মাছ সবজি সবই খাব!

নিত্যকার খাবারের মধ্যেই একটু বৈচিত্র্য আনা গেলে বাচ্চারা মাছ ও সবজি খেতে আগ্রহী হবে। মডেল: বিদুষী। ছবি: সৈকত ভদ্র
নিত্যকার খাবারের মধ্যেই একটু বৈচিত্র্য আনা গেলে বাচ্চারা মাছ ও সবজি খেতে আগ্রহী হবে। মডেল: বিদুষী। ছবি: সৈকত ভদ্র

না! খাব না! খাব না!... এটা যেন আজকালকার বাচ্চাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মাছ আর সবজিতে তো প্রায় সব শিশুরই অনীহা। কিন্তু বাড়ন্ত বয়সে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য সব ধরনের খাবারই তো খেতে হবে। শিশুদের তাদের রুচি, পছন্দ অনুযায়ী সবজি, মাছ এসব খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে—বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোরশেদা বেগম।

জেনে নিন
l শিশুকে পরিবারের সবার সঙ্গে একটু একটু করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
l টিফিনের সময় বাচ্চারা খেলার তালে থাকে। অনেক সময় বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বাচ্চারা খেতে চায়। সবার সঙ্গে ভাগ করে যাতে খেতে পারে, এমন খাবার দিন।
l সরাসরি সবজি, মাছ পছন্দ না করলে তাদের একটু ভিন্নভাবে যেমন সবজির কাটলেট, স্যুপ, মাছ ভাজা, মাছের কাটলেট, ফিশ বল তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে ।
l সবজি তেমন পছন্দ না করলেও অনেক সময় তারা আলু খেতে ভালোবাসে। তাই বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে আলু মিশিয়ে বলের মতো করে চপ কিংবা রোলের মতো করে দেওয়া যায়।

l পরিবারের বড়রা যে খাবার খাচ্ছে, সেটাকে কম ঝাল দিয়ে একটু নরম করে শিশুদের খেতে দিতে হবে। এভাবে বাচ্চাদের খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

l অনেক সময় বাচ্চারা ভাত খেতে পছন্দ করে না, তাই মাঝেমধ্যে সবজি দিয়ে রান্না করে খিচুড়ি খাওয়ানো যায়।

বাচ্চারা একই খাবার সাধারণত বারবার খেতে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে তাদের একই উপাদানের খাবার নানাভাবে রান্না করে দেওয়া যেতে পারে। এর নানা উপায় জানালেন রান্নাবিদ ফাতিমা আজিজ।

জেনে নিন

l অনেক সময় বাচ্চারা দুধ খেতে বা ফল খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে দুধ আর কিছু ফল দিয়ে কাস্টার্ড করে দেওয়া যেতে পারে। স্বাদ পরিবর্তনের জন্য একটু ভ্যানিলা দিতে পারেন কাস্টার্ডে।

l আবার দুধের সঙ্গে স্পঞ্জ কেক, পেস্ট্রি টুকরা করে কেটে কাস্টার্ড করে দেওয়া যেতে পারে বাচ্চাদের।

l পুডিংয়ের সঙ্গে ভ্যানিলা, চকলেট ফ্লেভার, কোকো পাউডার মিশিয়ে দিলে স্বাদে ভিন্নতা আসবে, বাচ্চারাও খেতে পছন্দ করবে।

l অনেক সময় বাচ্চারা প্রতিদিন ডিম পোচ খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে ডিমের হালুয়া, পুডিং, বরফি, স্যান্ডউইচ বাসায় তৈরি করে দিলে বাচ্চারা খেতে পছন্দ করবে।

l যেকোনো মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে সামান্য গোলমরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে গোল গোল বল করে তেলে ভেজে নিন। এভাবে ফিশ বল, মাছের চপ, স্যান্ডউইচ তৈরি করা যেতে পারে।

l চিংড়ি মাছের সঙ্গে টমেটো সস, লবণ, গোলমরিচ মিশিয়ে নিন। পাউরুটি কিউব করে কেটে সেটা বল আকার করে ডুবোতেলে ভেজে দিন।

l বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, রুই মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সেদ্ধ সবজি, শসা, মরিচ, টমেটো, ক্যাপসিকাম কেটে দিয়ে হালকা তেলে ভেজে মাছের বল তৈরি করতে পারেন। এটি পরোটা কিংবা ছোট ছোট রুটির মধ্যে দিয়ে রোল করে বাচ্চাদের পরিবেশন করতে পারেন।

l ডালটা কোনো দিন ঘন আবার কোনো দিন পাতলা করে রান্না করে বাচ্চাদের দেওয়া যেতে পারে।

l এ ছাড়া মাংসের কিমা, সবজি দিয়ে ডাল রান্না করা যেতে পারে।

l পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে তাতে একটু আদার রস দিন। এবার পছন্দমতো সবজি দিয়ে ভাজি করে ফেলুন। সবজি রান্নার সময় একটু লেবুর রস, চিনি, সামান্য গোলমরিচ দেওয়া যেতে পারে।

l নুডলসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে দিলে বাচ্চারা মজা করে খেতে পারে।

l ময়দা দিয়ে পাটিসাপটার মতো করে বানিয়ে নিন। বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন গাজর, ফুলকপি সেদ্ধ করে বাগার দেওয়ার সময় ডিম দিয়ে নামিয়ে নিন। তারপর পাটিসাপটার মধ্যে সবজি দিয়ে ভেজে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে।

l আলুর চপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বাচ্চারা খেতে পছন্দ করে। বাইরে থেকে না কিনে বাড়িতেই বানিয়ে দিন। তেলের বদলে মাখনে ভেজে দিলে ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে।

l লবণ দিয়ে হাড় ছাড়া মুরগির মাংস সেদ্ধ করে নিন। এবার ফ্রাই প্যানে মাখন গলানো দিয়ে লবণ না দিয়ে সেদ্ধ মুরগি ভাজা ভাজা করে নিন। এবার গোলমরিচ, লেবুর রস দিয়ে ভাতের সঙ্গে বাচ্চাদের খেতে দেওয়া যেতে পারে।