চলো, এবার তোমার বাড়িতে ঈদ করি

কোন বাড়িতে ঈদ করব? প্রতিবার ঈদ এলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই নিয়ে তর্ক-
মনোমালিন্য চলতে থাকে। গোমড়া মুখে বউ হয়তো শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করতে যান। কিন্তু একবার যদি এর ব্যতিক্রম হয়! স্বামী নিজেই যদি স্ত্রীকে বলেন, ‘চলো, এবার তোমার বাড়িতে ঈদ করি।’ স্বামী-স্ত্রীর এই রসায়ন নিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন

এই ঈদ নাহয় বউয়ের বাড়িতেই করলেন। ক্ষতি কী তাতে? মডেল: অহনা, তপন, এমিলি, তামান্না, আফরোজ, রেহান। ছবি: কবির হোসেন
এই ঈদ নাহয় বউয়ের বাড়িতেই করলেন। ক্ষতি কী তাতে? মডেল: অহনা, তপন, এমিলি, তামান্না, আফরোজ, রেহান। ছবি: কবির হোসেন

লেখাটা শুরু করি নিজের পরিবারের ঘটনা দিয়েই। আমার দুই বোন। দুই বোনেরই বিয়ে

হাবিবুল বাশার সুমন
হাবিবুল বাশার সুমন

হয়েছে। বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছাকাছি। তিনি নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। ছোট বোন দেশের বাইরে থাকে। ঈদে দেশে এলে শ্বশুরবাড়িতেই ওকে ঈদ করতে হয়। কিন্তু ভাই হিসেবে ইচ্ছা করে বোনেরা যদি আমাদের সঙ্গে ঈদ করতে পারত। সব ভাইবোন মিলে ঈদ করার অন্য রকম একটা মজা আছে, যা বোনদের বিয়ের পর বেশির ভাগ সময় সম্ভব হয় না। আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করবে বলে ধরে নেওয়া হয়। সব ঈদ শ্বশুরবাড়িতে করলেও একটা ঈদ কি তিনি তাঁর বাবার বাড়িতে করতে পারেন না? একেবারেই করা যাবে না—এমন কথা মেয়েটির মনে নিশ্চয় কষ্ট দেয়।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, আমি কি শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করি? আমি কিন্তু এদিক থেকে ভাগ্যবান। আমার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্ব। যখন-তখন যেতে পারি। তবু ঈদের দিন শ্বশুরবাড়ি যেতেই হয়। আমি যাই দুপুরের দিকে। দেখা যায় সকালে নিজের বাড়িতে নাশতা সেরে ঈদের নামাজটা আদায় করতে যাই। বাড়ি ফিরে দুপুরের আগে চলে যাই শ্বশুরবাড়ি। দুপুরের খাবারটা শ্বশুরবাড়িতে খাই। তারপর সন্ধ্যায় নিজের বাড়ি চলে আসি। রাতের খাবারটা খাই আমাদের বাড়ির সবার সঙ্গেই। এই হলো আমার ঈদ।
আসলে বিয়ে এমন এক সামাজিক বন্ধন, এতে নারী-পুরুষের মধ্যে একটা অন্য রকম রসায়ন তৈরি হয়। দুটি মানুষের সঙ্গে দুটি পরিবারও কাছাকাছি চলে আসে। আত্মীয়তার মতো একটা অপূর্ব সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু অনেক সময় সমস্যা দেখা যায় ঈদ উদ্যাপন করা নিয়ে। বিয়ের পর প্রথম ঈদ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তাহলে?
এ দেশে বিনা কারণেই যুক্তি-তর্ক এবং চাওয়া-পাওয়ার দিক থেকে স্বামী সব সময় এগিয়ে। তবে সব স্বামীর প্রতি আমার অনুরোধ, বিয়ের পর একবারের জন্য হলেও শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করুন। কারণটা পরিষ্কার—বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের পর স্বামীকে তেমন কোনো কিছুতে ছাড় দিতে হয় না। অথচ একটা মেয়েকে সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে স্বামীর সংসারে থিতু হতে হয়। তাই স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে স্বামীকে। তাঁরও তো ইচ্ছা হতে পারে স্বামীকে নিয়ে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে!
কিন্তু সমস্যা অন্য জাগয়ায়। শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করা নিয়ে জামাইদের একটা ‘ইগো’ বা অহংবোধ কাজ করে। সেই ইগো ঝেড়ে ফেলা কঠিন। ভাবতেই পারে, আমি কেন শ্বশুরবাড়ি ঈদ করব। কিন্তু বউকে একবার জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যাবে, স্বামীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ঈদ করার ব্যাপারে তাঁর কতখানি আগ্রহ।
আরও একটা সমস্যা হয় বটে। সেটা হলো বন্ধুদের কটুকথা। অনেক সময় স্বামী যদি শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করে, সেটা বন্ধুমহলে জানাজানি হলেই হয়ে গেল, তার মুখ রক্ষা করা কঠিন। আমাদেরই এক বন্ধু প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করত। এখনো মাঝেমধ্যে করে। আমরা তাকে সামনে পেলেই যাচ্ছেতাই বলে খেপাই। সেই বেচারার অবশ্য একটা গুণ আছে। সহজে খেপে যায় না। এসব ইগো এবং খেপে ওঠার সমস্যা ত্যাগ করে সব স্বামীরই একবারের জন্য হলেও শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করা উচিত। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এতে যেন নিজের মা-বাবা কষ্ট না পান। তাঁরাও অনেক সময় বিষয়টি অন্যভাবে নেন। তাঁদের বোঝাতে হবে। আর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় অবশ্যই বাড়ির সবার জন্য উপহার নিয়ে যাওয়া অবশ্য কর্তব্য। ছোট হোক বা বড় হোক উপহার নিতেই হবে। এটা নিলে জামাইয়ের প্রতি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। এটা অবশ্য উপহার না নিলেও হবে। ইতিবাচক বলেই তো মেয়েকে হাতে তুলে দিয়েছে। হা হা হা!