আকাশ আমায় ছুঁতে চায়

নীলগিরি, বান্দরবান ছবি: প্রিয়জিৎ সাহা
নীলগিরি, বান্দরবান ছবি: প্রিয়জিৎ সাহা

হুট করেই গভীর রাতের বাস ধরে ছুটে চলি আমরা দুই বন্ধু। সকাল আটটায় পৌঁছালে ঘড়ির কাঁটা ধরে টু টু করে বের হয়ে যাই। বান্দরবান থেকে দিনের বেলা কোনো গাড়ি ঢাকা যায় না, যায় শুধু রাতে। তার জন্য এক রাত কমে গেল আমাদের হিসাব থেকে। 
তপ্ত দুপুরে, দেমাগি রোদের মধ্যে প্রথম যাই স্বর্ণমন্দিরে। ওপরে ওঠার সিঁড়ি দেখে ভয় পাই। ভাবি, এত ওপরে ওঠা কি সম্ভব? অসম্ভব বলে কিছু নেই এবং উঠে ঘুরে দেখে আসি।
বিকেল হলে যাই ‘মেঘলা’য়। গাছগাছালি আর উঁচু পাহাড়ের ভেতর ছোট্ট একটা হ্রদ বয়ে গেছে। সেই হ্রদের ওপরে আছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজও। মেঘলায় বিকেল কাটানোর পর ধীরে ধীরে অন্ধকার নামতে থাকে। বিকেল চলে যায় কোন ফাঁকে, টের পাই না। শরীরেও ক্লান্তি চলে আসে। তাই পরের দিনের জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসি হোটেলে।
ভোরে ঘুম ছেড়ে যেতে না চাইলে ঘুমকে ছেড়ে দিতে হয়। গাড়ি এসে বসে আছে হোটেলের সামনে। আমরা রওনা দিই নীলগিরির উদ্দেশে। এত দিন নীলগিরি নামই শুনে এসেছি, আজ সত্যি সত্যি যাচ্ছি। তাই মনের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। উঁচু উঁচু পাহাড়ের ভেতর দিয়ে যে ছোট রাস্তা নীলগিরির দিকে গেছে, সেটা দেখে ভয় পাওয়ার কথা। সৌন্দর্যের কাছে ভয়টা হেরে পালিয়ে যায়। মাঝপথে দেখে নিই ‘চিম্বুক’ অরণ্যটিও।
পাহাড়ের উঁচু পথ ধরে যখন গাড়িটি উঠতে উঠতে অনেকটাই উঠে যায়, তখন নিচের দিকে তাকালে মনে হয় পৃথিবীটা নিচে রেখে আমরা ওপরে উঠে গেছি। সেই অনুভূতি বোঝানোর মতো কোনো ভাষা আমি জানি না। শুধু বারবার মনে হয়েছে, বাংলাদেশেও একটা ‘দার্জিলিং’ আছে।
নীলগিরি পৌঁছার পর মনে হলো আমি নয়, আকাশটাই ছুঁয়ে দিতে চায় আমাকে। হাতটা বাড়ালেই আমি ছুঁয়ে দিতে পারি মেঘ অথবা মেঘই আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।