অন্য রোগের টিকা কি করোনায় সুরক্ষা দেবে?

অন্য কোনো টিকা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে, এমন কোনো কিছু এখনো প্রমাণিত নয়।  ছবি: সংগৃহীত
অন্য কোনো টিকা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে, এমন কোনো কিছু এখনো প্রমাণিত নয়। ছবি: সংগৃহীত

করোনা বৈশ্বিক মহামারির শুরুর দিকে একটা প্রচারণা ও ধারণা ছিল যে যেসব দেশের মানুষ রুটিন বিসিজি টিকা বা যক্ষ্মার টিকা নিয়েছেন, সেসব দেশে করোনার সংক্রমণ কম হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে প্রায় শতভাগ বিসিজি বা যক্ষ্মার টিকা থাকা সত্ত্বেও এসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত বেগে আর উচ্চহারে বাড়ছে। একই ধারণা করা হয়েছিল হাম, মাম্পসের টিকা নিয়েও। করোনার শুরুতে ফ্লু ভ্যাকসিন বা নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল যে এই টিকাগুলো জটিলতার ঝুঁকি কমাবে। কিন্তু আসলে কি তাই?

প্রতিবছর আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়। বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি, ডায়াবেটিস, হৃদ্​রোগ, কিডনি জটিলতা, ক্যানসারের রোগী, আর যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যাঁরা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড, ইমিউনোলজিক্যাল ওষুধ, কেমোথেরাপি ইত্যাদি গ্রহণ করেন, তাঁদের চিকিৎসকেরা বছরে একবার ফ্লু ভ্যাকসিন দিতে পরামর্শ দেন। কেননা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনিতে সাধারণ ও নীরিহ রোগ হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে এ থেকে জটিল নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যু অবধি হতে পারে। এ কারণেই ঝুঁকিপূর্ণদের এটি দিতে বলা হয়। 

মনে রাখতে হবে, সার্স কোভি-২ বা করোনাভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নয়। এটি সার্স ভাইরাস গোত্রের একটি ভাইরাস। ফ্লু ভ্যাকসিন তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে না। একই কথা নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনের বেলায়ও। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তিন বছর পরপর নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়ার নিয়ম, কারণ তাদের হাসপাতালে বা আইসিইউতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো নিউমোনিয়া। এই টিকাও কেবল নিউমোকক্কাস বা স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। অন্যদের বেলায় নয়। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণেও নিউমোনিয়া হতে পারে, তার বেশির ভাগই ভাইরাল নিউমোনিয়া বা অ্যাটিপিকাল নিউমোনিয়া। তাই এই টিকা সুরক্ষা দেবেই, এমন কোনো ভরসা নেই। তাই করোনা প্রতিরোধে অন্যান্য টিকা সুরক্ষা দেবে বা ঝুঁকি কমিয়ে দেবে, এমন কথা বলা যায় না। অন্তত এখন পর্যন্ত গবেষণা বা তথ্য–উপাত্ত এমন মেলেনি। আর কেউ যদি এসব টিকা দিয়ে একধরনের ফলস সিকিউরিটি বা ভ্রান্ত নিরাপত্তা বোধ করেন, তবে ঝুঁকিতে পড়বেন। কেননা, তিনি তখন অন্যান্য সুরক্ষা নিতে গড়িমসি বা অবহেলা করতে পারেন। 

বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বছরে বা তিন বছরে যেসব টিকা আগে যেভাবে দেওয়া হতো, সেই সময় অনুযায়ী দেবেন আর জেনে রাখবেন যে এটা করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য নয়। এটি ফ্লু, নিউমোনিয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। আর করোনার এই যুগেও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, ফ্লুয়ের মতো রোগ যে হবে না, তা নয়। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা ও বারবার হাত ধোয়ার কোনো বিকল্প নেই। 

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ আরাফাত
চেয়ারম্যান, মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ