করোনাকালের রুশ কৌতুক-৩

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

আগেই বলেছিলাম, রুশ দেশের নাগরিকেরা রসিকতা পছন্দ করেন। এই রসিকতার সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো, শুধু অন্যকে নিয়ে রসিকতা নয়, নিজেকেও ছাড়েন না তাঁরা। এ কারণেই রুশ কৌতুক সারা বিশ্বে পায় বিশেষ মর্যাদা।

রাশিয়ায় করোনাকাল নিয়ে যে কৌতুকগুলো তৈরি হচ্ছে, তার কিছু স্রেফ কৌতুক, কিছু সামাজিক অব্যবস্থপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিছু নিজেদের দুর্দশা নিয়ে মজা করা। সবকিছু মিলেই রুশ কৌতুক।

১.
‘ভালোবাসা খুঁজে পাওয়ার মতো কঠিন কিছু নেই।’
‘চাকরি তো খুঁজিসনি এখনো, তাই এ কথা তুই বলতেই পারিস।

২.
‘যাও, রান্না শেষ। মাছের পোলাও রান্না করেছি।’
‘তুমি না মাছ–ভাত নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলে সুশি বানানোর জন্য?’
‘হ্যাঁ, তা ঢুকেছিলাম। কিন্তু সেটা মাছের পোলাও হয়ে গেছে। করোনাকালের আবিষ্কার।’

৩.
‘তুমি কি ভেবেছিলে প্রথম দেখাতেই আমি মাস্ক খুলব! আমাকে এতটাই সস্তা ভেবেছ!’

৪.
‘পেত্রোভনা, তোমার কি মনে হয়, আমাদের গ্রামে করোনাভাইরাস ঢুকতে পারবে?’
‘একদম পারবে না, সের্গিয়েভিচ। পথই খুঁজে পাবে না। এ গ্রামে বছরের পর বছর গ্যাসই ঢুকতে পারল না, তা আবার করোনাভাইরাস!’

৫.
সবকিছুই তো ভুলে যাচ্ছেন, ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ডটাই মনে থাকছে কেবল। এক কাজ করুন, আপনার সন্তানের নাম ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ডে পরিবর্তন করে ফেলুন—করোনাকালে তাহলে সন্তানের নাম অন্তত ভুলে যাবেন না।

৬.
‘গান গাও, নাচো, কেউ শুনতে পাবে না, দেখতে পাবে না, সরকারের কাজকারবারের সমালোচনা করো উচ্চস্বরে, কেউ শুনতে পাবে না, দেখতে পাবে না। জেলে যাওয়ার ভয় নেই।’

৭.
‘বুঝতে পারছি, তুমি বিয়ে করেছ। তোমার জামাটা এই প্রথম দেখতে পাচ্ছি, সুন্দর করে আয়রন করা।’
‘হ্যাঁ, করোনাকালের বিয়ে! আমার নতুন বউ বাসররাতের আগে আমাকে জামা আয়রন করা শিখিয়েছে।’

৮.
যদি কোনো স্ত্রী বলে, যে সে স্বামীর চেয়ে সন্তানকে বেশি ভালোবাসে, তাহলে তাকে বিশ্বাস করবেন না।
সন্তানকে সে পাশের বাড়ির মেয়েটার কাছে রেখে অনায়াসে বাইরে যেতে পারে। স্বামীকে সেখানে রাখবে—কক্ষনো না!

৯.
করোনাকালে একটা বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। স্ত্রীর সঙ্গে যখন আমি ঝগড়া করি, তখন আমরা আগের মতোই রক গ্রুপের কনসার্টের মতো আচরণ করি। শুরুতে নতুন সংকট নিয়ে ঝগড়া করি, তারপর পুরোনো আমলে যা ‘হিট’ হয়েছিল, সেগুলো দিয়ে শেষ করি।

১০.
‘আপনি কি বিবাহিত?’
‘এ সময় এভাবে প্রশ্নটা করতে হয় না। করোনা আমাদের শিখিয়েছে, প্রশ্নটা হবে, “আপনি কি সীমিত আকারে জীবন যাপন করছেন?’ ”

১১.
করোনাকালে থিয়েটারে শেকসপিয়ারের ওথেলো নাটকে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে।
ওথেলো ডেসডিমোনাকে গলা টিপে হত্যা করবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

১২.
রাশিয়ার অর্থনীতির বিবর্তন
১৯৮০ সাল: চাকরি আছে, টাকা আছে, দোকানে পণ্য নেই।
২০২০ সাল: চাকরি নেই, টাকা নেই, দোকানভর্তি পণ্য!

১৩.
‘আপনার শরীর কেমন?’
‘ভালো মনে হয়। শরীরে ভাইরাস ঢোকেনি বলেই মনে হচ্ছে।’
‘টাকাপয়সা?’
‘এ ব্যাপারে মনে কোনো সংশয় নেই। টাকাপয়সা একেবারেই নেই।’

১৪.
এখন বিমান কোম্পানিগুলো নিশ্চয়ই যাত্রীদের কষ্টটা বুঝবে। ‘প্লেন ডিলে হবে এক ঘণ্টা’, এই ঘোষণা দেওয়ার পর ‘প্লেন আরও এক ঘণ্টা পর ছাড়বে’, তারও একটু পর, ‘প্লেন আরও দুই ঘণ্টা পর ছাড়বে’ যখন বলা হতো, তখন যাত্রীদের কেমন লাগত!
এখন এই করোনার সময় তারা নিজেরাই জানে না, প্লেন কবে ছাড়বে।

১৫.
সারা বিশ্ব থেকে খবর আসছে, করোনা এখন শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে। আমরা করোনা জয় করলাম, নাকি মানুষ সব মরে শেষ! এইরে! আমি নিজে কি বেঁচে আছি?

১৬.
‘আপনি যদি মাস্ক না পরেন, আমি আপনার দাঁত দেখবই না!’
‘মাস্ক পরার পর দাঁত দেখবেন! আচ্ছা, পরছি, তার আগে বলুন, আপনি সত্যিই কি দাঁতের ডাক্তার?’

১৭.
একটা খবর জেনে খুব কষ্ট পেয়েছি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর স্বাভাবিক জীবনযাপনে নাকি ফিরে যাবে মানুষ। আরে! করোনার আগে যাদের স্বাভাবিক জীবন ছিল না, তাদের কী হবে?

১৮.
‘আজ কোভিডের পরীক্ষা দিয়ে এসেছি!’
‘পরীক্ষা! কোন প্রশ্নটা সবচেয়ে কঠিন ছিল?’
‘তুই গাধা নাকি?’
‘দারুণ প্রশ্ন! তুই কী উত্তর দিলি?’

১৯.
লাভা স্রোতে পম্পেই ভেসে যাওয়ার দুদিন আগে রোম সরকার ঘোষণা করল: আগ্নেয়গিরি তার পিক বা সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। এবার আপনারা সবাই যে যাঁর কাজে ফিরে যান!

২০.
‘তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে যে করোনা তোমাকে মারবে না?’
‘আমি ঋণভারে জর্জরিত। ঋণ আমাকে মরতে দেবে না।’

২১.
পত্রিকায় করোনাকালের ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপন

বন্ধুত্ব করতে চাই
পর্যাপ্ত পরিমাণে নুডলস আর চাল আছে বাড়িতে, এমন পুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। আমার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি আর টয়লেট পেপার আছে।