স্থবির জীবনে গতি বাড়ান

গান শোনা বা সিনেমা দেখার অভ্যাস কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। ছবি: অধুনা
গান শোনা বা সিনেমা দেখার অভ্যাস কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। ছবি: অধুনা

করোনাকালের পরিবর্তিত জীবনধারায় অনেকেই হারিয়েছেন কর্মোদ্দীপনা। আগের মতো ব্যস্ততা নেই অনেকের। বাসা থেকে অফিসের কাজ করছেন কেউ, কারও আবার কর্মঘণ্টা কমে এসেছে। দৈনন্দিন কাজকর্মের সময়ও হয়তো এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে নিজেকে সবদিক থেকে ‘ফিট’ রাখতে উদ্যোগী হতে হবে, সময়ের মূল্য ভুলে গেলে চলবে না।

নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে কী করা উচিত—প্রশ্ন রাখি বিশেষজ্ঞ সমীপে। মানবসম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান করপোরেট কোচের প্রধান পরামর্শক যিশু তরফদার জানালেন, বৈশ্বিক এই সংকটের সময় মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। মহামারি নিয়ে মনে যত ভয় থাক, যত শঙ্কা থাক—সবকিছুকে জয় করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে হবে নিজেকে।

পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায়, যুগে যুগে মানবজাতি নানান সংকট মোকাবিলা করে এসেছে। ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন। স্বাস্থ্যসচেতনতা বজায় রাখুন। এ পরিস্থিতি সাময়িক, তাই ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে—সেই বিশ্বাস রাখতে হবে। যেকোনো মানসিক চাপ, বিমর্ষতাকে মোকাবিলা করতে হবে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে এই ক্রান্তিকালে। হাসিখুশি থাকুন। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপরকে সাহস জোগাতে গিয়ে নিজেরও সাহস বাড়ে।

সময়ের কাজ সময়েই থাক

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। রাত জাগার বদ–অভ্যাস বর্জন করুন। রাতে ঘুম আসছে না মনে হলে দিনের ঘুমকে পুরোপুরি বিদায় জানান। সকালের খাবার খেতে দেরি করবেন না, সকালের খাবার বাদ দেওয়ার কথা তো ভুলেও ভাববেন না। অফিসে বেরোনোর তাড়া থাক বা না থাক, সময়ের কাজগুলো সময়েই করুন। দৈনন্দিন কাজে হেলাফেলা করবেন না। নিয়মের মধ্যে চলুন। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিন। কাজে মনোযোগী হোন। কাজের মাঝে বিরতিও দিন। কখনো আবার একটু গভীরভাবে শ্বাস নিন।

পথচলায় বাকি যা

মনে হতে পারে, এখনই যদি সব করে নিই, তাহলে এগুলো সেরে ফেলার পর আমি কী করব—এমন প্রশ্ন মনে জাগলে নিজেকে উত্তর দিন, করার মতো বহু কাজ বাকি রয়ে গেছে এ পৃথিবীতে। উদাহরণ দেওয়া যাক। একবার ভাবুন তো, নিজের দেশের সাহিত্য সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি। কটা কালজয়ী বাংলা সাহিত্যের বই পড়েছেন? দেশ সম্পর্কে কতটা জেনেছেন। দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করা যায় কি না ভাবুন। সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়ান, জীবকুলের পাশে দাঁড়ান। একটা প্রাণের জন্য কিছু একটা করছি, এভাবে ভাবলে মনে আলসেমি কিংবা বিমর্ষতা খুব একটা জায়গা পাবে না। মনের কথা লিখে রাখতে পারেন। চাইলে নিজেকেও নিজে চিঠি লিখতে পারেন। নিজেকে একটু সময় দিন। কাজের চাপে আমরা প্রায়শই নিজের পছন্দের কাজটা করতে সময় পেতাম না, অবসরে সেই কাজগুলো করুন। নিজের সৃষ্টিশীলতা ও শিল্পীসত্তাকে মরে যেতে দেবেন না। নিজেকে উত্সাহ দিন।

অভ্যাসে সুস্থতা

সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম প্রভৃতি আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। শরীরে পর্যাপ্ত পানি দরকার প্রতিদিন। তৃষ্ণায় চাই পানি। প্রস্রাবের রং যেন হালকা থাকে, সেভাবেই পানি খেতে হবে। শরীরে শক্তি পাচ্ছেন না মনে হলে হালকা খাবার খেয়ে নিন। একবারে অনেকটা না খেয়ে সারা দিনে কয়েক ধাপে অল্প করে খেতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। ঘরে, বারান্দায়, ছাদে হাঁটুন এবং অন্যান্য ব্যায়াম করুন। দড়িলাফ বা স্ট্রেচিং জাতীয় ব্যায়ামও কাজে দেবে। এ সময় নানান চাপে ভুগতে হতে পারে, সেগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। মহামারির হালনাগাদ সংবাদ বারবার শোনার কোনো অর্থ নেই, এতে মনে চাপ পড়তে পারে; বরং মন ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। বেছে বেছে মন ভালো রাখার মতো কাজ করুন। আপনজনদের কাছাকাছি থাকুন, শারীরিকভাবে কাছে থাকা সম্ভব না হলে প্রযুক্তির সাহায্য নিন। বন্ধন দৃঢ় হবে। সুযোগ থাকলে অনলাইনে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলুন। ঘরে পছন্দের সুগন্ধি রাখতে পারেন, ঘরের পরিবেশটা স্বস্তিদায়ক মনে হবে। ধূমপান, মদ্যপান ও যাবতীয় নেশাদ্রব্য বর্জনীয়।

সকলের তরে সকলে আমরা

পরিবারকে সময় দিন। তরুণদের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই জীবনের স্পন্দন অনেক বেশি থাকে। বয়োজ্যেষ্ঠদেরও এই স্পন্দনে স্পন্দিত করতে হবে। তাঁদের মানসিক জোর বাড়াতে সাহায্য করুন। তরুণেরা এখন অনেকেই বাইরে কাজে যাচ্ছেন, জীবিকার তাগিদে যেতেই হচ্ছে। অনেকে আবার কাজ হারাচ্ছেনও, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন অনেকে। এ রকম পরিস্থিতিতে পরস্পরকে উজ্জীবিত করা খুবই জরুরি। ব্যক্তিগতভাবে কিংবা নিজেদের পরিমণ্ডল থেকে (যেমন কর্মীদের সোসাইটি) তাঁদের পাশে দাঁড়ান, তাঁদের সাহস জোগান। এ ছাড়া খেয়াল রাখুন, কর্মক্ষম বয়স্ক ব্যক্তিটির শারীরিক নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে বাসায় থাকার বিষয়টি তাঁর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে কি না। এই সময়টায় বয়স্কদের পাশে থাকুন, তাঁদের সময় দিন। অসুস্থ ব্যক্তিকেও সহযোগিতা করুন। কোনো রোগী একটি ঘরে আলাদা থাকতে বাধ্য হলেও তিনি যেন নিজেকে ‘একঘরে’ মনে না করেন। এতে তাঁর মনে ওপর প্রভাব পড়ে, সে নিজেকে অচল মনে করতে পারে। প্রতিবেশী, বন্ধু কিংবা স্বজন হিসেবে এটি নিশ্চিত করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব তাঁর পাশে দাঁড়ানো, তাঁকে সচল হতে সাহায্য করা। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে তাঁর কষ্টটাকে উপলব্ধি করুন, তাঁকে সহযোগিতা করুন। সার্বিকভাবে জীবনটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করলে এই বিশাল সমস্যাকে মোকাবিলা করে জয়ী হওয়া সম্ভব।