পাহাড় যখন ডাকে...

এলব্রুস পর্বতে সিফাত ফাহমিদা নওশিন
এলব্রুস পর্বতে সিফাত ফাহমিদা নওশিন

একপাশে চাঁদ, আর অন্য পাশে আড়মোড়া ভাঙার অপেক্ষায় সূর্য। আলো-আঁধারের লুকোচুরিতে সুউচ্চ এলব্রুস। মনে হলো, স্বর্গের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এলব্রুসের চূড়ায় তখন প্রচণ্ড বাতাস। নিজেদের মনে হয়েছিল এক একটি পালক। মেলে দিলাম পাখা। ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলব্রুসের চূড়ায় দাঁড়িয়ে এভাবেই নিজেকে প্রকৃতির কোলে সঁপে দিয়েছিলেন সিফাত ফাহমিদা নওশিন। সবার কাছে পরিচিত ইতি নামে।
সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশ-রাশিয়া মৈত্রী অভিযানের অভিযাত্রী হিসেবে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলব্রুসের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন বাংলাদেশের তিন অভিযাত্রী। বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়াজ মোরশেদ পাটোয়ারী ও সিফাত ফাহমিদা নওশিন। এর আগে চলতি বছরের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন এলব্রুস জয় করেন।
পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়েটি বরাবরই বেশ ডানপিটে। পাড়ার দলের হয়ে এপাড়া-ওপাড়ায় ফুটবল, ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। একবার তো একা একাই ভারতে চলে গিয়েছিলেন সাউথ ক্লাবের হয়ে টেনিস খেলবেন বলে। তবে যা-ই বলেন, আদরে আদরে বাঁদর বনে যাননি তিনি। নিজের স্বপ্নের পাশে সব সময় পেয়েছেন পরিবারকে। তাই এলব্রুসের চূড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন।
ইতির অভিযাত্রী হয়ে ওঠার গল্পটি বেশ মজার। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ থানার পিরহলী গ্রামের মেয়ে তিনি। সেই বয়সেই মনে মনে বেশ ভক্ত হয়ে যান ভারতের অভিযাত্রী বাচেন্দ্রী পালের। তিনি হলেন এভারেস্ট বিজয়ী ভারতের প্রথম নারী অভিযাত্রী। তখন থেকেই ইতি কান পেতে পাহাড়ের ডাক শোনার চেষ্টা করেন। সে ডাক ঠিকঠাক শোনার সুযোগটা পেয়ে যান মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গে সাক্ষাতে। এর আগে বন্ধুরা মিলে কেওক্রাডং অভিযানে নেমেছিলেন একবার। বন্ধুদের প্রশংসা আর উৎসাহ ছিল সব সময়ই। ২০০৮ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে নারী দিবসে সাইকেল র‌্যালিতে যোগ দেন ইতি। এরপর যোগ দেন বাংলা ম্যারাথনে। এতে প্রথম হয়ে অভিযানের আগ্রহ আরও বেড়ে যায় তাঁর। ঢাকায় এসে যোগ দেন বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবে। পরিচিতি ঘটে মুসা ইব্রাহীম ও নর্থ আলপাইন ক্লাবের সঙ্গেও। এর মাঝেই ভারতের দার্জিলিংয়ে পর্বত আরোহণের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। ফিরে এসে যোগ্যতা বলেই সুযোগ পেয়ে যান এলব্রুস অভিযানের।
অজানা এলব্রুস সত্যি একদিন জয় করবেন, ভাবেননি কখনোই। সব বাধা পেরিয়ে ২৬ জুন জয় করেন এলব্রুস। তবে যাত্রাপথে তাঁদের বাতাসের বিপরীতে হাঁটতে হয়েছে। এলব্রুসের চূড়ায় নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়েছিল তাঁর।