়েছে কী? মি টু আন্দোলনের পর কর্মক্ষেত্রে রোমান্স গেছে কমে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন আলাদা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই তা মেনে চলতে ভুলে যান বলে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। যদিও কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক নয়, তবে মিটুর আন্দোলনের মতো বিষয়গুলো সামনে আসার পর থেকে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। টিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ডাইরেক্ট লাইনের গবেষণায় দেখা গেছে, মি টু আন্দোলনের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এতে অফিস ও কর্মক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে রোমান্সের বিষয়টি কমছে।

এ গবেষণায় মানবসম্পদ বিভাগের ৮০ শতাংশ কর্মীকে যুক্ত করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তারা স্বীকার করেছে, মি টু আন্দোলন জোরদার হওয়ার পর কর্মক্ষেত্রে রোমান্স কমেছে। যুক্তরাজ্যের ৫০ শতাংশ কর্মী স্বীকার করেছেন, অতীতে নিজ নিজ সহকর্মীর সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অফিসগামী ৭৫ শতাংশ কর্মী বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কের বিষয়টি তাঁরা মানবসম্পদ বিভাগ ও তাঁদের ব্যবস্থাপকদের কাছে গোপন করেছিলেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য ২০ টির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে একই অফিসের সহকর্মীদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছে। অর্থাৎ, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসে ‘নো ডেটিং’ নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া মানবসম্পদ বিভাগের নির্বাহীরা বলেছেন, মি টু আন্দোলনের ফলে ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মক্ষেত্রের নীতিমালা হালনাগাদ করেছে। ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুরো নীতিমালা পরিবর্তন করেছে।

সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে রোমান্টিক সম্পর্কের বিষয়টি অস্বাভাবিক না হলেও কোথায় সীমানা টানতে হবে, তা জানা উচিত। পেশাদারি কাজের ক্ষেত্রে সম্পর্ক যেন প্রভাব না ফেলে, তা দেখতে হবে। তবে ভারসাম্য রক্ষার কথা বলার চেয়ে তা করে দেখানো অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে গোটা পৃথিবী এখন সোচ্চার। ‘#মি টু’ আন্দোলন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের অভিন্ন মঞ্চ। সমাজকর্মী তারানা ব্রুক প্রথম ২০০৬ সালে শুরু করেছিলেন এই আন্দোলন। তুমি একা নও, আমিও আছি—এই ছিল তাঁর বার্তা। #মি টু নামের এক প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। ১৩ বছরের একটি কিশোরী প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়ে তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার পর কিছুই করতে না পেরে তারানা নাকি কেবল তাঁকে অশ্রুসজল চোখে বলেছিলেন, #মি টু। সেই থেকে শুরু।

২০১৭ সালে হলিউডে পেশাজীবী নারীদের যৌন নিগ্রহের ব্যাপারটি সামনে আসতে থাকে। গত বছরে বলিউডে ‘#মি টু’ আন্দোলন প্রথম শুরু করেন বলিউড অভিনেত্রী ও সাবেক ভারত সুন্দরী তনুশ্রী দত্ত। তিনি বলিউডের বরেণ্য অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এরপর একের পর এক মুখোশ খসে পড়েছে এই অভিযানে। অভিনেতা অলোক নাথ, পরিচালক সাজিদ খান, সুভাষ ঘাই, গায়ক কৈলাশ খের, আনু মালিক, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, লেখক চেতন ভগতসহ আরও অনেকের নাম উঠে এসেছে এই আন্দোলনের হাত ধরে।